• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

শিবরাম চক্রবর্তী বাংলা হাসির গল্পের কিংবদন্তি

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০১৯  

শিবরাম চক্রবর্তী.. খুবই সাধারণ একটা নাম, ভদ্রলোক ছিলেনও বেশ সাধারণ।জমিদার পরিবারে জন্মেছিলেন, কিন্তু অভাব ছিলো তার জীবনের চিরসঙ্গী। 

 

ভদ্রলোক হাসির গল্প লিখতেন, সেই গল্পে কোন জটিলতা নেই, নেই কোন কঠিন উপমার ব্যবহার। শুধুই রয়েছে হাসি আর হাসি! জীবনের ছোট ছোট আনন্দ এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে কষ্টের ব্যাপারগুলোকেও উনি বেশ হাস্যরসাত্মক করে তুলে ধরতে পারতেন।

 

উপমহাদেশের অধিকাংশ লেখকদের মতো তিনিও ছিলেন চরম অর্থাভাবী। ভদ্রলোকের প্রায় সারাটা জীবনই কেটেছে কলকাতার মুক্তারাম স্ট্রিটের মেসে।

 

এখানে বসেই তিনি সৃষ্টি করেছিলেন সেই বিখ্যাত হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের গল্পগুলো, ইতুর থেকে ইত্যাদি, মহাপুরুষের সিদ্ধিলাভ, বিশ্বপতির অশ্বমেধ এবং আরও অনেক হাসির গল্প। 

 

হাসির গল্প লেখা ছিলো তার কাছে ছেলেখেলার ব্যাপার। ধরুন বিকালের নাস্তার করার টাকা জোগাতে হবে, সাথে সাথে উনি একটা হাসির গল্প লিখে দৌড়ালেন কোন প্রকাশকের কাছে।

 

পশ্চিমের মহান রম্যলেখক পিজি ওডসের সাথে যদি আমাদের কোন বাঙালি লেখকের তুলনা চলে তবে আমার মতে তিনি একমাত্র শিবরাম, আর কেউ নন! ওডসের মতো তিনিও গল্পগুলোর মাধ্যমে সমাজে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা চিন্তা-চেতনাগুলোর মুখে কোৎ করে একটা লাথি মেরে যেতেন। 

 

একটা গল্প শুনুন.. 

 

একবার শিবরাম বাইরে গেছেন, এই সুযোগে তার ঘরে এক চোর ঢুকেছে। কিছুই পেলো না ব্যাটা চোর কিন্তু সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে শিবরাম তার খোলা ঘরে একটা কাগজ পেলেন, ওতে লেখা,

 

‘ভাই তোমার ঘরে চুরি করতে এসে দেখলাম তোমার অবস্থা আমার থেকেও খারাপ। কাজকম্ম বোধহয় কিছুই করো না। এই দশটা টাকা রেখে গেলাম। এই টাকায় এই কোম্পানির ধূপকাঠি কিনে ফেরি কোরো। এইভাবে কত দিন চলবে? আমার পরামর্শ মানলে জীবনে উন্নতি করবে।’

 

জীবনে অনেক কিছুই করেছেন ভদ্রলোক... প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাথে সিনেমা দেখতে দেখতে নানান অলীক গল্প ফেদেছেন, শরৎ চন্দ্রের সাথে দেশ বিদেশ নিয়ে আলোচনা করেছেন, কাজী নজরুল ইসলামের সাথে জেলে থেকেছেন, দেশবন্ধুর সাথে কলকাতা ঘুরেছে... মেলাকিছুই করেছেন! 

 

প্রেম? হ্যা সেটাও করেছেন... কিশোর বয়সে রিনি নামের একটি মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছিলো তার।

 

বিপ্লবী চেতনায় উদ্ধুগ্ধ লেখক একবার জেলে গিয়ে দেখেন তার কিশোর বয়সের প্রেমিকা রিনিও জেলে! সেখানেই তাদের আবার দেখা! কিন্তু সেই আনন্দ বেশীদিন টেকেনি, এক সময়ে অন্য জেলে নিয়ে যাওয়া হয় লেখককে। এরপর আর মেয়েটির সাথে কোনদিনই দেখা হয়নি তার।

 

আজীবন অবিবাহিত থেকে গেছেন লেখক, সংসারের মায়াতে আর জড়াননি।

 

যত অভাবেই থাকুন না কেন, কেউ যদি জিজ্ঞাসা করতেন, "কেমন আছেন?" 

 

উনি উত্তর দিতেন, "ফার্স্টক্লাস আছি!"

 

একবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শুনলেন যে শিবরাম চক্রবর্তী নাকি ফুটপাতে টানটান হয়ে শুয়ে আছে। তিনি সাথে সাথে উনার সাথে দেখা করলেন।

 

শিবরাম বললেন, "ফার্স্টক্লাস আছি। আসলে যেতে যেতে হঠাৎ মনে হল ফুটপাতে শুয়ে আকাশটাকে কেমন দেখতে লাগে একবার দেখাই যাক।"

 

মৃত্যশয্যায় যখন লেখক, ডাক্তার এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "কেমন আছেন শিবরাম বাবু?"

 

লেখক উত্তর দিলেন, "ফার্স্টক্লাস, মারভেলাস!"

 

২৮ আগস্ট ১৯৮০ সালে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি  লেখক।আমাদের জন্য রেখে গেছেন শুধুই উনার লেখা গল্পগুলো।

 

লুৎফুল কায়সার

লেখক

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল