• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

শীতের আমেজে ধনবাড়ীতে চলছে পিঠা বিক্রির ধুম

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০  

কবি সুফিয়া কামাল গ্রাম বাংলার পৌষ পার্বণে শীতের পিঠা খাওয়ার শাশ্বত রূপ অঙ্কন করে বলেছেন- পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষম খেয়ে আরো উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে। শীত আর পিঠা একই সুতোই গাঁথা। বছর ঘুরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় প্রকৃতিতে লেগেছে হিমেল হওয়ার পরশ। উঠেছে নতুন ধান। গ্রাম -বাংলার প্রতিটি বাড়িতেই এখন চলছে নানা আয়োজন করে নানা ধরনের পিঠা-পায়েশ তৈরির ধুম।

ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর সময় মেলা ভার। যেহেতু শীতের পিঠার ভিন্ন স্বাদ এনে দেয় নতুন মাত্রা, সে কারণেই পৌর শহরে ও বিভিন্ন গ্রামের কিছু হত-দরিদ্র পরিবার ভাপা পিঠা, মুষ্টি পিঠা ও চিতই পিঠার এই মৌসুমে পিঠা বিক্রি করে তাদরে সংসার চালায়। আবার কেউ কেউ সারা বছর পিঠা বিক্রি করে থাকেন। এ কাজে তাদের পরিবারের সকল সদ্যস্যরাই সহযোহিতা করে থাকে। শহরের গুরুত্বপূর্ণস্থান, প্রধান- প্রধান সড়কের মোড়গুলোতে, বিভিন্ন রাস্তার ধারে, বাসস্ট্যান্ডে, হাটে-বাজারে ও নানা জায়গায় ভোর সকালে ও সন্ধ্যার পর তারা পিঠা বিক্রি করে থাকে। এদিকে শহরের মানুষের পিঠা খাওয়ার সাধ মেটাচ্ছে এবং শীতের পিঠা কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে তাদের পরিবারের জন্য।


সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্নস্থানে গিয়ে দেখা যায়, এ ব্যবসায় তেমন পুঁজি লাগে না। জ্বালানী হিসেবে লাকড়ি বা খড়ি, কিছু গুড়, নারকেল ও চাউলের গুড়া দিয়ে শুরু করেছেন এ ব্যাবসা। দোকানে ক্রেতাদের ভিড় থাকে অনেক বেশি। সমাজের সব শ্রেণীর লোকেরাই পিঠা খেতে আসেন। কেউ টুলে বসে কেউ বা দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছেন। চিতই পিঠার সাথে ধনিয়া পাতা, সরিষা বাটা ও শুঁটকি বাটা দিয়ে পিঠা বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পিঠার এক একটির দাম নেয়া হয় ৫ থেকে ১০ টাকা। আবার অনেক সময় ডিম দিয়েও চিতই পিঠা বিক্রি করা হচ্ছে এগুলো ১৫ টাকা।

ধনবাড়ী বাস্টস্ট্যন্ড এলাকায় আব্দুল মজিদের ভ্রাম্যমাণ দোকানে পিঠা খেতে আসা স্কুল ছাত্র আবির হোসেন, চাকুরীজীবি রাশেদ মিয়া ও আটো-ভ্যানচালক আক্কাস আলী জানান, শীতের পিঠা খেতে মজাই আলাদা। ব্যস্ততার কারণে বাড়ীতে এখন আর সেভাবে পিঠা বানানো হয় না। তাই খাওয়ার সুযোগও হয় না। এ জন্য সুযোগ পেলেই এখানে এসে পিঠা খেয়ে যাই। অপর পিঠা ক্রেতা চাকুরীজীবি আছমা আক্তার বলেন, ব্যস্ততার কারণে বাসায় পিঠা বানাতে পারি না। মাঝে মাঝে এ চাচার দোকান থেকে চিতই পিঠা কিনে নিয়ে দুধে ভীজিয়ে সন্তানদের সাথে নিয়ে সাবাই মিলে খাই। চাচার চিতই পিঠাগুলো অনেক ভালো।

পিঠা বিক্রেতা বয়োবৃদ্ধ আব্দুল মজিদ জানান, আমি ধনবাড়ী বাজারে ভ্রাম্যমাণ গাড়ীতে করে সারা বছর পিঠা বিক্রি করি এবং এই পিঠা বিক্রি করে আমার সংসার চাইল। শীত এলেই পিঠা বিক্রি বেড়ে যায়। শীতের প্রকোপ যত বেশি থাকে পিঠা বিক্রিও তত বেশি হয়। অপর পিঠা বিক্রেতা নোমান মিয়া জানান, আমি শুধু শীতকালে পিঠা বিক্রি করি। অনেকে এসব পিঠা খেয়ে এবং বাসার জন্য নিয়ে যায়। সকালে এবং সন্ধ্যার পর থেকে ৮ শত থেকে হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করতে পারি।
মুশুদ্দি চৌরাস্তা বাজারে পিঠা বিক্রি করেন জবেদা বেগম, তিনি বলেন এখানে সারা দিনই পিঠা বিক্রি হয়। তবে সকাল ও সন্ধ্যায় বেশি বিক্রি হয়। নিম্ন আয়ের লোকজন আমার নিয়মিত ক্রেতা। তারা পিঠা কিনে নিজেরা খায় আবার বাসায়ও নিয়ে যায়। তাছাড়া পথচারিরা সব সময় এখানেই খায়। তিনি আরও জানান, দিনমজুর স্বামীর একার আয়ে সংসার চলেনা। তাই তিনি পিঠা বিক্রি করে সংসারে সহযোগীতা করেন।

পিঠা খেতে আসা প্রবীণ আমজাদ হোসেন বলেন, শীতে এখানে আমি পিঠা দিয়ে নাস্তা করি। অল্প খরচে খাওয়া হয়। গরম গরম পিঠা খেতে ভালোই লাগে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল