• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই - উন্মক্ত হচ্ছে আমদানি

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২১  

নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। ভোক্তারা আতঙ্কিত হয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেছেন। এতে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৮০-৯০ এবং আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রæত বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইং থেকে পেঁয়াজের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। ভারতের পাশাপাশি ৯টি বিকল্প উৎসÑ মিসর, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিয়ানমার, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ¯েøাভেনিয়া থেকে প্রয়োজন হলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজের প্রথম চালান এনেছেন আমদানিকারকরা। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হয়ে বেশি পরিমাণে না কেনার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ আছে। এছাড়া আমদানি করে দ্রæত বাজারে সরবরাহ বাড়ানো হবে।

জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক কর প্রত্যাহার করা হবে। এলক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রবিবারের মধ্যে প্রস্তাব পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া দাম কমানো এবং আমদানি দ্রæত করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ শুরু করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ওই বৈঠকে পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়। শুধু পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আগামী সোমবার এ সংক্রান্ত জরুরী বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এফবিসিসিআই, স্থল ও সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের বাজারে ‘অক্টোবর কারসাজি’ করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত বছর প্রতিকেজি পেঁয়াজ দাম বেড়ে ২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এর আগের বছর ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে মসলা জাতীয় এই পণ্যটি। এ কারণে ভোক্তারা আতঙ্কিত হয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এবার দেশীয় পেঁয়াজের মজুদ ভাল হওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ আছে। ভারত থেকে আমদানি একটু কম হলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিকল্প সোর্স থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আসবে। এ কারণে আতঙ্কিত হয়ে বেশি পরিমাণে কেনার প্রয়োজন নেই। শীঘ্রই পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। সাধারণ মানুষ ন্যায্যমূল্যেই পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারী পর্যায়ে পেঁয়াজ আমদানি উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের বড় বড় শিল্প গ্রæপকেও আমদানিতে সম্পৃক্ত করা হতে পারে। এস আলম গ্রæপ, মেঘনা গ্রæপ, সিটি গ্রæপ, টিকে গ্রæপ ও বসুন্ধরা গ্রæপসহ আরও কয়েকটি গ্রæপকে পেঁয়াজ আনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাজার মূল্য এবং সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে।

ভারত থেকে আমদানি বেড়েছে \ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে দাম বাড়লেও অফিসিয়ালি ভারত সরকার পেঁয়াজের দাম বাড়ায়নি। হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আমদানি কিছুটা বেড়েছে। কিছুদিন আগে বন্দর দিয়ে ৫-১০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো। বর্তমানে ২০-২৫ ট্রাক আমদানি হচ্ছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় মূলত দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ভারত থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১০-১৫ রুপীতে কেনা হয়। বাংলাদেশে তা বিক্রি করা হয় ২৬-২৭ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে ভারতের বাজারে ২৯-৩৫ রুপীতে বিক্রি হচ্ছে।

এর সঙ্গে পরিবহন খরচ রয়েছে ৬ রুপীর মতো। তাতে বন্দরে পৌঁছাতে প্রতি কেজি ৪০-৪৪ টাকার মতো পড়ছে। সেই সঙ্গে শুল্ক আছে ৩-৪ টাকা। বন্দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫-৪৭ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, পূজার পর পেঁয়াজের বাজার এমনিতেই কমে আসবে। এই আমদানিকারক আরও বলেন, হিলি স্থলবন্দরে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৫-৪৭ টাকায়, তা ঢাকায় হয়ে যাচ্ছে ৭০ টাকা। এর মূল কারণ অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া। বন্দরে পাইকারিতে বিক্রি করছি ৪৫-৪৭ টাকা। যেসব পাইকার বন্দর থেকে গাড়িভাড়া দিয়ে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তারা মোকামে বিক্রি করছেন ৫৫ টাকায়। তাদের কাছ থেকে তৃতীয় পক্ষ নিয়ে গিয়ে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে ডালিতে বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি দরে।

জানা গেছে, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই দায়ী। মূলত দুর্গাপূজা, অতিবৃষ্টি এবং উৎপাদন কম হওয়ার মতো ভুল তথ্য পরিবেশন করে বাজারে গুজব ছড়ানো হয়েছে। আর এ কারণে বাড়ছে দাম। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গুজব তুলে পণ্যটির দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। পূজার পর পেঁয়াজ রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে এই গুজব ওঠার পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম ৪০-৮০ টাকায় উঠেছে। এখন পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। এদিকে উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহ সংক্রান্ত তথ্য দিতে পেঁয়াজ উৎপাদন ও আমদানি হয় এমন ১৬ জেলার ডিসিকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে যেসব জেলায় দেশী পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সেসব জেলার ডিসিকে বাজার মনিটরিং জোরদার, পেঁয়াজের গুদাম পরিদর্শন এবং বর্তমান মজুদের তথ্য পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও নাটোর। এছাড়া সীমান্তবর্তী যেসব জেলা দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়, এমন জেলাগুলোর ডিসিকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের ট্রাক চলাচল নির্বিঘœ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ জেলাগুলো হচ্ছে- কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট। এছাড়া আমদানিকৃত পেঁয়াজের কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষা দ্রæত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানির পর স্থলবন্দরে অবস্থিত উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং থেকে পরীক্ষার সনদ নিতে হয়। এছাড়া কৃষিপণ্য হিসেবে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর থেকে আমদানির অনুমোদন নিতে হয়। এখন সঙ্কটজনক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমদানি অনুমোদন এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজের কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষা দ্রæত করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল