• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টক ফল তেতুঁল : জেনে নিন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০১৯  

টক ফল তেতুঁলের আচার, চাটনি অনেকেরই প্রিয়। আসুন আজ জেনে নিই তেতুঁলের কিছু বিশেষ গুনাবলি।

 

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলের পুষ্টিমান: 

ক্যালরি: ২৩৯, আমিষ বা প্রোটিন: ২.৮, শর্করা: ৬২.৫ গ্রাম, ফাইবার: ৫.১ গ্রাম, চর্বি: ০.৬ গ্রাম, ফসফরাস: ১১৩ মিলিগ্রাম, লৌহ: ২.৮২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম: ৭৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি: ২ মিলিগ্রাম, মিনারেল বা খনিজ পদার্থ: ২.৯ গ্রাম, ভিটামিন বি: ০.৩৪ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম: ৬২৮ মি:লি, ভিটামিন ই: ০.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন: ৬০ মাইক্রোগ্রাম, সেলেনিয়াম: ১.৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম: ২৮ মিলিগ্রাম, দস্তা: ০.১২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম: ৯২ মিলিগ্রাম, এবং তামা: ০,৮৬ মিলিগ্রাম। 

 

তেতুঁলের কিছু উপকারিতা :

 

 

  • তেঁতুল চর্বি কমানোয় বেশ বড় ভূমিকা রাখে।
  • এতে কোলস্টেরল ও ট্রাইগ্রাইসেরাইডের মাত্রা এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলষ্টেরল কমায়। তেতুঁল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
  • শরীরের মেদ কমাতেও কাজ করে তেতুল।
  • এতে টারটারিক এ্যাসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের বায়ূ, হাত-পা জ্বালায় এ শরবত কার্যকর পথ্য।
  • তিন-চার দানা পুরনো তেতুলের এক কাপ রসের সঙ্গে চিনি বা লবন মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ভেষজ চিকিৎসকরা।
  • তেতুঁল গাছের বাকলেও উপকার আছে। শুকনো বাকলের প্রলেপ ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষত সারে।
  • বুক ধড়ফর করা, মাথা ঘোরানো ও রক্তের প্রকোপে তেতুল উপকারী।
  • কাঁচা তেতুঁল গরম করে আঘাত পাওয়া স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সারে।
  • পুরনো তেতুল খেলে আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা ও পেট গরমে উপকার পাওয়া যায়।
  • পুরনো তেতুঁল খেলে কাশি সারে। পাকা তেতুঁল খেলে কাশি সারে।
  • পাকা তেতুঁলের খনিজ পদার্থ সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি। 
  • তেতুঁলে খাদ্যশক্তির পরিমান নারিকেল ও খেজুর ছাড়া সব ফলের চেয়ে বেশি।
  • পেপটিক আলসার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেটে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়। এই আলসার খুবই বেদনাদায়ক। রিসার্চ করে দেখা গেছে তেঁতুলের বীজের গুঁড়ো নিয়মিত খেলে পেপটিক আলসারের সেরে যাচ্ছে। আসলে তেঁতুলে উপস্থিত পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার সারিয়ে তোলে বা হতে দেয় না।
  • তেতুঁল পাতার রস কৃমিনাশক ও চোখ ওঠা সারায়।
  • মুখে ঘা বা ক্ষত হলে পাকা তেতুল জলে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।
  • তেঁতুল ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রে-র হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের অ্যাকনে আছে তাদের জন্যেও উপকারী তেঁতুল। এছাড়াও তেঁতুলে উপস্থিত হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতেও সাহায্য করে যার ফলে মরা কোষ উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।
  • তেঁতুলের বীজ ডায়বেটিস কন্টোল করতে সক্ষম। এছাড়াও রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখে। এতে উপস্থিত এক ধরনের এনজাইম যার নাম alpha-amylase রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • তেঁতুলে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা কিডনি ফেলিওর এবং কিডনি ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।

 

তেঁতুল খুবই হার্ট ফ্রেন্ডলি। এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড ব্যাড কোলেস্টেরল কমায় এবং গুড কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়াও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের ফ্যাট) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্ত চাপ কম করতে সাহায্য করে।

 

পুষ্টিগুণ :

তেতুলে  ক্যালসিয়ামের পরিমান সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুন বেশি। আয়রনের পরিমান নারিকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুন বেশি। অন্যান্য পুষ্টি উপাদান স্বাভাবিক পরিমানে আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেতুলে মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ২৮৩ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগাম ও ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম। সব মিলিয়ে তাই তেতুল খেতে পারেন আপনিও।

 

তেঁতুলের ৬টি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ

 

১। রক্তপাত বৃদ্ধি করে নির্দিষ্ট ঔষধের ক্ষেত্রে

 

তেঁতুল রক্তপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে এবং মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে যদি নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের সাথে গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের ঔষধগুলো হচ্ছে -  অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সিন এর মত নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ (NSAIDs),  

·         রক্ত পাতলা করার ঔষধ (হেপারিন, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি )

·         অ্যান্টি-প্লাটিলেট ড্রাগ (ক্লপিডোগ্রেল)

যদি আপনি এই ঔষধগুলো গ্রহণের সময় তেঁতুল খান তাহলে শরীরে এদের শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে এরা শরীরে অনেক বেশি কাজ করা শুরু করে বলে ক্রমান্বয়ে অধিক রক্তপাত শুরু হয়।

 

২। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারেঃ

নিয়মিত অনেক বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় বলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়। পুষ্টিবিদেরা  প্রতিদিন ১০ গ্রাম তেঁতুল গ্রহণের পরামর্শ দেন যা নিয়মিত খাদ্যগ্রহণের ০.৮ %। এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা যারা রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর ঔষধ গ্রহণ করছেন তারা তেঁতুল খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

 

৩। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেঃ

তেঁতুলের একটি সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে অ্যালার্জি বা অতিসংবেদনশীলতা। অনেক মানুষের মধ্যেই এই ফলটির উপাদানের প্রতি সংবেদনশীল হতে দেখা যায়। এ কারণে তাদের মধ্যে র‍্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

 

৪। দাঁতের এনামেল নষ্ট করেঃ

তেঁতুল উচ্চ মাত্রার এসিডিক প্রকৃতির। তাই নিয়মিত তেঁতুল খেলে আপনার দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বলা যায় যে অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খারাপ তেমনি আপনার দাঁতের জন্য ও খারাপ।

 

৫। পিত্তপাথর গঠনে সাহায্য করেঃ

কয়েকজন ভারতীয় গবেষক প্রমাণ করেছেন যে, ঘন ঘন প্রচুর পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া পিত্তপাথর হতে সাহায্য করে। এর ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, পরিপাকের সমস্যা এবং লিভারের সমস্যা হতে পারে।

 

৬। এসিড রিফ্লাক্স বৃদ্ধি করেঃ

যেহেতু তেঁতুল এসিডিক খাবার তাই এটি বেশি খেলে আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীতে বিশেষ করে পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল