• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বেঁচে থাকুক বাবা-মেয়ের পবিত্র সম্পর্ক, বিনষ্ট যেন না হয়

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

বেঁচে থাকুক বাবা-মেয়ের পবিত্র সম্পর্ক, বিনষ্ট যেন না হয় কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের দ্বারা

বেঁচে থাকুক বাবা-মেয়ের পবিত্র সম্পর্ক, বিনষ্ট যেন না হয় কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের দ্বারা

সম্প্রতি এক আর্কিটেক্ট ভদ্র মহিলা অভিযোগ তুলেছেন তার সাবেক স্বামী কন্যাকে নিয়মিত ধর্ষণ করেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়েছে। সেই ঘটনা নিয়ে নিজের ভাবনার কথা লিখেছেন মিজানুর রহমান নিলয়।

প্রথমে শুরু করা যাক খারাপ মা আর মেয়েদের কথা দিয়ে, যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাবার উপর ধর্ষণের মতো জঘন্য অভিযোগ দায়ের করে।

স্বার্থটা কী? কোন মা নিজের ডিভোর্স এর পর মেয়ের আইনি কাস্টডি নেওয়ার জন্য প্রাক্তন স্বামীর সাথে আইনি লড়াইয়ে নেমে যান। তখন বাবাকে অযোগ্য প্রমান করতে কিংবা মেয়ে যাতে বাবাকে জীবনেও আর না দেখতে পায় সেজন্য মেয়েকে সেক্সুয়ালি এবিউজ করার মত অভিযোগ দায়ের করেন৷

Dr. Phil নামক একটা প্রোগ্রাম হয় আমেরিকায়। সেখানে দেখা যায় এরকম অভিযোগ প্রায়শই বাবাদের বিরুদ্ধে করতে। এরকম একটা এপিসোডে, মহিলা প্রমান হিসেবে দেখায় তার বাচ্চার জবানবন্দি। সেখানে সে বলে, “বাবা আমার ওখানে ****** করেছে। আমি ব্যথা পেয়েছি”।

এই ভিডিওটা দিয়ে বাবার উপর অভিযোগ দায়ের করলেও বাবা নির্দোষ প্রমানিত হয়। এ এক আবেগঘন মূহুর্ত ছিলো৷ এরকম একটা টেপরেকর্ড দেখলে যে কেউই বিশ্বাস করে নিবে এটা সত্য! কিন্তু আসল ঘটনাটি ছিলো মহিলার বানানো। পরবর্তীতে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক ও টেস্টে মহিলা মিথ্যুক প্রমানিত হয়।

এই প্রোগ্রামের আরেকটি কেসে – এক মেয়ে অভিযোগ করে তার বাবা তাকে ছোটবেলায় সেক্সুয়াল এবিউজ করেছে এটা সে তার মায়ের থেকে ছোটবেলা হতেই শুনে আসছে ও বাবাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে। সে এখন তার সৎ বাবা ও মা সহ একত্রে থাকে। বাবার সাথে যোগাযোগ পুরোপুরিভাবে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সে লক্ষ্য করে যে তার মায়ের মিথ্যে বলার বাতিক আছে। তার বাবার ক্ষেত্রেও কী মিথ্যে বলেছিলো? তাই সে সত্যতা জানতে চায়। পরবর্তীতে বাবা-মা দুজনেরই পক্ষ হতে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক খণ্ডন করে ও শেষে পলিগ্রাফ টেস্ট করে জানা যায় যে, মা মিথ্যে বলেছে ও বাবা একদম সত্যি৷ বাবা-মেয়েকে এতবছর পর বলে, “I love you Dad. Please Forgive me.”

এছাড়াও অনেকসময় উদ্ধত, নষ্ট হয়ে যাওয়া মেয়েরা বাবাদের শাসনের হাত হতে রক্ষার জন্য, বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা সেক্সুয়াল এবিউজের অভিযোগ দায়ের করে।

কিছুদিন আগে আমাদের দেশে ভাইরাল হওয়া এক মেয়ের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? আমরা তার বাবাকে গালমন্দ করে শেষ করার পর পরবর্তীতে জানা যায় সে মিথ্যে বলেছিলো। শুধুমাত্র শাসনের হাত হতে বাঁচতে। এরকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যেখানে বাবাদের মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়।
আমাদের দেশে হয়তো এত ভালো প্রযুক্তি নেই যার মাধ্যমে আমরা এরকম সেন্সিটিভ কেসে প্রকৃত অপরাধীকে বের করে আনতে পারি৷

এবার আসা যাক খারাপ বাবাদের বিষয়ে –
বাবা দ্বারা মেয়ে ধর্ষণ ব্যাপারটা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম অভিযোগ ও অপরাধ৷ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যতবার এরকম নিউজ কোন মেয়ের বাবা দেখেন; যিনি তার মেয়েকে জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসেন, উনারা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেন।

এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করাটা বড্ড সেন্সিটিভ ও লজ্জাকর বলেই অনেক ভিক্টিমই চেপে যায়। তবে আলোচনা যদি নাইবা করা হয় তাহলে এই অন্যায় দীর্ঘকালিন সময় ধরে চলতে থাকে ভিক্টিমের উপর। দীর্ঘকালীন এক ট্রমার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে সে।

আমার লিস্টের এক মেয়ে তার আপন চাচা দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলো ক্লাস ফাইভ থেকে তার চাচার বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত৷ বাবা-মা ব্যাংকার ছিলো। চাচা কলেজপড়ুয়া ছিলো। সে ভাই-ভাবীকে না জানানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে বছরের পর বছর এই কাজ করে গিয়েছে। সবশেষ মেয়েটি যখন তার বাবা মাকে সাহস করে জানায় তখন তাকে উল্টো তার বাবা বাসা হতে বের করে দেয় মিথ্যেবাদী ভেবে৷ প্রায় তিন বছর পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে মেয়েকে পুনরায় কাছে টেনে নেন।

আমার আরেক বান্ধুবী এক ছাত্রীকে পড়ায়। সেখানে তার স্কুল ছাত্রীকে প্রায় বিমর্ষ থাকতে দেখে, পড়াশুনায় অমনোযোগী দেখে; এর কারণ কী তা জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যায়..একদিন জানায় যে তার বাবা তাকে সেক্সুয়ালি এবিউজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে৷ আমার বান্ধুবী জানায় যে সে এর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিবে। এবার মেয়ে পুরোপুরি অস্বীকার৷ সে ভয়ে বলা শুরু করলো, কী বলেন এসব? আমি কখন বললাম বাবা এমন করেছে? ব্যাস! আমার বান্ধুবীর আর ওখানে পড়ানো হলো না।

রংপুরের এক মেয়ে একদিন জানালো, তার বান্ধবী প্রায় ১৩ বছর ধরে মায়ের মৃত্যুর পর হতেই সেক্সুয়ালি এবিউজ হচ্ছে বাবার দ্বারা। প্রেগন্যান্টও হয়েছে কয়েকবার। তাকে কোনভাবে পরিচয় গোপন রেখে উদ্ধার করানো সম্ভব?

মেয়েটা চায় তার বাবার সর্বোচ্চ শাস্তি চায়। আর চায় একটা ছোটখাটো চাকুরী যেটা দিয়ে সে বাকি জীবনটা সার্ভাইভ করতে পারবে।

আমি আমার পরিচিত এক নারী সাংবাদিককে জানালাম উনি কী সাহায্য করতে পারবেন কীনা। উনি জানালেন আলবৎ পারবেন। মেয়ের চাকুরী নিয়ে কোন সমস্যাই হবে না। বাবাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য যা যা দরকার উনি করবেন। তবে এর জন্য হাতেনাতে প্রমান দরকার।

তার বাবাকে হাতেনাতে এই অবস্থায় ধরতে হবে। এবার মেয়েকে যখন জানানো হলো, সে প্রস্তুত কীনা? সে জানালো যে, সে আর চায় না তার বাবার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷

কারণ তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছেন। ছেলে ভালোই চাকুরী করে৷ আর কয়দিন পর সে মুক্তি পাচ্ছে এই রাক্ষসপুরী থেকে। তাই সে চায় না আর এটা নিয়ে ঝামেলা করতে৷ তখন আহাম্মক হয়ে গেলাম। আর কোন কিছুই করা সম্ভব হয় নি।

এতকিছু বলার পেছনে একটাই কারণ –
বাবাদের উপর অভিযুক্ত এমন কেসগুলো আমাদের দেশের প্রশাসন একদম নিঁখুতভাবে, বাইরের দেশের মত যুক্তিতর্ক ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রমাণ করুক ও যেই দোষী হোক না কেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করুক।

সবশেষে বলতে চাই, বেঁচে থাকুক বাবা-মেয়ের পবিত্র সম্পর্ক। এটা যেন কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের দ্বারা বিনষ্ট না হয়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল