আমাজন জঙ্গলের সর্দারকে বিয়ে করলো বাংলাদেশের মেয়ে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ফিল্মমেকার ইকুয়েডরের ঘন জঙ্গলে শুটিং করতে গিয়ে বিয়ে করলেন সেই জঙ্গলের এক আদিবাসী সর্দারকে। ছোট্ট কুটিরে হইহই করে আদিবাসীরা বিয়ে দিলেন সারাহ-গিংকটোর। রীতি মেনে শরীর অনাবৃত করে শুরু হয় বিয়ের মন্ত্রোচ্চারণ। 

রাতভর চলে নাচ-গান। বীর যোদ্ধা গিংকটোকে বিয়ে করে সারাহ এখন আমাজন জঙ্গলের রানি। তাকে পরিয়ে দেয়া হয়েছে ম্যাকাও পাখির পালক দিয়ে তৈরি মুকুট। কোমরে বাঁধা পাখির পালকের ক্ষুদ্র পোশাক।

সারাহ জানিয়েছেন, বিয়ে না করলে তাদের মন জেতা সহজ ছিল না। তাই গিংকটোকে বিয়ে করেন সারা। অনাবৃত শরীরে বিবাহ অনুষ্ঠান হবে শুনে চমকে যান। গ্রামের সব পুরুষ-মহিলা কোনো পোশাক না পরে আমাদের বিয়ে দেখতে এসেছিল। এটাই ওদের রেওয়াজ। এক মহিলা যখন আমাকে নিরাবরণ করে দিল তখন মনে হচ্ছিল এক দৌড়ে ওখান থেকে পালিয়ে আসি।

গিংকটোকে বিয়ে করলে তবেই সারাকে ইকুয়েডরের ওই জঙ্গলে থাকার অনুমতি দেয়া হবে বলে জানান এক প্রবীণ আদিবাসী। অবশ্য 'ম্যানলি চেহারার গিংকটোর সঙ্গে ভাব হতে দেরি হয়নি সারার। 

সারাহ বলেন, শুধুমাত্র এদের চিনতে, জানতেই বিয়ে করেছি গিংকটোকে। তিন হাজার আদিবাসীর বাস আমাজনের এই জঙ্গলে। সভ্য মানুষ দেখলেই তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে তারা। এমন পরিস্থিতিতে আদিবাসীদের পরিবারের একজন হওয়ার সাহস দেখিয়ে নজির গড়েছেন সারা। সারাকে কখনো কেউ আক্রমণ করেননি।

সারার বেগম বলেন, ওদের ভাষা বুঝতে পারতাম না। গিংকটো অল্প স্প্যানিশ বলতে পারে। আমার ক্যামেরাম্যান স্প্যানিশ জানত। ওর সাহায্যেই গিংকটোর সঙ্গে গল্প করতাম। আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার খুব ইচ্ছা রয়েছে গিংকটোর। কিন্তু জঙ্গল ছেড়ে কিছুতেই বেরতে চায় না ও। 

তার জঙ্গল জীবনের কাহিনি নিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন তথ্যচিত্র। শিগগিরই তা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন সারা। গিংকটো ও জঙ্গলের জন্য মাঝে মাঝেই মন কেমন করে তার। সারা জানালেন, ফুরসত মিললেই স্বামীর কাছে ফিরে যাবেন।

১৪ বছর বয়সে একবার দাদা-দাদির সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসে ছিলেন সারাহ। দুই সপ্তাহের সেই সফর শেষমেষ ১৬ মাসে গিয়ে ঠেকেছিল। প্রকৃতিপ্রেমী এই তরুণী মজেছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃতিতে।

প্রকৃতির প্রতি সেই টানেই ছুটে গিয়েছিলেন আমাজানের গহীন জঙ্গলেও, পাঁচ বছর আগে লন্ডন থেকে দুই সপ্তাহের জন্য উড়ে গিয়েছিলেন তিনি।

ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য হুয়ারোনিদের বিশ্বাস অর্জনের প্রয়োজনেই সারাহ সেখানে বিয়ে করেছিলেন ওই গোত্রের সেরা শিকারী হিসাবে পরিচিত গিংটোকে, যার বয়স সারাহর দ্বিগুণের বেশি।

সারাহ জানান, এর আগে তাকে বিয়ের যোগ্যতাও অর্জন করতে হয়েছে। শিখতে হয়েছে কিভাবে বড় বড় ঘাস বুনতে হয় আর ব্লোপাইপ থেকে বিষাক্ত তীর ছুড়ে শিকার করতে হয়। হুয়ারোনি গোত্রের ‘বউ’ হওয়ার ঘটনাটিও যে মজার ছিল। 

সারাহ বলেন, আমাকে বয়স্করা বেশ পছন্দ করেছিল। আমাকে একটা কুঁড়েঘরে ডেকে নেয়া হয়, সেখানে যারা ছিল, তারা সবাই নগ্ন ছিল। আমাকে বলা হল, তাদের মতো করে কাপড় পরতে হবে, যা এক টুকরো গাছের ছাল দিয়ে তৈরি এবং শুধু কোমরে পেঁচিয়ে রাখা হয়।