• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হবে দ্রুত

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২০  

কভিড-১৯-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঘটবে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত। আমদানি-রপ্তানি ব্যয়ে ভারসাম্য, রেমিট্যান্সে সাফল্য, বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং জিডিপি অনুপাতে সরকারি ঋণ কম হওয়ায় অন্য দেশের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বৈশ্বিক গবেষকরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক হওয়ায় তা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করবে। ফলে খুব শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতি।

‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং ২০২০’ শীর্ষক সেশনে অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন। গত বুধবার অনলাইনে এই অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের আসিয়ান ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ এডওয়ার্ড লি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মন্দার মাঝেও আসিয়ান ও দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ এ বছর ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে যাবে। বাংলাদেশ এর অন্যতম, অন্য দেশটি ভিয়েতনাম।’ তিনি বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বের সব দেশের জন্যই চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক ছিল সবচেয়ে খারাপ। সেখানেও পুনরুদ্ধার দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ।’

দক্ষিণ এশিয়ায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দার যে ঝড় এসেছে তা ইতিমধ্যে কেটে গেছে।’ করোনা মহামারির কারণে এপ্রিল থেকে জুন—এই সময়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। জুন থেকে অর্থনীতি সচল হতে শুরু করার পর অনেক খাতেই পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেছে।’

গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আসে ৫.২৪ শতাংশ, যা বহুজাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর হতাশ পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক ভালো। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশ এবং ৩.৮ শতাংশের মধ্যে অর্জিত হবে। তবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিপি) বলেছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আসবে ৪.৫ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

প্রবৃদ্ধির ধীরগতি চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে। যদিও বাংলাদেশ সরকার ভি শেপ বা দ্রুত পুনরুদ্ধারে আশাবাদী। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বাংলাদেশ সরকার। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জানায়, বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার যেমন—ইউরোজোন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে। করোনা মহামারির কারণে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এই দেশগুলোর বেশির ভাগেরই প্রবৃদ্ধি সংকোচনে। কারণ মার্চ থেকে মে—এই তিন মাসে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোটাই নিশ্চল ছিল। ফলে আমদানি-রপ্তানি কমেছে ব্যাপকভাবে। তবে জুন ও জুলাই মাসে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বেড়েছে। একই সঙ্গে জুলাইয়ে রপ্তানিও ইতিবাচক প্রবণতা দেখিয়েছে। তাই আনন্দ মনে করেন, বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে রয়েছে, এই তথ্যগুলো তা প্রমাণ করছে।

সৌরভ আনন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশের মুদ্রানীতিতে সুদের হার কমানোর এখনো সুযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার থাকতে পারে। ঋণ-জিডিপি অনুপাতের নিম্নহার আরো প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রেখেছে সরকারের জন্য।’ লি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ এখনো অনেক দেশে হচ্ছে। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন যেকোনো দেশের অগ্রাধিকারে রাখা উচিত। যেহেতু অর্থনীতি সচল হতে শুরু করেছে, তাই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ও ভোক্তাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত; যাতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই হয়।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের এএসএ এফএক্স রিসার্চের প্রধান দিব্য দেবেশ বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বছরের বাকি সময় স্থিতিশীল থাকবে।’ বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক ভালো অবস্থানে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদানি ব্যয় মেটানো নিয়ে সমস্যা নেই। রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলছে, যেকোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে আছে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে সরকার আরো অনেক কিছু করতে পারে। বিশেষ করে ডুয়িং বিজনেস সহজীকরণের ক্ষেত্রে।’

আনন্দ বলেন, ‘গত তিন থেকে চার বছর যাবৎ সরকার ব্যবসা সহজীকরণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলোর বাস্তবায়ন আরো এগিয়ে নেওয়া উচিত। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, সেগুলো কাঠামোগত; এ বিষয়ে সরকারের ভালো জানাও আছে। ফলে অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতি সরকার সহজেই মোকাবেলা করতে পারবে।’ বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। কভিড-১৯ মোকবেলায় সরকার যত বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, বিনিয়োগ ও ভোগে আস্থা তত বাড়বে।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের অর্থবাজারপ্রধান মুহিত রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা বাংলাদেশের হাতে নেই। রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ ইউরোপ ও আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। জিডিপি অনুপাতে বাইরের ঋণ যেহেতু অনেক কম, বাংলাদেশ ভি আকারের পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে আমরা অনেক বেশি আশাবাদী।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কারণে গত এক দশকে বাংলাদেশে গড়ে ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বর্তমান সরকারের সময়ে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি যেখানে বিপর্যস্ত, সেখানে বিদায়ি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ওপরেই অর্জিত হয়েছে। করোনার মধ্যেও দেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৫৫ ডলার।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি কভিড-১৯-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত পুনরুদ্ধার ঘটবে। ২০২১ সালের মধ্যেই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘একই মানের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থায়ই এই সংকটকালে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ অনেক কম, সার্বিক সরকারি ঋণ কম এবং বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে স্বস্তিদায়ক ঋণ সেবা সক্ষমতাও রয়েছে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে আমরা দ্রুত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং সম্ভাবনার পথে  এগিয়ে যেতে পারব।’ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ও মার্কেটিংয়ের করপোরেটবিষয়ক প্রধান বিটপি দাস চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল