• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

স্লুুইস গেইটের ত্রুটি : চলতি মৌসুমে ৩০০০ কৃষকের বোরো চাষ অনিশ্চিত

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯  

ক্যাপশনঃ বাঁশখালী ইকোপার্কের বামেরছড়া লেকের উপর নির্মিত বাঁধ: স্লুইস গেইটের ত্রুটির কারণে অলস পড়ে আছে।

ক্যাপশনঃ বাঁশখালী ইকোপার্কের বামেরছড়া লেকের উপর নির্মিত বাঁধ: স্লুইস গেইটের ত্রুটির কারণে অলস পড়ে আছে।

বাঁশখালী ইকো-পার্ক দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন চিরসবুজের একটি বিনোদন স্পট। একই সাথে পার্কটি উপজেলার কৃষি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাইলপলক হিসেবে শিলকুপ, চাম্বল, জলদীসহ উপজেলার বেশকয়েকটি ইউনিয়নের চাষাবাদে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এ পার্কের বামের ছড়া ও ডানের ছড়া লেকের পানি ব্যবহার করে হাজার হাজার চাষীরা মৌসুমি ফলের চাষাবাদ সহ বোরো ধানের চাষ করতো। ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে ৫০ একর জায়গা নিয়ে ডানের ছড়া ও ২০০০-০১ অর্থ বছরে ১শত একর জায়গা নিয়ে ডানের ছড়া সেচ প্রকল্প সৃষ্টি হয়। সেচ প্রকল্প দিয়ে উপজেলার জলদী, শীলকুপ ও চাম্বল ইউনিয়নের সুবিধাভোগী ৩ হাজারের অধিক কৃষক ২ হাজার একর জমিতে বোরো ও রবি শস্যের চাষ করে সুবিধা ভোগ করে আসছিল। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে বাঁশখালী ইকোর্পাক প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এসে ভিড় জমাত। তবে, ২০০৮ সালে অগাষ্ট মাসে প্রলয়ংকরী এক বন্যায় বামের ছড়া লেকের বাঁধ ভেঙ্গে বাঁশখালী ইকোর্পাকের বেশ কিছু স্থাপনা বিলীন হয়ে যায়। সাথে সাথে স্তবির হয়ে পড়ে উপজেলার উপকারভোগী কৃষকের চাষাবাদ।

 

২০০৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যায় বামের ছড়া লেকের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে উপজেলার ওই পার্কের আওতায় উপকারভোগী চাষীদের ২৮ ব্লকে বিভক্ত ৩ হাজার কানি জমির বোরো চাষ সহ রবি-শস্যের মৌসুমী ফসলের চাষাবাদে নেমে আসে বিপর্যয়। দীর্ঘ এক যুগ ধরে বোরোচাষ থেকে বঞ্চিত উপকারভোগী চাষীরা।

 

বামের ছড়া ও ডানের ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. এর সাবেক সভাপতি মো. সাহাদাত হোসেন আজগর জানান, বামের ছড়া ও ডানের ছড়া লেকের পানিতে এ অঞ্চলের সামগ্রীক চাষাবাদ নির্ভরশীল। আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত উপকারভোগীর চাষীদের চাষাবাদের অনেক জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে পর্যাপ্ত পানির অভাবে। দীর্ঘ ১২ টি বছর অতিক্রম হলেও লেকের পানি দিয়ে চাষাবাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত সাধারণ চাষীরা। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ইকো-পার্কের বামের ছড়া লেকের সংস্কারসহ সামগ্রীক উন্নয়নকল্পে নির্মাণ কাজের সমাপ্ত করা হলেও নির্মিত স্লুইস গেইটের ত্রুটিজনিত কারণে চলতি মৌসুমেও পানি পাবেন কিনা উদ্বেগ   প্রকাশ করেন তিনি। সমিতির অর্থ সম্পাদক মো. বদিউল আলম জানান, বামের ছড়া লেকের বাঁধ নির্মাণে প্রায়ই সাড়ে ৪কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও আজও পর্যন্ত সুফল মেলেনি। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন- এলজিইডির বাস্তবায়নে উপজেলা প্রকৌশলীর তদারকীতে বাঁধ নির্মাণের কাজটি করেন কন্ট্রাক্টর আবুল বশর। তিনি কাজের সমাপ্তির পূর্বেই বিল তুলে নেন। এদিকে স্লুইস গেইটে ব্যবহৃত লোহার নরম পাত ও ত্রুটিপূর্ণ কাজের কারণে গেইটের উঠা-নামা করা যাচ্ছেনা। এটি মেরামত করা না হলে চলতি বোরো মৌসুমেও হাজার হাজার চাষীরা বঞ্চিত হবে বোরো চাষ থেকে।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বামের ছড়া ও ডানের ছড়া লেকের পানিতে নির্ভর করে শিলকুপ, চাম্বল, জলদী এলাকার পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে মৌসুমী ফসলের চাষাবাদ হয়। উপজেলার সিংহভাগ খাদ্য-শস্য এ অঞ্চলে উৎপাদন হয়ে থাকে। ওই লেকের বাঁধের উপর নির্মিত স্লুইস গেইটের ত্রুটিজনিত কারণে উপকারভোগী চাষীরা শংকিত। বামের ছড়া ও ডানের ছড়া লেকের পানির উপর নির্ভর করে এদিকে বোরো চাষের জন্য কৃষকেরা জালা বিছানা (ধানের বীজতলা) প্রস্তুত করে নিচ্ছে। বাংলা কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস থেকে কৃষকেরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। বোরো ধান যে সময়ে জন্মায় সে সময়ে বৃষ্টিপাত সাধারণত: কম হয়। তাই বোরো ধান সেচের উপরে বহুলাংশে নির্ভরশীল। কৃষকেরা লেকের পানির উপর নির্ভর করেই ইতোমধ্যে বীজতলা তৈরি করে ফেলছে।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম ভূইয়্যা  জানান- 'প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডানের ছড়া লেকের উপর বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কাজটি সমাপ্ত হয়েছে। স্লুইস গেইটের নীচে মাটি জমে যাওয়ায় গেইটটি উঠা-নামা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ব্যবহৃত পাতের সমস্যা ও সংযোগ লোহার চেইনের যে ত্রুটি হয়েছে তা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই মেরামত করা হবে। তিনি আরো জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ওই লেকের আওতাভুক্ত উপকারভোগী চাষীরা পর্যাপ্ত পানি পাবে।

 

 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল