• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

৫২ দিনে পোল্ট্রি মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩  

ব্রয়লার মুরগি ও এক দিনের বাচ্চার দাম সিন্ডিকেট করে ৫২ দিনে পোল্ট্রি মাফিয়া চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। জানুয়ারির ৩১ থেকে ২৩ মার্চ-এই ৫২ দিনে ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা এবং এক দিনের বাচ্চায় লুট করা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোল্ট্রি সেক্টরে, প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫ শত টন। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন ১ কেজি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত। ২ হাজার টনে প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে এক দিনে ৬ কোটি টাকা। জানুয়ারির ৩১ থেকে ২৩ মার্চ-৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা হয় এবং এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন ২০ লাখ।


একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রয় হয়েছে। জানুয়ারির ৩১ থেকে ২৩ মার্চ ২০২৩, সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে মোবাইলে মেসেজ করলেও আসলে বাচ্চা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়। তাহলে হয় ৩১২ কোটি টাকা। প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে না থাকায় এই সুযোগে পোল্ট্রি শিল্পের পুঁজিবাদি মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিল ৯৩৬ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে সুমন হাওলাদার বলেন, ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক দামের কারণে প্রান্তিক খামারিরা লস করতে করতে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছে। ছোট ছোট খামারিদের ক্ষতির কারণ করপোরেট গ্রুপগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেওয়া, প্রান্তিক খামারি উৎপাদন করলে বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে লসে ফেলে দেওয়া, আবার উৎপাদনে না থাকলে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করে দেওয়া। পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা ১০০ ভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন, এতে করে বাজার তাদের দখলে চলে যাচ্ছে তার প্রমাণ বারবার বাজার সিন্ডিকেট। পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ এবং করপোরেট গ্রুপের মুরগির ডিম উৎপাদন বন্ধ করতে না পারলে কোনোদিন বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ হবে না। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের প্রফেসরগণ এবং পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করে পোল্ট্রির সব পণ্যের উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যেমন মুরগির বাচ্চা পোল্ট্রি ফিড ও ডিম মুরগি। অথবা করপোরেট গ্রুপের ওপর নির্ভর না করে সরকারি হ্যাচারি ও ফিড মিল চালু করে মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড খামারিদের কাছে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করতে হবে। প্রাণিসম্পদের সব কর্মকর্তা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।

করপোরেটদের প্রতারণার ফাঁদ ব্ল্যাংক চেক জমা নিয়ে চুক্তিভিত্তিক মুরগি পালন ফিড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সাহেবের ভাষ্যমতে তাদের দখলে চুক্তিভিত্তিক খামারের সংখ্যা ১২ শতাংশ, তার মানে এক লাখ ষাট হাজার খামার থেকে ১৯ হাজার ২০০ খামার সব কোম্পানির চুক্তিভিত্তিক খামার। প্রান্তিক খামার বন্ধ থাকলেও চুক্তি খামার কখনো বন্ধ থাকে না। এখন এই সুযোগে চুক্তির খামারে বাচ্চা দিলেও প্রান্তিক খামারে বাচ্চা দিচ্ছে না। প্রান্তিক খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে সব ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা ও প্রাণিসম্পদের মাধ্যমে সব ধরনের ভ্যাকসিনসহ সব সুবিধা দিয়ে খামারিদের উৎপাদনে আনতে হবে ও বাজার প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে। তা না হলে একচেটিয়াভাবে করপোরেটদের দখলে চলে যাবে বাজার এবং সাধারণ ভোক্তারা জিম্মি হয়ে পড়বে।

সুমন হাওলাদার বলেন, সব করপোরেট গ্রুপ মুরগির বাচ্চা পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন করে খামারিদের সরবরাহ করবে এবং তাদের ডিম মুরগি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্রান্তিক খামারি ডিম মুরগি উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ করবে এতে বাজার সিন্ডিকেট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। প্রাণিসম্পদের মাধ্যমে করপোরেট গ্রুপের সব খামারি ও ডিলারদের ব্ল্যাংক চেকের মিথ্যা মামলা তদারকি করে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। সব প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলায় জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে যাতে করে সেবার মান বাড়বে ও ডিম ও মুরগির উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান রক্ষা হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল