• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

দারুণ জয়ে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৩  

চোখ ধাঁধানো জয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশ। রবিবার বিকেলে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে লাল-সবুজের দেশ। খেলার ধারার বিপরীতে হামজা মোহাম্মদের গোলে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়লেও উইঙ্গার রাকিব হোসেন, ডিফেন্ডার তারিক কাজী ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিনের গোলে মনে রাখার মতো জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আসরের একবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। মজার বিষয় হচ্ছে তিনজন গোলদাতাই বাংলাদেশের পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভাল খেলেও মুহূর্তের দুটি ভুলে ২-০ গোলে লেবাননের কাছে হার মানে বাংলাদেশ। ওই হারের কারণে সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না জামাল ভুঁইয়া-তপু বর্মণদের। যে কারণে ম্যাচের শুরু থেকেই দ্বীপদেশ মালদ্বীপের দূর্গে একের পর এক আক্রমণ শাণাতে থাকেন বাংলার ফুটবলাররা। কিন্তু খেলার ধারার বিপরীতে গোল করে মালদ্বীপ এগিয়ে গেলে ফের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়। তবে গোল হজম করার পর আরও তেতে ওঠেন বাংলার দামাল ছেলেরা। পুরো সময়ে দৃষ্টিনন্দর ফুটবলশৈলী উপহার দিয়ে তিন গোল আদায় করে অসাধারণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। 
এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দুই ম্যাচে একটি করে হার ও জয়ে ৩ পয়েন্ট গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে লাল-সবুজের দেশ। নিজেদের খেলা দুটি ম্যাচই জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে লেবানন। বুধবার ‘বি’ গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচে পর এই গ্রুপ থেকে কোন দুটি দল সেমিফাইনালে খেলবে সেটা নিশ্চিত হবে। ওইদিন বিকেলে লেবানন-মালদ্বীপ ম্যাচের পর রাতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ ভুটানের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে জিতলেই জামাল ভুঁইয়ার দলের সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে জয় যেন ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই মালদ্বীপকে হারিয়েই ২০০৩ সালে সাফের প্রথম ও একমাত্র শিরোপা জিতেছিল লাল-সবুজের দেশ।


এরপর এই প্রতিযোগিতায় আর মালদ্বীপকে হারাতেই পারছিলেন না সোনার ছেলেরা। মাঝে তিনবারের দেখায় সবগুলোতেই হারের স্বাদ পেতে হয়। সবশেষ ২০২১ সালের আসরেও হেরেছিল ২-০ গোলে। ২০ বছর পর সাফের আঙিনাতেই চোখ ধাঁধানো জয়ে খরা কাটিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে গেছে বাংলার ফুটবল। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-মালদ্বীপ মুখোমুখি হয়েছে ১৬ ম্যাচ। বাংলাদেশের সাত জয়ের বিপরীতে মালদ্বীপের জয় ছয় ম্যাচে। ড্র হয়েছে বাকি তিনটি ম্যাচ। অবশ্য এই ম্যাচের আগে শেষ পাঁচটি ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে মালদ্বীপ। মাত্র এক জয় বাংলাদেশের। অবশেষে ফিফা র‌্যাঙ্কিংরে ১৫৪ নম্বর দেশকে দুই দশক পর হারানোর স্বাদ পেয়েছে ১৯২ র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ। 
টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে শুরু থেকেই মালদ্বীপের দুর্গে হানা দিতে থাকে বাংলাদেশ। এর ফলে দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার আদায় করে নেয় ক্যাবরেরা বাহিনী। কিন্তু অধিনায়ক জামালের কর্নার থেকে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলার ছেলেরা। এরপর আরও কয়েকটি সুযোগ সৃষ্টি করেও জাল খুঁজে পাননি বাংলার ফরোয়ার্ডরা। উল্টো খেলার ধারার বিপরীতে ১৭ মিনিটে স্ট্রাইকার হামজা মোহাম্মদের গোলে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। হাসান হাইসামের পাস এক সতীর্থ বাড়িয়ে দেওয়ার পর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁকানো শটে বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোকে পরাস্ত করেন হামজা। আচমকা গোলে আরও চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

এরপর ম্যাচে ফিরতে একের পর এক আক্রমণ শাণাতে থাকে ক্যাবরেরার শিষ্যরা। ৩৩ মিনিটে তপু বর্মণ নিশ্চিত গোলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তবে ৪২ মিনিটে আর হতাশ হতে হয়নি। সোহেল রানার ক্রসে তপুর হেড থেকে হেডেই মালদ্বীপের জাল খুঁজে নেন রাকিব। ফলে ম্যাচে সমতা ফেরায় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরও দুটি সুযোগ হাতছাড়া হয়। 
বিরতির পর আরও গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। গতি ফেরাতে ৬২ মিনিটে তিনটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ ক্যাবরেরা। অধিনায়ক জামাল, সোহেল রানা ও গোলদাতা রাকিবকে তুলে নিয়ে শেখ মোরসালিন, মজিবুর রহমান জনি ও মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে মাঠে নামান কোচ। এরপর লেবানন ম্যাচের ভুলের ক্ষতে প্রলেপ দেন তারিক কাজী। ৬৭ মিনিটে ডি বক্সের জটলা থেকে তিনবারের চেষ্টায় বাংলাদেশকে এগিয়ে দেওয়া গোলটি করেন কিংসের এই ডিফেন্ডার। জাতীয় দলের হয়ে এ নিয়ে দ্বিতীয় গোল পেয়েছেন তারিক।


গত মার্চে সিশেলসকে ১-০ ব্যবধানে হারানো প্রীতিম্যাচে প্রথম গোল পেয়েছিলেন। ৭০ ও ৭১ মিনিটে যথাক্রমে শেখ মোরসালিন ও তপুর দুটি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক। ম্যাচের শেষ মিনিটে শেখ মোরসালিন বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করা গোলটি করেন। এই গোলের নেপথ্যের নায়ক ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত খেলা বিশ্বনাথ ঘোষ। প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে তিনি বাড়ান মোরসালিনকে। একজনকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় বা পায়ের কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন আগামীর এই তারকা।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল