• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

কালিহাতীতে বিএনপি নেতাদের অবাধে বালু বিক্রি, সংঘর্ষের শঙ্কা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২০  

টাঙ্গাইলের নিউ ধলেশ্বরী নদীর কালিহাতী উপজেলার কদিমহামজানী অংশের নদীতে রীতিমত বাঁধ দিয়ে নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে ভেকু বসিয়ে জেগে ওঠা বালুচর কেটে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। জেগে ওঠা চরের দখল নিয়ে বিএনপি’র স্থানীয় তিনটি গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।

 

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব না মেনে পৃথক তিনটি গ্রুপের মধ্যে গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান, ইউপি সদস্য নুর ইসলাম, ফরহাদ, ছাত্রদল নেতা আমিনুর ও মাসুদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি কদিমহামজানী মৌজায় জেগেওঠা চরের দখল নিয়েছে। তারা নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বাধ দিয়ে ভেকু বসিয়ে চর কেটে বালু বিক্রি করছে।

 

এদিকে, কদিমহামজানী গ্রামের শেখ রওশন, শেখ নওজেশ, আসাদ, হাশেম, কাশেম, গনি, রফিক, শামছু, রহমান, ইদ্রিস, রশিদ, হামিদ, ইউনুস, লাল মিয়াদের দ্বিতীয় গ্রুপটির দাবি নিউ ধলেশ্বরী নদীর বুকে জেগেওঠা চর তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। ওই এলাকায় তাদের ৮ একর জমি রয়েছে। বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ ও ইউপি সদস্য নুর ইসলামরা স্থানীয় বিএনপি’র কিছু সন্ত্রাসীদের দাপটে ও তাদের সহযোগিতায় তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখল করে চর কেটে বালু বিক্রি করছে।

 

অপরদিকে, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও কদিমহামজানী গ্রামের শরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীর ছেলে শফি কামাল সিদ্দিকীর(সোহেল) দাবি, তারা এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেডের কাছ থেকে নিউ ধলেশ্বরী নদীর চেইনেজ ৯০০০ থেকে চেইনেজ ৯৫০০ পর্যন্ত নদী খননের জন্য সাবলিজ নিয়ে খনন কাজ করছেন। তাদের সাবলিজ নেওয়া জায়গা থেকে বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ ও ইউপি সদস্য নুর ইসলামরা অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছে। বাধা দিতে গেলে পটল গ্রামের মোকাদ্দেছ আকন্দের ছেলে হুমায়ুন আকন্দ, বাবলু আকন্দ ও দুলাল আকন্দকে মারপিট করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

 

এহেন পরিস্থিতিতে ধলেশ্বরী নদীর কদিমহামজানী এলাকায় জেগেওঠা বালু চরের দখল নিয়ে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে। ওই বালুচর দখলকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

 

গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ জানান, তিনি সরাসরি বালু বিক্রির সাথে জড়িত নন। ইউপি সদস্য নুর ইসলাম, ফরহাদ, আইয়ুব আলী, ছাত্র দলের আমিনুর, মাসুদরা ভেকু দিয়ে বালু কেটে বিক্রি করছেন। তবে চর দখল করার কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, জমির মালিকদের কাছ থেকে বালু কিনে বিক্রি করা হচ্ছে।

 

 

গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার জানান, ইউনিয়ন পরিষদকে না জানিয়ে বালুর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মুহুর্তে লকডাউন তথা সামাজিক দূরত্ব না মেনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা অবাধে বালু কেটে বিক্রি করতে পারছে।

 

নদী খননের কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেডের সাইট ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন জানান, তিনি পরিমাপ করে দেখেছেন কদিমহামজানী মৌজায় তাদের কিছু অংশে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বালু কেটে বিক্রি করছেন। তবে জেগেওঠা বালু চরের অধিকাংশই কদিমহামজানী গ্রামের শেখ পরিবারের। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ভেকু দিয়ে বালু কেটে বিক্রি করছেন।

 

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা বলেন, জোকার চরের ওই এলাকায় অবৈধভাবে বালু কেটে বিক্রি করার বিষয়টি তিনি জানেন। এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেড ওখানে ড্রেজিংয়ের দায়িত্ব পায়নি। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, নানা সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে মতামত চাইলে আমরা দিতে পারি। মূলত এটি দেখভাল করার দায়িত্ব স্থানীয় সিভিল প্রশাসনের।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল