• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

তারেক, উলফা ও পাকিস্তানি জঙ্গিদের মদদে দেশে আসে ১০ ট্রাক অস্ত্র

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২৩  

তারেক রহমান, উলফা ও পাকিস্তানি জঙ্গিদের সহায়তায় দেশে ১০ ট্রাক অস্ত্র আসে বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ভারতের সেনাবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) গগনজিৎ সিং। তিনি বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের কেন্দ্রেবিন্দুতে ছিলেন তারেক রহমান। বিএনপি'র শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্রের মত এত বড় চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসা সম্ভব ছিলো না।

চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনার ১৯ বছর পেরিয়েছে আজ। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়ের অংশ হয়ে থাকা এই দিনে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক করা হয়। এ ঘটনারর পর তৎকালীন সরকার এই অস্ত্র চালানের দায় জঙ্গিগোষ্ঠীদের ওপর আরোপ করলেও ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসে তার সঙ্গে তৎকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতার কথা। সম্প্রতি দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে নতুন বেশ কিছু তথ্য প্রদান করেন ভারতের সেনাবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) গগনজিৎ সিং।


এর আগে এ প্রসঙ্গে দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র উলফার কাছেই যাচ্ছিলো। এ সময় উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে তারেক রহমানের যোগসাজেশের বিষয়েও জানান তিনি। আরও জানান, তারেক রহমান ও তার ঘনিষ্ঠরাই ১০ ট্রাক অস্ত্র এনেছিলেন।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি। এবং তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থা উগ্রবাদী ও জঙ্গিদের জন্য নিরাপদ এক আশ্রয়স্থাল হয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। পরেশ বড়ুয়া এমন এক স্থানে বসবাস করতো যেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বাহিনী ছিলো। দোতালা বাসায় সে থাকতো এবং সেখান থেকে সে নির্বিঘ্নে বাধাহীনভাবে সর্বত্র চলাফেরা করতে পারতো। সে তার ছেলেদের নিয়ে ওখানকার পার্কে ফুটবল খেলতে যেতো। এ ছাড়াও অন্যান্য উগ্রবাদী নেতা ও তাদের পরিবারও সেখানে থাকতো। তারা সেখানে শান্তিতে থাকতে পেরেছে, কেননা ঐ দেশের সরকারের সমর্থন তারা পেয়েছিলো। সুতরাং বিএনপি এবং জামায়াত অবশ্যই এই অস্ত্র চালানের সঙ্গে জড়িত ছিলো।

পাকিস্তান ১৯৭১ সালে পরাজয়ের কথা ভুলতে পারেনি এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাকিস্তান সর্বদা চেষ্টা করেছে বাংলাদেশকে দুর্বল করতে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো, তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলো। আর পাকিস্তানও তাদের সমর্থন করে। এরপর যখন আওয়ামী লীগ এলো (সরকার গঠন করল) তারা বাংলাদেশের মুক্তির বিষয়টি জানে। কিন্তু পাকিস্তান সর্বদা প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে। আর বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে তাদের (পাকিস্তানের) বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, যেভাবে পাকিস্তান বিএনপিকে সহায়তা করেছে। তাতে আপনারা ব্যক্তিগতভাবে বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবেন, নিশ্চিতভাবেই তারা এটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো। অন্যথায় এটি সম্ভব ছিলো না। এত বড় অস্ত্রের চালান যখন আসে, জাহাজ বোঝাই করে, এটা কোন একটি সংগঠনের পক্ষে আনা সম্ভব নয়। এটি কোন নিম্নসারীর নেতার পক্ষে আনা সম্ভব নয়। এখানে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সম্পৃক্ত না হলে কোনভাবেই সম্ভব হত না। আর এর লক্ষ্য ছিলো খুবই সাধারণ, বাংলাদেশের ক্ষমতা যেনো বিএনপি-জামায়াতের হাতে থাকে এবং পাকিস্তান এটা চেয়েছিলো।


উগ্রবাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার জন্যই এই বড় অস্ত্রের চালান এসেছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, এই অস্ত্র জামায়াত ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত উগ্রবাদী এবং অন্যদের জন্য ছিলো। এ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকেও এই অস্ত্র প্রদান করা হতো। এতে করে বাংলাদেশ ও ভারতের এই পুরো অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠতো এবং এটাই তারা চেয়েছিলো। আসলে এর মূল পরিকল্পনাকারী ছিলো পাকিস্তান। এ সবকিছুই পেছনেই ছিলো পাকিস্তান। যদি তারা (বিএনপি-জামায়াত) এখনও ক্ষমতায় থাকতো তাহলে সেটি বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হতো। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেশটিতে এ ধরনের জঙ্গিবাদ নেই। হ্যাঁ, ভারতের সেভেন-সিস্টারস এ শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। সেটাও হয়ত থাকতো না। আওয়ামী লীগ সকল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে। এগুলো অবশ্যই হতো না। কিন্তু সবচাইতে বড় প্রভাবটি পড়ত বাংলাদেশে। বর্তমানে যেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আপনারা বসবাস করছেন, এটি সম্ভব হতো না।

বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের অবস্থান বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন একটি দেশে র‍্যাডিকালরা ক্ষমতায় আসে এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো একত্রিত হওয়া শুরু করে। তারা প্রত্যেকে পরস্পর পরস্পরের থেকে সুবিধা গ্রহণ করতে চায়। (তারেক রহমানের সঙ্গে) দাউন ইব্রাহিমের সম্পর্ক ছিলো কিনা তা আমি বলেত পারি না। কিন্তু এই অঞ্চলের যকগুলো উগ্রবাদী গোষ্ঠী রয়েছে, তারা প্রত্যেকে জামায়াত ইসলামের সঙ্গে একত্রিত হচ্ছিলো।

১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান বিএনপি নেতা ও স্বঘোষিত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মালিকানায় থাকা জাহাজে করে এসেছিলো, এ বিষয়টি স্মরণ করে তিনি বলেন, তাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রশ্রয়েই তারা এটি করেছিলো।

পূর্ববর্তী সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'ডিজিএফ ও এনএসআই’র কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তার সহযোগিতায় তিনি (পরেশ বড়ুয়া) কাজ করছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহযোগিদের সঙ্গেও যোগসাজশ ছিল পরেশ বড়ুয়ার।'

তিনি জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য বরাবরই দায়ী ছিলো পাকিস্তান। তৎকালীন (বিএনপি-জামায়াত) সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ছিলো। পাকিস্তান কোনভাবেই চায়নি সেই সরকারের পতন ঘটুক। কেননা বাংলাদেশকে তখন উগ্রবাদীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহার করে পেরেছিলো তারা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ আমাদের কাছে থাকা প্রতিবেদন অনুসারে এমন অসংখ্য কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা জানি। অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রতি 'জিরো টলারেন্স' নীতির কারণে এখন দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল