• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে কলাগাছ আর আনারস পাতা দিয়ে হস্তশিল্পে নতুন সম্ভাবনা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২০  

অল্প কিছুদিন আগেও পরিত্যাক্ত কলাগাছ আর আনারস পাতা কোন কাজেই আসতো না। সেই পরিত্যাক্ত কলাগাছ আর আনারস পাতা এখন অপার সম্ভাবনার খাত হয়ে উঠেছে। এগুলো থেকে এখন তৈরি হচ্ছে সৌখিন সব পন্য। যা বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এমন হস্তশিল্পের জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুরের জাঙ্গালিয়া গ্রামে তৈরি হয়েছে পুরো একটি কারখানা। যেখানে কাজ করছে শতাধিক দরিদ্র নারী। বর্তমানে পুরুষেরাও এ কাজে ঝুঁকছে। হস্তশিল্পের পন্য তৈরি করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন এখানকার নারী পুরুষেরা।

আনারসের রাজধানী টাঙ্গাইলের মধুপুর। আনারসের পাশাপাশি কলাচাষও হয় এখানকার বনাঞ্চলে । ফল দেওয়ার পর কলাগাছ ও আনারস পাতা ফেলে দেয়া হতো। ফেলে দেয়া কলাগাছ আর আনারসের পাতা দিয়ে তৈরী হচ্ছে এখন নানা রকম সৌখিন পন্য। শুরুতে কাজটি অনেক কঠিন মনে হলেও এখন আর ওদের কব্জায় চলে এসেছে। পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এসব পন্য দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে উন্নত দেশগুলোতে।

২০১৭ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে এই হস্তশিল্পের কারাখানা শুরু হয়। পরিত্যাক্ত কলাগাছের বাকল আর আনারসের ফেলে দেয়া পাতা থেকে এখানে গ্রামের দরিদ্র নারীরা তৈরি করছেন টিসু বক্স, ডেক্স অর্গানাইজার, নেট, পর্দা, ফ্লাওয়ার বক্স, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, চাবির রিংসহ নানা সৌখিন পন্য। গ্রামের নারীরদের নিপুন হাতে তৈরি আকর্ষনীয় এসব পন্য যাচ্ছে চীনসহ উন্নত দেশগুলোতে। এখানে কাজ করা নারীরা হয়ে উঠছে স্বাবলম্বী। আগে যে সব মহিলার বনে-জঙ্গলে কলা ও আনারনের বাগানে কাজ করে যে টাকা আয় করতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি আয় করেন এই হস্তশিল্পে কাজ করে।

কারখানায় গিয়ে দেখা গেলো , কর্মীরা কলা গাছ ও আনারসের পাতা থেকে আঁশ বের করে পানিতে ধুয়ে পরিস্কার করছে। এরপর ভেজা আঁশ আবার রৌদ্রে শুকাচ্ছে। কারখানায় নারী কর্মীরা দলবদ্ধভাবে কাজ করছেন। কেউ রং করছেন, কেউ আঠা লাগিয়ে টিস্যু বক্স, চাবির রিং, ডেক্স অর্গানাইজার, নেট, পর্দা, ফ্লাওয়ার বক্স, আবার কেউ ওয়াল হ্যাঙ্গিংসহ নানা প্রকার পণ্যের কাজ করছেন।

ফিরোজ নামের এক কর্মী বলেন, আমরা ফেলে দেয়া কলাগাছ ও আনারসের পাতা থেকে এ সুন্দর হস্তশিল্প হতে পারে তা আমরা কখনও জানতাম না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সব জানতে পেরেছি। মেশিন দিয়ে কলা গাছ ও আনারসের পাতা থেকে আঁশ বের করা হয়। পরে এই আঁশ কর্মীরা টিসু বক্স, ডেক্স অর্গানাইজার, নেট, পর্দা, ফ্লাওয়ার বক্স, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, চাবির রিংসহ নানা পন্য তৈরি করে।

আমিনুর নামের এক কর্মী বলেন, আমরা প্রশিক্ষণ শেষে এখানে হস্তশিল্পের কাজ করছি। আমাদের পণ্যগুলো আকর্ষনীয় হওয়ায় ক্রেতাদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই কাজের অর্ডার অনেক বেশি। এখানে কাজ করে আমার মতো শতাধিক মানুষ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্বাবলম্ভী হচ্ছে।

রুমা নামের এক মহিলা শ্রমিক বলেন, আমি আগে বনে কাজ করতাম। সেখানে বেশি পরিশ্রমে যে পরিমান টাকা পেতাম তার চেয়ে এখানে কম পরিশ্রম করে অনেক বেশি টাকা পাই।

হোসনে-আরা নামের অপর শ্রমিক বলেন, আমরা চাই আমাদের এই হস্তশিল্পগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে যাক ও দেশের বাহিরে রপ্তানি করে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনুক।

শ্রমিক সমেলা বেগম বলেন, ব্যুরো বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শিখেছি। কাজ করতে আমাদের খুব ভাল লাগে। এখানে কাজ করে আমরা যা আয় করি তা অন্য পেশায় পাই না। এটি উপার্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম।

প্রশিক্ষক রিমা হাজং গারো বলেন, নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্র তৈরী করানো হচ্ছে। এতে করে তারা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। আগে যারা বন, আনারস ও কলা বাগানে কাজ করতো সেসকল নারীরাও আমাদের এখানে কাজ করছেন।

নারী উদ্যোক্তা ও বুরো ক্রাফটের মুখ্য সমন্বয়ক রাহেলা জাকির বলেন, এই ফাইবার দিয়ে এতো সুন্দর হস্তশিল্প তৈরী হয় এটা আমাদের জানা ছিলনা। এটা বাজারজাত হতে পারে বা নারীদের কর্ম সংস্থান হতে পারে সে বিষয়ও ছিলো কল্পনার বাহিরে। এ হস্তশিল্প মধুপুরে করার কারন এখানে ক্ষুদ্র ণৃ গোষ্ঠী বসবাস করে ও পিছিয়ে পড়া দরিদ্র নারীদের কর্ম সংস্থান দেয়া যাবে। এ কারণে মধুপুরে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বর্তমানে শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে হাজার হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, চায়নাতে একটি মেলায় অংশ গ্রহণ করলে বেশ কিছু ওয়ার্ডার পাই। এছাড়াও আরো অনেক দেশই হস্তশিল্পের এ পণ্য গুলো নেয়া আগ্রহ দেখাচ্ছে। অন্যদিকে কলা গাছ ও আনারসের কিছু পাতা আছে যেগুলো দিয়ে আঁশ বানানো সম্ভব নয়। সেগুলো দিয়ে আমরা টিস্যু পেপার বানাতে পারবো। এ ছাড়াও ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস বানানোর চিন্তা রয়েছে। এছাড়াও বজ্র দিয়ে খাম বানানো সম্ভব।

পরিত্যাক্ত প্রাকৃতিক কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পরিবেশ বান্ধব এসব পন্য পঁচনশীল হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বহিঃবিশ্বে। সঠিক পৃষ্টপোষকতা পেলে বিশে^র দরবারে আলাদা স্থান করে নেবে টাঙ্গাইলে মধুপুরের পরিবেশ বান্ধব এ সকল পন্য।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল