• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

কালিহাতিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ‘ননী ফল’

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২২  

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাণিজ্যিকভাবে ননী ফলের চাষ শুরু হয়েছে। নানা রোগের ‘মহৌষধ’ এ ফলের চাষ করে প্রশংসা পাচ্ছেন উপজেলার পৌংলী এলাকার চাষি বাবুল হোসেন।

করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে ভারতে ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ে একটি কর্মশালায় অংশ নেন বাবুল। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দেশে এসে এ ফলগাছের চাষ শুরু করেন।


ননী ফলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। এটি আফ্রিকা অঞ্চলের একটি ফল। তবে ফলটি ক্রান্তীয় অঞ্চল অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশেও জন্মায়।


জানা যায়, ননী গাছে বারো মাস ফল ধরে। বর্তমানে এ ফল বাজারে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এর চারাও ৪০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।


ননী গাছের পাতা ও ফল মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত খুব কম মানুষের কাছেই এ ফলটি পরিচিত। তবে বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্য-দ্রব্য ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ননী ফলের রস বোতল-ভর্তি করে বাজারজাত করছেন।


চাষি বাবুল হোসেন জানান, উপজেলায় এলেঙ্গা পৌরসভার পৌংলি এলাকায় দুই বছর আগে এক বিঘা জমি নিয়ে কিছু চারা কিনে বাগান তৈরি করেন তিনি। বাগনটি সুরক্ষিত রাখতে তিনি পুরো জায়গায় টিনের বেড়া দিয়েছেন।

বাগানের এক পাশে ননী গাছের নার্সারিও গড়ে তুলেছেন বাবুল। বাকি অংশে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে গাছ রোপন করেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে তার বাগারে ২৮০টি ওষুধি গাছ আছে। এ বছর ৭০টিতে ফল ধরেছে।

অনেকেই কৌতুহল নিয়ে তার এই বাগান দেখতে আসেন। যাওয়ার সময় গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান তারা।

বাবুল হোসেন বলেন, “আমি অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পাড়ি, এই ননী ফল ও গাছের গুণাগুণের কথা। তারপর আমি বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ৫০টি চারা কিনে আনি। সেখান থেকেই আমার বাগান এ পর্যন্ত হয়েছে।

“এই ফল সম্পর্কে মানুষ খুব একটা জানে না। তাই টাঙ্গাইলে তেমন বিক্রি হয় না; লোকমুখে শুনে কিছু লোকজন আসেন। এই ফলের অনেক গুণ থাকায় এই এলাকাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকেই আমার বাগান দেখতে আসে।”

এই ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারলে প্রচুর চাহিদা তৈরি হবে বলে মনে করেন বাবুল হোসেন।

বাগান দেখতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি এই ফলের নাম আগে কখনো শুনিনি। ইন্টারনেট থেকে জানতে পারি, এই ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্টিক ও চর্ম রোগের কাজ করে, তাই আগ্রহ নিয়ে বাবুল হোসেনের বাগান দেখতে এসেছি। যাওয়ার সময় একটা গাছ ও কিছু ফল কিনে নিয়ে যাবো।”

মীর আসাদুজ্জামান নামের আরেকজন বলেন, “আমি পাশের এলাকা থেকে এসেছি; এই ফল সম্পর্কে জেনেছি। টাঙ্গাইলের কোথাও এই গাছের খোঁজ পাইনি।বাগানের এক পাশে ননী গাছের নার্সারিও গড়ে তুলেছেন বাবুল।

এই ফল এলার্জি ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যথায় খুব উপকারী; তাই ওনার বাগানে এসেছি নিয়ে যেতে। খেয়ে যদি উপকার পাই তাহলে আবার আসবো।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহ্সানুল বাসার বলেন, বাবুল হোসেন আমাদের ভালো উদ্যোক্তা। তার আবাদকৃত ননী ফল গাছে এবার ফল ধরেছে। এই ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাও এগুলো কালেকশন করে খাচ্ছে। গুণাগুণের দিক থেকে আমরা জানতে পেরেছি, এই ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। পুরাতন বাতের ব্যথা সারাতে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

“আমাদের দেশে ভেজষ গাছ কমে যাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে ভেজষ গাছ লাগানো দরকার। ভেজষ উদ্ভিদে বাবুল হোসেনের মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছে।”

বাবুল হোসেনের মত উদ্যোক্তা তৈরি হলে সহযোগিতা করা হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আহ্সানুল বাসার জানান।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল