• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

গ্রামীণ কৃষিতে এগিয়ে নারী

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২০  

বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি । বীজ সংরক্ষণ, বীজ বপন, সেচ ও সার দেওয়া, ফসল উত্তোলন, ফসল মাড়াই, ফসল ঘরে তোলা, সংরক্ষণ, বিক্রি-ফসল উৎপাদনের অধিকাংশ ধাপেই নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ রয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা কখনও নিজের জমিতে কৃষক হিসেবে কাজ করে, পারিবারিক কৃষিখামারে বিনা বেতনে কাজ আবার কখনও এবং অন্যের জমিতে অর্থের বিনিময়ে অথবা বিনা বেতনে কাজ করে থাকে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে কৃষিতে নারীদের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রয়েছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, নারী শ্রমশক্তির ৬৮ শতাংশই কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সঙ্গে জড়িত। বলা চলে, কৃষি ও এর উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে নারী। নারীর টিকে থাকার লড়াই বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির চরিত্র। শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের এক কোটি ২০ লাখ নারী শ্রমিকের মধ্যে ৭৭ শতাংশ গ্রামীণ নারী; যারা কৃষি সংক্রান্ত কাজে জড়িত। গত এক দশকের ব্যবধানে কৃষিকাজে প্রত্যক্ষভাবে নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বেড়েছে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০০১ সালের জরিপ অনুযায়ী, কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ ছিল মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ শতাংশে।

 

জীবন-জীবিকার তাগিদে গ্রামীণ নারী যোগ দিচ্ছে কৃষিকাজ, ব্যবসা বা চাকরিতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৭০ শতাংশের বেশি ভূমিহীন নারী কৃষিকাজে জড়িত। বলা চলে, কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে নারী। পারিবারিক ভাঙন, সমাজে স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি নূ্যনতম প্রশিক্ষণহীন এক নারীকে কৃষিজীবী নারীতে পরিণত করছে প্রতিদিন। উল্লিখিত গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কোনো দায়িত্বশীল পুরুষ ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলের নারীপ্রধান ৫৮ শতাংশ পরিবার। বিবিএসের হিসাব মতে, বিধবার হার উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ। এ অঞ্চলের জেলাগুলোয় নারীপ্রধান পরিবারের আধিক্য রয়েছে। ৭২ শতাংশ পরিবারের নারীপ্রধানের বয়স ৩০ থেকে ৪৯ বছর। আবার পরিবারপ্রধান হওয়ার পর ৯০ শতাংশ নারীর পেশা পরিবর্তন হচ্ছে, যারা আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করছেন। পেশা পরিবর্তনে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বসতবাড়িকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা কৃষিকাজ। উত্তরাঞ্চলের ৬৫ শতাংশ নারী পরিবারপ্রধান এ দুটি খাতে কাজ করছেন।

 

কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন জেলায় বৈষম্যও রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। তবে অগ্রগতি হয়েছে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায়। বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও লালমনিরহাট। এ ছাড়া কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোয় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।

 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে, নারীরা যদি উৎপাদনের জন্য সম্পদ পুরুষের সমপরিমাণ পেত, তাহলে তারা তাদের জমিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি উৎপাদন করতে পারত। এতে করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কৃষি উৎপাদন আরও ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেত, যার ফলে ক্ষুুধার্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।

 

 

বাংলাদেশের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১-তে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের কাজের স্বীকৃতির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমাদের নারী কৃষি শ্রমিকরা এখনও আইনগত স্বীকৃতি পায়নি। এত কাজ করার পরও নারীর কাজকে কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় না। তবে তৃণমূলে খেটে খাওয়া নারী শ্রমিকদের কল্যাণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দিন দিন এ পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল