মধুপুরে রুপচর্চা পেশায় বদলে গেছে গারো মেয়েদের জীবন
আজকের টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০
২৫০ গ্রাম চালের সঙ্গে অনেকখানি বুনো আলু মিশিয়ে খিচুড়ির মতো কিছু একটা রান্না হতো। ঐ ২৫০ গ্রাম চালের তৈরী খাবার খেতো পরিবারের নয়টা পেট। এক বেলা খেয়েই ফুরিয়ে যেতক সেই খাবার। বাকি বেলাগুলোতে সবাই মিলে থাকতো উপোস। কখনো হয়তো কারও জন্য কিছুটা আলু সেদ্ধ করা হতো। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কাকড়াগুনী গ্রামে অনিলা সিমসাংয়ের পরিবারের দিন এভাবেই কাটত।
তিন দশক আগের সেই অনটনের কথা মনে করে ৭২ বছর বয়সী গারো বৃদ্ধা বলেন, ‘নয়জন খাওয়্যাউয়া, হাল বাওয়া আর লাকড়ি বিক্রি ছাড়া কোনো কাজ নাই। চাষের জমিও ছিল না। বাচ্চাদের নিয়া জীবনে খুব কষ্ট হইছে।’
অনিলার বাড়িতে এখন টিনচালা পাকা ঘর উঠেছে। তিনবেলা মনমতো পদ রান্না হচ্ছে। অতিথি-কুটুম এলে না খেয়ে ফেরে না। পরবে-উৎসবে জাঁকজমক করে ভোজ হয়।
গারোরা মাতৃবংশীয়। তাদের বংশপরিচয় হয় মায়ের সূত্রে। আর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় মেয়েরা। অনিলার পরিবারটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে মূলত মেয়েদের আয়ে। তাঁর সাত সন্তানের চারজন মেয়ে। আশির দশকের শেষ থেকে একে একে মেয়েরা গ্রাম ছেড়েছিলেন ঢাকায় বিউটি পারলারে কাজ করতে। তিনজন এখন রাজধানীতে নিজেরা পারলার দিয়েছেন।
শুধু এ পরিবার নয়। শহরে রূপচর্চা-পেশাজীবী মেয়েদের আয়-রোজগার মধুপুরের অনেক গারো পরিবারের আর্থিক অবস্থা পাল্টে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে অনেকটা ভেতরে কাকড়াগুনী, গায়রা, শোলাকুঁড়ি, জলছত্র ও আমলিতলা গ্রাম ঘুরে সে সচ্ছলতার ছবি দেখা গেল।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সেড) ২০১৮ সালের একটি জরিপ বলছে, মধুপুর এলাকার গারো কর্মজীবী নারী-পুরুষদের ৮ শতাংশের বেশি শহরাঞ্চলে পারলারে কাজ করেন। সংখ্যায় তাঁরা হাজারের বেশি। এলাকার কিছু বাঙালি মেয়েও পারলারে কাজ করছেন।
সেডের হিসাবে, মধুপুরে গারো জনসংখ্যা ১৭ হাজারের মতো। গারোরা অবশ্য বলে থাকেন, সংখ্যাটা ২৫ হাজার ছাড়াবে। এলাকায় খ্রিষ্টান মিশনারিরা অনেক বছর ধরে বেশ কিছু স্কুল চালান। সব মেয়েই স্কুলে যায়। ঢাকাতে অনেক গারো মেয়ে বিদেশিদের বাসায় গৃহকর্মীর কাজও করেন। গ্রামের মেয়েরা ধানখেত, আনারস, পেঁপে ও কলার বাগানে কাজ করেন।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গারো মেয়েরা বিউটি পারলারে কাজ করে অনেক পরিবারের অবস্থা ফিরিয়েছেন। তবে সামাজিক সমস্যাও হচ্ছে।
৫০টি পার্লারের মালিক সংগঠন বিউটি সার্ভিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কানিজ আলমাস খান। তিনি বলেন, ঢাকায় রূপচর্চাকেন্দ্র শুরু করেছিল চীনা বংশোদ্ভূতরা। তারাই গারো মেয়েদের পেশায় এনেছিল।
কানিজের পারলারের ১১টি শাখায় তিন হাজারের কাছাকাছি মেয়ে কাজ করেন। প্রায় অর্ধেকই মধুপুর-ময়মনসিংহ এলাকার গারো। তিনি বলেন, পারদর্শী, কর্মঠ ও বিশ্বস্ত এই মেয়েরা কাজ করে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছে।
মধুপুরে এখনো পাকা ঘরের সংখ্যা হাতে গোনা। পাঁচ গ্রামে মাটির ঘরের মধ্যে মধ্যে যেসব পাকা ঘর দেখা যায়, সেসব বাড়ির মেয়ে অথবা বউ পারলারে কাজ করেন। কাজ করেন তাঁরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে। এর মধ্যে সাতটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটির মেয়েরা নিজেরাই পার্লার-মালিক।
সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন মধুপুর বনাঞ্চল আর গারো জাতিসত্তার মানুষদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। তিনি বলেন, গারো সমাজে মেয়েরা স্বাধীনতা ভোগ করে। পেশার বিষয়ে পুরুষেরা বাধা দেয় না। তা ছাড়া রূপচর্চাকর্মী মেয়েরা পরিবারে সচ্ছলতা আনছে।
অনিলার বড় মেয়ে সুচন্দা সিমসাং (৫৫) বলেন, ১৯৮৯ সালে খাবারের কষ্ট সইতে না পেরে এক খালার সঙ্গে ঢাকায় আসেন। স্বজাতীয় এক পারলারকর্মীর বাচ্চা রাখতেন। পরে গ্রিন রোডের একটি পারলারে মাসিক ৩০০ টাকা বেতনে কাজ নেন। থাকা-খাওয়া মালিকের।
বাড়িতে টাকা পাঠাতেন সুচন্দা। তাঁর আয়েই পরিবারের কষ্ট দূর হতে থাকে। গ্রাহকদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথাবার্তা বলতে সমস্যা হতো। সংস্কৃতির পার্থক্যের কারণেও অসুবিধা হতো। খাওয়ার কষ্ট ছিল। সুচন্দা কিন্তু লেগে থেকে ২০০৭ সালে নিজে মোহাম্মদপুরে একটি পারলার দেন। সুচন্দার হাত ধরে ক্রমে অন্য তিন বোন সুজাতা সিমসাং (৫০), প্রমিতা সিমসাং (৪৫), ভাবনা সিমসাং (২৬) ঢাকায় আসেন। সুজাতা-প্রমিতাও নিজস্ব পারলার দিয়েছেন। প্রতি মাসে গ্রামে টাকা পাঠান। তাঁদের টাকায় চাষবাস চলে, আপদ-বিপদ পার হওয়া যায়। ২০১৬ সালে পাকা ঘর উঠেছে। বোনেরা গ্রামে আর ময়মনসিংহ শহরে জমি কিনেছেন।
অনিলার বাড়ির পাশেই আরেকটি পাকা বাড়ি, তালাবদ্ধ। মালিক মিনিতা সিমসাং পারলারে কাজ করে ঘর তুলেছেন। স্বামী-সন্তানসহ ঢাকায় থাকেন, উৎসব-পার্বণে গ্রামে আসেন।
চাষ ক্ষেতের আল আর পাহাড়ি মাটির রাস্তা পেরিয়ে আমলিতলায় প্রেমলা নকরেকের বাড়িতে পৌঁছে দেখা যায়, এটিও পাকা। তাঁর চার মেয়ের দুই মেয়েই ঢাকায় পার্লারে কাজ করেন। অভাবের তাড়নায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বড় মেয়ে ববিতা নকরেককে ঢাকায় কাজে পাঠিয়েছিলেন। ববিতাই কয়েক বছর পর মেজ মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মিতালিকে ঢাকায় নেন। দুই বোন মিলে বাড়ি পাকা করেছেন। সংসার চালাচ্ছেন, ছোট বোনদের ঢাকা আর চট্টগ্রামে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। ববিতা নিজে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম শহরে পারলার দিয়েছেন। সেখানে ২৫ জনকে চাকরি দিয়েছেন।
গায়রা গ্রামের দুই জা জিলিতা চাম্বুগং ও রোজিনা দফো ঢাকায় পারলারে কাজ করেন। ২০১৫ সালে ঝড়ে তাঁদের মাটির ঘর ভেঙে গেলে তাঁরা টাকা পাঠিয়ে টিনের ঘর তৈরি করিয়েছেন। ধান আবাদের সময় থোক টাকা দেন। মাসে নিয়মিত টাকা তো পাঠানই।
মধুপুরে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, অভাবী পরিবারের মেয়েরাই মূলত পার্লারে কাজ করছে। তাদের সুবাদে বেশ কিছু পরিবারে আয়-উন্নতি হয়েছে, এটা ভালো। তবে পাকা বাড়ি তৈরির দিকে না ঝুঁকে টাকাটা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করলে ভালো হতো। অন্যদের কাজের সুযোগও হতো।
এদিকে পারলারে কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ বাঙালি ছেলে বিয়ে করছেন, যা সমাজ ভালো চোখে দেখছে না। মধুপুরের গারোরা প্রায় সবাই ধর্মে খ্রিষ্টান। এমন পরিস্থিতিতে অনেক পরিবার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
অনিলার স্বামী প্রমুত মারাক (৮০) বলেন, কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাঁর বড় দুই মেয়েও বাঙালি বিয়ে করেছেন। পরিবার পাঁচ বছর পর মেনে নিয়েছে। তবে এই দুই মেয়ে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হারিয়েছেন।
- ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান
- ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে
- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের
- ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে নতুন উদ্যোগ, তিন ‘পয়েন্ট’ চিহ্নিত
- ঢাকায় আসছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব
- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছে
- ৩০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার আবাসন সুবিধা পাবে
- দুঃসময়ে সশস্ত্র বাহিনী পাশে দাঁড়ায়
- সঞ্চালনের বাধা কাটছে
- শেয়ার বাজারে সূচকের বড় উত্থান, লেনদেন ছাড়াল ৮০০ কোটি টাকা
- কাঁচের ভবন ও এসির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে বাড়ছে ঢাকার তাপ
- স্টিকার দেখলেই গাড়ি-মোটরসাইকেল আটকাচ্ছে পুলিশ
- চিংড়িঘের থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- উখিয়ায় অস্ত্র-গুলিসহ দুই রোহিঙ্গা যুবক আটক
- কোটি টাকার কাবিনে কমিউনিটি সেন্টারে দুই ব্যাঙের বিয়ে
- ঐতিহাসিক ডাকটিকিটে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
- রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, এলাকায় চাঞ্চল্য
- দিনাজপুরে নাশকতা মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতা কারাগারে
- মুন্সীগঞ্জের দুই উপজেলায় ৩১ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ
- নোয়াখালীর চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার
- রাণীনগরে ধান মাড়াই মেশিন উল্টে শ্রমিক নিহত
- রাজবাড়ীতে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস পালিত
- চট্টগ্রামে ১১০০ কেজি চোরাই চিনি উদ্ধার
- কুড়িগ্রামে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ, বগুড়া থেকে উদ্ধার
- সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৫ বাংলাদেশি আহত
- ফরিদপুরে ইয়াবাসহ গ্রেফতার যুবকের যাবজ্জীবন
- অভিবাসন সংক্রান্ত অপতথ্য রোধে বাংলাদেশ-ইতালি একসঙ্গে কাজ করবে
- বাংলাদেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে রাজি মিশর
- সংসদের অধিবেশন মুলতবি
- জনগণের কথা চিন্তা করে জনবান্ধব আইন তৈরি করতে হবে : আইনমন্ত্রী
- আজ ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী
- অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধের দাবি নতুনধারার
- জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস আজ
- বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন: প্রধানমন্ত্রী
- রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
- আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিব নগর সরকার
- প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকক থেকে আজ দেশে ফিরবেন
- থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্ব নতুন যুগে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদন ঢাকার প্রত্যাখ্যান
- নির্বাচনের প্রস্তুতি-প্রচারণা দেখতে আ`লীগকে বিজেপি’র আমন্ত্রণ
- বাংলার বাঘ নামে পরিচিত হক সাহেব ছিলেন গণমানুষের নেতা : রাষ্ট্রপতি
- পরিদর্শক থেকে এএসপি হলেন ৪৫ কর্মকর্তা
- দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
- হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যে নির্দেশনাগুলো দিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর
- ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচার সংবর্ধনা
- আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে?
- আজ আপনার জন্মদিন হলে জেনে নিন রাশিফল
- সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির এক সন্ত্রাসী নিহত
- বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২১.৫৫ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডিবি