• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

যদি ঘুম না আসে, তাহলে যে দোয়া ও জিকির করবেন!

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ঘুম আল্লাহর পক্ষ থেকে সকলের জন্য এক বিশাল নেয়ামত। হাদিস শরীফে ঘুমকে ইবাদত সমতুল্য বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। তবে তা তখনই ইবাদত বলে গণ্য হবে যখন আমরা এর যথাযথ আদব রক্ষা করে পালন করব। 

 

ইতোপূর্বে এক আলোচনায় ঘুমের আদব নিয়ে কথা হয়েছিল। এ আলোচনায় ঘুমাবার সময় যত মাসনুন দোয়া রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হবে।

 

ঘুমানোর পূর্বে ইসতেগফার:

ঘুমানোর পূর্বে একজন মুসলমানের জন্য ছোট ছোট বহুকাজ আনজাম দেয়া জরুরি।  প্রথম কথা হলো, মানুষ যখন রাত্রিবেলা বিছানায় ঘুমাতে যায়, তখন সে বিছানায় থেকে সারাদিনের সকল কাজের হিসেব-নিকেশ নিবে। এ কারণেই বুজুর্গানে দীন বলেছেন, রাত্রিকালে ঘুমানোর পূর্বে কর্তব্য হলো, সারাদিনের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর গভীরভাবে চোখ বুলিয়ে নেয়া। সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর থেকে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত কী কী কাজ করেছ, সেসকল কর্মকাণ্ডের র মধ্যে ক’টি ভলে ছিল আর ক’টা মন্দ।

 

তারপর সংক্ষেপে আল্লাহ তায়ালার নিকট তাওবা-ইসতেগফার করে নেবে। আয় আল্লাহ, আজ আমি যেই দিনটি অতিবাহিত করেছি, জানি না তাতে কত ভুল করেছি। জানি না কোথায় কোথায় আমি সঠিক পথ থেকে পদস্খলিত হয়েছি। জানি না কোথায় কোথায় আমার দৃষ্টি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। জানি না কোথায় কোথায় আমার দ্বারা পাপ কাজ সংঘটিত হয়েছে। আয় আল্লাহ, আমি এখন এই দিনটি সমাপ্ত করছি। আমি আজ সংঘটিত সকল গুনাহ-খাতা থেকে মাফ চাচ্ছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।

 

ستغفرالله ربي من كل ذنب واتوب اليه ا 

 

উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহি রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাই

 

আগামী দিনটি কি পাবে:

সুতরাং রাত্রিবেলা ঘুমানোর পূর্বে দিনভর কৃত গুনাহ থেকে তাওবা-ইসতেগফার করে নিবে। কারণ রাতের ঘুমও একধরনের মৃত্যু। কেন না ঘুমের মধ্যে মানুষ দুনিয়াবি সম্পর্কে একদম বেখবর থাকে। এজাতীয় বহুঘটনা রয়েছে যে, মানুষ ঘুমিয়েছে কিন্তু আর জেগে ওঠেনি। সুতরাং জানা নেই আগামী দিনের সাক্ষাত পাব কী না। তাই বলি, আগামী দিনটি আসার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালার দরবারে সারাদিনের হিসাব-কিতাব মিলিয়ে নাও। তারপর খুব করে তাওবা-ইসতেগফার কর। 

তাওবার পরিচয়:

তাওবার মর্ম ও মতলব হলো, যেসকল গুনাহর কথা মনে পড়ে সেসবের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। ভবিষ্যতে কোনো গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করা। এতটুকুন কাজ করতে পারলে মহান আলাহর দরবারে আশা রাখা যায়, দিনভর সঙ্ঘটিত সকল ভুল-ভ্রান্তি, গুনাহ-খাতা আল্লাহ তায়ালা আপন রহমতের দ্বারা ক্ষমা করে দেবেন। 

ঘুমানোর সময়কার দোয়া:

ঘুমানোর সময়ের জন্য দু’টি দোয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম থেকে বর্ণিত আছে। একটি হলো,

 

اللهم بسمك احي وبك اموت

 

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিসমিকা আহইয়া ওয়াবিকা আমুতু।

 

আয় আল্লাহ, আমি আপনার নামেই জীবিত হই। আপনার নামেই মৃত্যুবরণ করি। (বুখারি, তিরমিযি, আহমদ)

 

এরপর আর একটি চমৎকার দোয়া রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে। সেই দোয়াটি হলো,

 

اللَّهُمَّ أَنْتَ خَلَقْتَ نَفْسِي وَأَنْتَ تَتَوَفَّاهَا، لَكَ مَمَاتُهَا وَمَحْيَاهَا، اللَّهُمَّ إِنْ تَوَفَّيْتَهَا فَاغْفِرْ لَهَا، وَإِنْ أَحْيَيْتَهَا فَاحْفَظْهَا، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ    . 

অর্থ : ইয়া আল্লাহ! তুমিই আমার প্রাণ সৃষ্টি করেছ, তুমিই তা উঠিয়ে নিবে। আমার জীবন-মৃত্যু তোমারই এখতিয়ারে। ইয়া আল্লাহ! যদি আমাকে মৃত্যুদান কর তাহলে ক্ষমা করে দিও আর যদি বাঁচিয়ে রাখ তাহলে (সর্বপ্রকার বালা-মুসিবত ও গুনাহ থেকে) আমাকে হেফাজত কর। ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি নিরাপত্তা। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫৫৪১)

 

ঘুমুবার সময় হেফাজতের দোয়া করা:

আল্লাহ তায়ালা তার হেকমত ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী কাফের মুশরিক, ফাসেক ফুজ্জারদের ও লালন পালন ও রক্ষনা বেক্ষন করে থাকে। একারণেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সালাম ঘুমোনোর সময় এই দোয়া করেছেন, আয় আল্লাহ, আমি যখন জাগ্রত হব, তখন আপনি আমাকে হেফাজত করুন, আপনি আপনার নেক বান্দাদেরকে যে ভাবে হেফাজত করেছেন, সেভাবে আমাকে হেফাজত করুন। অর্থাৎ, আমি যখন সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠব, এবং সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততায় প্রবেশ করব, সে সময় ও আপনি আমাকে হেফাজত করুন। আমার কদম যেন গুনাহর দিকে অগ্রসর না হয়। আমি যেন আপনার আনুগত্যে দৃঢ় থাকতে পারি।

 

যদি মৃত্যু এসে যায়:

আলোচ্য দোয়ার মোট বাক্য হলো, 

 

وإن امتها فاغفرلها وارحمها

 

অর্থাৎ: আয় আল্লাহ! আপনি যদি আমার ব্যাপারে এই ফয়সালা করে থাকেন যে, এই ঘুম থেকে আমি আর জেগে উঠব না, এই ঘুমেই আমার মৃত্যু এসে যাবে, তা হলে আয় আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার ওপর রহমত করুন। তাই তো রাত্রি কালে ঘুমুনোর সময় জীবন মরণ উভয় বাবদ রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন, বলুন কারো এই দোয়া যদি আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়ে যায়, জীবনে আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়, আর মরণের পর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে রহমত ও মাগফেরাত নসিব হয়ে যায়, তা হলে এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হতে পাড়ে।

 

ঘুমুনোর সময়কার অন্যান্য জিকির:

হাদিস শরিফে ঘুমুনোর সময় সূরা বাকারা এবং সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াতের অত্যন্ত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, এ ছাড়া রাতে ঘুমুনোর আগে সূরা মুলকের আমল জারি রাখলে, আল্লাহ তায়ালা তেলাওয়াতকারীকে কবরের আজাব থেকে হেফাজত করবেন, তা ছাড়া ঘুমুনোর সময় প্রতিদিন তাওবা ইসতেগফারও করবে, ঘুমুনোর সময়কার সর্বশেষ দোয়া সম্পর্কে রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এই দোয়া করার পর মুখে আর কোনো শব্দ উচ্চারণ করবে না, বরং এই দোয়া পড়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়বে, রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম একবার এক সাহাবিকে এই দোয়া সম্পর্কে বলেন, তোমরা যখন রাতে ঘুমুনোর উদ্দেশ্যে বিছানায় ডান কাতে শুবে তখন এই দোয়া পড়বে,

 

 

 

اللهم انى اسدمت نفسى إليك ووجهت وجهى إليك وفوّمذّت امرى إليك والجاْت ظهرى اليك لا ملجاْ ولا منجاْ منك إلا إليك اللهم ا منت بكتابك الذى اتلزلت وبنيك الذى ارسلت

 

সবকিছু আল্লাহর হাওলায়:

দেখুন মানুষের হাজার কিসিমের চাহিদা ও প্রয়োজন রয়েছে, সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমুনোর সময় সে চিন্তা করবে আগামিকাল কী হবে? কী করবেব? কী ভাবে উপার্জন করবেন? কোন পথে রুটি রুজি হবে? সন্তান সন্ততির কী অবস্থা হবে? এজাতীয় অসংখ্য চিন্তা কল্পনা মাথায় আসতে থাকে, অথচ এখন রাত, ঘুমুনোর সময় বিছানায় শুয়ে আছি, কিছু করার নেই, তাই এই সময় আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করবে, আয় আল্লাহ আমি আমার সকল বিষয় আশা আপনার হাওলা করছি, আগামীকাল যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হব, তাও আপনার হাওলা করছি, আয় আলাহ আমার সকল প্রয়োজনীয় কাজকর্মে কল্যানের ফায়সালা করুন।

 

ঘুমুবার আগে শেষ বাক্য:

ঘুমুবার আগে সর্বশেষে বলবে আয় আলাহ আমি আমার পিঠ আপনার অনুগত করে দিচ্ছি, আয় আল্লাহ আমি আপনার নাজিলকৃত কিতাবের ওপর ঈমান এনেছি, আপনার প্রেরিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান এনেছি, হজরত রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘুমুনোর পূর্বে এই শব্দ মালা হোক তোমদের আখেরি উচ্চারণ, এর পর ঘুমিয়ে পড়বে, আর কোনো শব্দ উচ্চারণ কর না, এর ফলে ইনশাআল্লাহ! তোমাদের ঘুমও ইবাদত বনে যাবে, এই অবস্থায় যদি ইন্তেকালও এসে যায় তা হলে ইনশাআলাহ! সোজা জান্নাতে চলে যাবে।

 

ঘুম না এলে:

বিছানা প্রস্তুত, শোয়াও হয়েছে, কিন্তু ঘুম আসছে না, এমন অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন, দোয়াটি হলো,

 

اللهم غادت النوم هدات العيون وانت حي قيوم يا حي يا قيوم اهدئ ليلى وانم عيني

 

হে আল্লাহ! নক্ষত্ররাজি ঢেকে গেছে, চক্ষু নিশ্চল হয়ে এসেছে, আপনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর, আয় চিরঞ্জীব ও অবিনশ্বর সত্তা, রাত্রিকে প্রশান্তিদায়ক বানিয়ে দিন, আর আমার চোখে ঘুম দান করুন, 

(মুজামুল কাবীর, ৫/৩৩। মাজমাউয-যাওয়ায়েদ, ৪/৩৯৭)

 

এসব দোয়া পড়ে নিলে, এর বরকতে আল্লাহ তায়ালা শয়তানের অনিষ্টতা থেকে হেফাজত করবেন, এসব দোয়া ও আমল রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা তার ফজল ও করম দয়া অনুগ্রহে আমদের সকলকে এসকল দোয়ার ওপর আমল করার তাওফিক দান করুর। আমিন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল