• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ক্লাস টু’তেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৯  

হুমায়ূন আহমেদ যে ছিলেন একজন চূড়ান্ত ধরণের রসিক মানুষ, তা নিশ্চয়ই কাউকে নতুন করে বলে দিতে হবে না। পুরোদস্তুর মজার মানুষ যাকে বলে, সেই রকম একজন হুমায়ূন আহমেদের জীবনে মজার ঘটনা থাকার কথা অগণিত! আছেও তাই! সেখান থেকে নির্বাচিত কিছু মজার ঘটনা সংগ্রহ করে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। কিছু হুমায়ূন আহমেদের নিজের বর্ণনায় কিছু অন্যের বর্ণনায়।

 

‘ক্লাস টুতে উঠে আমি আরেকটি অপকর্ম করি। যে রূপবতী বালিকা আমার হৃদয় হরণ করেছিল, তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলি। প্রকৃতির কোনো এক অদ্ভুত নিয়মে রূপবতীরা শুধু যে হৃদয়হীন হয় তাই না, খানিকটা হিংস্র স্বভাবেরও হয়। সে আমার প্রস্তাবে খুশী হবার বদলে বাঘিনীর মত আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। খামচি দিয়ে হাতের দুই তিন জায়গার চামড়া তুলে ফেলে। স্যারের কাছে নালিশ করে। শাস্তি হিসেবে দুই হাতে দুটি ইট নিয়ে আমাকে দু’ঘণ্টা নিলডাউন হয়ে বসে থাকতে হয়।’  

 

* আমার প্রথম স্কুলে যাওয়া উপলক্ষে একটা নতুন খাকি প্যান্ট কিনে দেয়া হলো। সেই প্যান্টের কোনো জিপার নেই, সারাক্ষণ হাঁ হয়ে থাকে! অবশ্য তা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন হলাম না। নতুন প্যান্ট পরছি, এই আনন্দেই আমি আত্মহারা। মেজো চাচা আমাকে কিশোরীমোহন পাঠশালায় ভর্তি করিয়ে দিয়ে এলেন। হেডমাস্টার সাহেবকে বললেন, চোখে চোখে রাখতে হবে। বড়ই দুষ্ট। আমি অতি সুবোধ বালকের মত ক্লাসে গিয়ে বসলাম। মেঝেতে পাটি পাতা। সেই পাটির উপর বসে পড়াশোনা। মেয়েরা বসে প্রথম দিকে, পেছনে ছেলেরা। আমি খানিকক্ষণ বিচার বিবেচনা করে সবচেয়ে রূপবতী বালিকার পাশে ঠেলেঠুলে জায়গা করে বসে পড়লাম। রূপবতী বালিকা অত্যন্ত হৃদয়হীন ভঙ্গিতে সিলেটি ভাষায় বলল, এই তোর প্যান্টের ভেতরের সবকিছু দেখা যায়। 

 

ক্লাসের সব ক’টা ছেলেমেয়ে একসঙ্গে হেসে উঠল। সবচেয়ে উচ্চস্বরে যে ছেলেটি হেসেছে, তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হাতের কনুইয়ের প্রবল আঘাতে রক্তারক্তি ঘটে গেল। দেখা গেল ছেলেটির সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে। হেডমাস্টার সাহেব আমাকে কান ধরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দিলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের উপদেশ দিলেন, এ মহাগুণ্ডা, তোমরা সাবধানে থাকবে। খুব সাবধান। পুলিশের ছেলে গুণ্ডা হওয়াই স্বাভাবিক। ক্লাস ওয়ান বারোটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। এ দুই ঘণ্টা আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার সময়টা যে খুব খারাপ কাটল তা নয়। স্কুলের পাশেই আনসার ট্রেনিং ক্যাম্প। তাদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। লেফট রাইট। লেফট রাইট। দেখতে বড়ই ভাল লাগছে। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম বড় হয়ে আনসার হবো।

 

* থ্রি থেকে ফোরে উঠব। বার্ষিক পরীক্ষা এসে গেছে। বাড়িতে বাড়িতে পড়াশোনার ধুম। আমি নির্বিকার। বই নিয়ে বসতে ভাল লাগে না। যদিও পড়তে বসতে হয়। সেই বসাটা পুরোপুরি ভান। সবাই দেখল আমি বই নিয়ে বসে আছি এই পর্যন্তই। এমন এক সুখের সময়ে ক্লাসের বন্ধু ‘মাথা মোটা’ শংকর খুব উত্তেজিত ভঙ্গিতে জানাল, তার মা তাকে বলেছেন সে যদি ক্লাস থ্রি থেকে পাশ করে ফোর-এ উঠতে পারে তাহলে তাকে ফুটবল কিনে দেবেন। সে আমার কাছে এসেছে সাহায্যের জন্যে। 

 

কি করে এক ধাক্কায় পরের ক্লাশে ওঠা যায়? একটা চামড়ার ফুটবলের আমাদের খুবই শখ। সেই দিনই পরম উৎসাহে শংকরকে পড়াতে বসলাম। যে করেই হোক তাকে পাশ করাতে হবে। দু’জন একই ক্লাসে পড়ি। এখন সে ছাত্র, আমি শিক্ষক। ওকে পড়ানোর জন্যে নিজেকে প্রথম পড়তে হয়, বুঝতে হয়। যা পড়াই কিছুই শংকরের মাথায় ঢোকে না। যাই হোক প্রাণপণ পরিশ্রমে ছাত্র তৈরি হল। দু’জন পরীক্ষা দিলাম। ফল বের হলে দেখা গেল আমার ছাত্র ফেল করেছে এবং আমি স্কুলের সমস্ত শিক্ষকদের স্তম্ভিত করে প্রথম হয়ে গেছি। ফুটবল পাওয়া যাবে না এই দুঃখে রিপোর্ট কার্ড হাতে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলাম।

 

* হ‌ুমায়ূন আহমেদের শৈশবের কথা। সিলেট থাকাকালীন যে পাড়ায় থাকতেন, সেখানে এক বিহারি পরিবার বাস করত। সেই পরিবারে পরির মতো ফুটফুটে তিন মেয়ে ছিল। হ‌ুমায়ূন আহমেদ সুযোগ বুঝে আলাদাভাবে ছোট দুই মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। ঘটনা মায়ের কানে যেতে দেরি হলো না। তিনি এক ছুটির দিনে বাবার কাছে অভিযোগ দিয়ে ছেলেকে শাসন করতে বললেন। শুনে বাবা মুচকি হেসে বললেন, ‘ছেলে বিয়ে করতে চায়, বিয়ে দাও। তোমার ছেলের পছন্দের কোনো মেয়ে আছে?’ হ‌ুমায়ূন আহমেদ পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন। মা উত্তর দেওয়ার আগেই তিনি চিকন গলায় বললেন, ‘আছে।’

 

* আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। স্কুল-ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি আহ্বান করা হয়। আমি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ এমনকি ভ্রমণকাহিনী সবই জমা দিলাম। সংকলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রতিটি রচনাই পড়েছেন। বললেন কী লিখেছিস? সবই তো অখাদ্য। যাই হোক, তোর যখন এত আগ্রহ, তুই বরং ইংরেজিতে যা ইচ্ছে লিখে নিয়ে আয়, ছেপে দেব। 

 

ইংরেজি সেকশনে কোনো লেখা জমা পড়েনি। আমি লিখে ফেললাম একখানা কবিতা। ঈশ্বর বিষয়ক অতি উচ্চশ্রেণীর ভাব বিষয়ক ইংরেজি কবিতা। পরে সেটি ছাপা হয়। আমাদের ক্লাসের ইংরেজির শিক্ষক একদিন ক্লাসে এসে আমার কবিতাটি পড়ে শোনালেন। তিনি খুব মুগ্ধ আমার কাব্য প্রতিভায়। স্যার বললেন, ‘হুমায়ূন, তুই ইংরেজি কবিতা লেখার চর্চাটা ছাড়বি না।’ (সাক্ষাৎকার থেকে)

 

* তখন পড়ি ক্লাস এইটে। চিটাগাং কলেজিয়েট স্কুল। বাংলা স্যার বললেন, রচনা লিখে আন। প্রিয় ঋতু। চার-পাঁচটা কোটেশন যেন থাকে। প্রতিটা বানান ভুলের জন্য পাঁচবার কানে ধরে উঠ-বোস। ডিকশনারি সামনে নিয়ে রচনা লিখবি। আমরা রচনা লিখলাম। স্যার আমার রচনা পড়ে রাগী গলায় বললেন, কী লিখেছিস ছাগলের মতো! বর্ষা প্রিয় ঋতু? লিখবি ঋতুরাজ বসন্ত। তাহলে নাম্বার পাবি। ফুলের সৌরভ, পাখির কূজন। বর্ষায় ফুল ফোটে না। পাখিও ডাকে না। আমি বললাম, স্যার, বর্ষাই আমার প্রিয়। আপনার প্রিয় আপনার মধ্যে থাক। নাম্বার বেশি পেতে হবে না।

 

* হুমায়ূন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ এক ছাত্র প্রশ্ন করলো, ‘স্যার, আপনি নাকি গরুর কথাও বুঝতে পারেন?’ হুমায়ুন আহমেদের ‘ছেলেবেলা’ বইটি পড়ে হয়তো এমন ধারণা হয়েছিলো ছাত্রটির। ক্লাসের মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় চলে আসায় হুমায়ুন আহমেদ বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘হ্যাঁ, পারি। নইলে তোমাদের ক্লাস নিচ্ছি কীভাবে?’

 

* এক সাংবাদিক টেলিফোনে হুমায়ূন আহমেদের কাছে তার অবসর সময় কীভাবে কাটে জানতে চাইলেন। উত্তরে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, ‘অবসর সময়ে আমি একটা কাঁচি নিয়ে বসি। কাঁচি দিয়ে কেটে সময় কাটাই!’

 

* ক্রিকেট নিয়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলার সময় হুমায়ূন আহমেদের প্রবল উৎসাহ দেখে এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিতে এলেন। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ ক্রিকেট বিষয়ে বিজ্ঞ নন দেখে সাংবাদিক হতাশ হয়ে বললেন, ‘আপনি যে ক্রিকেট বোঝেন না, এটা কি লিখতে পারি?’

 

-অবশ্যই লিখতে পারো।

-কিছু না বুঝেও ক্রিকেট কেন পছন্দ করেন-একটু ব্যাখ্যা করবেন?

-কারণ আমি গল্পকার।

-স্যার, একটু বুঝিয়ে বলুন।

-ক্রিকেটে এক ওভারে ছয়টি বল করা হয়। বল করা মাত্র গল্প শুরু হয়। নানান সম্ভাবনার গল্প। ব্যাটসম্যানকে আউট করার সম্ভাবনা, ছক্কা মারার সম্ভাবনা ইত্যাদি। ছয়টা বল হলো সম্ভাবনা-গল্পের সংকলন। এবার বুঝেছো?

 

* আমেরিকার আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্রিয়েটিভ রাইটিং ফ্যাকাল্টির ক্লাস। হ‌ুমায়ূন আহমেদ সেখানে তিন মাসের একটি কোর্স করছেন। একদিন ক্লাসে শিক্ষক আইডিয়া বিষয়ে কথা বলছিলেন। এক ঘণ্টার ক্লাস। হ‌ুমায়ূন আহমেদ লেকচার শুনে বেশ বিরক্ত। বিষয়টি ওই শিক্ষকের নজরে পড়তেই বললেন, ‘ডক্টর আহমেদ, আইডিয়া বিষয়ে তোমার কিছু বলার আছে?’ হ‌ুমায়ূন আহমেদ উঠে দাঁড়ালেন এবং পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘শিল্পীর শিরে কিলবিল করে আইডিয়া/উইপোকা বলে, চল ভাই, তারে খাই গিয়া।’

 

* গভীর রাতে হুমায়ূন আহমেদকে এক বিখ্যাত অভিনেতা ফোন করল। এত রাতে ফোন পেয়ে তিনি কিছুটা বিরক্ত। অভিনেতা ফোন দিয়ে বললেন, হুমায়ূন ভাই আমার অবস্থা খুব খারাপ। হুমায়ন আহমেদ বললেন, কেন কী হয়েছে? অভিনেতা বললেন, পেটে প্রচুর গ্যাস হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ আরো বিরক্ত হয়ে বললেন, পেটে গ্যাস হয়েছে তো আমাকে কেন? তিতাস গ্যাসকে ফোন দেন।

 

* হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ হার্ট অ্যাটাক করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি। একদিন হুমায়ূন আহমেদ দেখতে এলেন। সঙ্গে ডাক্তার-নার্সরাও রয়েছে। মাকে দেখে হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘আম্মা এবার সিগারেটটা ছাড়েন।’ সবাই হেসে উঠলো। একজন নার্স হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীবকে বললেন, ‘আপনার মা সিগারেট খান?’ আহসান হাবীব হেসে উত্তর দেন, ‘না। সিগারেট খেলে হার্ট অ্যাটাক হয় এমন ধারণা আছে আমাদের। তাই রসিকতা করেছে।’

 

* হুমায়ূন আহমেদ প্লেনে করে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। ওনার সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস সম্পর্কে তো কম বেশি সবারই জানা আছে। প্লেনের মধ্যে হঠাৎ তার সিগারেট খাওয়ার নেশা চেপে বসলো। হুমায়ূন আহমেদ এয়ার হোস্টেসকে ডেকে বললেন, ‘সিগারেট খাওয়া যাবে?’ এয়ার হোস্টেজ উত্তরে বললেন, ‘না। প্লেনের ভেতর ধুমপান করলে দুইশত ডলার ফাইন।’ হুমায়ূন আহমেদ চারশো ডলার দিয়ে বললেন, ‘আমি এখন দুইটা সিগারেট খাব।’ এয়ার হোস্টেস ছুটে গেল পাইলটের কাছে। পরে পাইলট হুমায়ূন আহমেদকে ডেকে পাঠালেন ককপিটে। তারপর বললেন, ‘ডলার দিতে হবে না। তুমি এখানে বসে সিগারেট খাও।’

 

* হুমায়ূন আহমেদ একটা গাড়ি কিনেছেন। এরপর একদিন শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অস্থিরতা প্রকাশ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে বললেন, ‘আপনাদের মতো লেখকদের নিয়ে তো আর পারা যায় না।’ তারপর তিনি এক বৃষ্টির দিনের বিবরণ দিলেন সিরাজুল ইসলামের কাছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদের গাড়িটা তখন শহীদুল্লাহ হলের মাঠে। বৃষ্টিতে ভিজছে। অর্ধেক প্রায় ডুবে গেছে। ছাত্ররা খবর দেয়ার পর প্রভোস্ট হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে গেলেন হুমায়ূন আহমেদের রুমে। হুমায়ূন আহমেদকে বিষয়টা বলতেই তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি তো এটা আমার রুম থেকেই দেখতে পাচ্ছি। সুন্দর একটা দৃশ্য। আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে গাড়িটা। একসময় পুরোটা ডুবে যাবে।’

 

* হুমায়ূন আহমেদের ৫২তম জন্মদিনের কথা। শাহবাগ থেকে তাজা দেখে ৫২টা গোলাপ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি গেলেন একজন। গিয়ে দেখলেন বগুড়া থেকে এক লোক এসেছেন। উনি হুমায়ূন আহমেদকে বলছেন, ‘স্যার, আপনি চাইলে আমি আমার জান দিয়ে দিবো! আপনি আপনার নাটকে আমাকে একটা চান্স দেন।’ হুমায়ূন আহমেদ তার সহকারীকে ডেকে বললেন, ‘তুমি এর নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার লিখে রাখো তো। এ আমার জন্য জীবন দিতেও রাজি।’ সহকারী সব টুকে নিলে চলে গেল। এরপর হুমায়ূন আহমেদ ওই লোককে বললেন, ‘তুমি বাড়ি ফিরে যাও। যদি কখনো কিডনি লাগে তো তোমাকে ফোন দিবো। চলে এসো।’

 

* তখন হুমায়ূন আহমেদ তার দেশের বাড়িতে। একদিন রাতের বেলা হুমায়ূন আহমেদ তার মাকে ঘুম থেকে ডেকে বললেন, ‘আম্মা, আমি গরুর কথা শুনছি এবং বুঝতে পারছি।’ তার মা তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘ঘুমা। গরুর কথা আবার মানুষে শোনে কীভাবে?’ কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার কথায় অটল। তিনি গরুর কথা বুঝতে পারছেন। তারপর তার মা তাকে কোলে করে গরুর ঘরে নিয়ে বলেন, ‘ঐ দ্যাখ, গরুর ঘরে মানুষ ঘুমায়।’ হুমায়ূন আহমেদ অবশ্য বড় হয়েও বলতেন যে, তিনিই সঠিক ছিলেন। গরুই কথা বলছিলো।’

 

* হুমায়ূন আহমেদ চলচ্চিত্র বানাবেন। আগুনের পরশমণির প্রধান চরিত্র বদিউল আলমকে খুঁজছেন। একদিন শিল্পী ধ্রুব এষকে দেখে তিনি সেই চরিত্রের জন্য পছন্দ করে ফেললেন। কারণ, বদিউল আলমের নির্লিপ্ত ভঙ্গি ধ্রুব এষের মধ্যে পুরোপুরিই আছে। প্রস্তাব শুনে ধ্রুব এষ বললেন, ‘অসম্ভব! আমি জীবনে অভিনয় করিনি’। হুমায়ূন আহমেদ মুচকি হেসে বললেন, ‘তাতে কী? আমিও তো জীবনে সিনেমা বানাই নি!

 

* ভীষণ গান ভালবাসতেন হুমায়ূন আহমেদ। বিভিন্ন সময় চমৎকার কিছু গান লিখেছেন। এর মধ্যে ‘যদি মন কাঁদে’ গানটি নিয়ে একটি মজার ঘটনা রয়েছে। নিউইয়র্কে একবার এই গানটি গেয়েছিলেন শাওন। সেখানে কয়েকজন দর্শক-শ্রোতা মন্তব্য করলেন ‘এই রবীন্দ্র সঙ্গীতটা তো আগে শুনিনি। এটা তো চমৎকার।’ এরপর হুমায়ূন আহমেদ মঞ্চে বক্তব্যের সময় বললেন, ‘যাক, এবার তবে রবীন্দ্রসঙ্গীতও লিখলাম।’

 

* অভিনেতা জাহিদ হাসান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে এই ঘটনাটি- হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে একেক সময়ে একেক রকম সম্পর্ক ছিল। কখনো পিতা-পুত্রের মতো, কখনো বন্ধুর মতো আবার কখনো বা বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের মতো। ১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। তখন আমরা সবুজছায়া নাটকটির শুটিং করছি গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। রাতে সাপের প্রচণ্ড ভয়। হুমায়ূন ভাই বুদ্ধি দিলেন পায়ে লাইফবয় সাবান মেখে ঘুমাতে। 

 

পায়ে সাবান কেন? হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘সাবানে কার্বলিক অ্যাসিড থাকে। পায়ে সাবান মাখলে সাপ আর ধারেকাছে ঘেঁষবে না।’ যে-ই বুদ্ধি সে-ই কাজ। এবং বুদ্ধিটা বেশ কাজেও দিল। এক রাতে, রাত ১২টার দিকে হুমায়ূন ভাই জানতে চাইলেন, ‘এখন কী খেতে চাও?’ আমি বললাম, ‘আম।’ হুমায়ূন ভাই তার এক সহকারীকে পাঠালেন গাজীপুরে। রাত পৌনে একটার দিকে তিনি আম নিয়ে এলেন। হুমায়ূন ভাই খুশি খুশি গলায় বললেন, ‘আসো, আম খাই।’

 

* একবার এক ব্যক্তি হ‌ুমায়ূন আহমেদকে বললেন, অমুক তো আপনাকে একেবারে ধুয়ে দিয়েছে। আপনার লেখায় নাকি শিক্ষামূলক কিছু নাই। শুনে হ‌ুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘ঠিকই তো বলেছে, আমি তো পাঠ্যবই লেখি না!’

 

* সিনেমা তৈরির প্রয়োজনে হ‌ুমায়ূন আহমেদ একবার সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে তার অফিসে গেলেন। কথা শেষ করে চলে আসার সময় হ‌ুমায়ূন আহমেদ হঠাৎ জানতে চাইলেন, ‘আপনাদের কোনো পুরোনো ট্যাংক আছে?’কেন বলুন তো? আমার একটা কেনার ইচ্ছা। ট্যাংক দিয়ে কী করবেন? ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিতে হয়। ট্যাংকে করে গেলে অনেক সুবিধা, তাই…

 

* হ‌ুমায়ূন আহমেদ সিনেমা বানাবেন, টাকা প্রয়োজন। হঠাৎ মনে হলো, সরকার যদি সাহায্য করে, তাহলেই তো হয়ে যায়। তিনি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। মন্ত্রী সব শুনে বললেন, ‘আপনি লেখক মানুষ। ছবি বানানোর আপনি কী জানেন?’ আমি কিছুই জানি না। তবে আমি শিখব। শিখে ছবি বানাবেন? জ্বি। নিজের ওপর আপনার এত বিশ্বাসের কারণ কী? হ‌ুমায়ূন আহমেদ এবার দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘অন্যের ওপর বিশ্বাস করার চেয়ে নিজের ওপর বিশ্বাস করাটা ভালো না?’

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল