• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

আসছে আবহাওয়ার অত্যাধুনিক পূর্বাভাস ব্যবস্থা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২২  

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু ষড়ঋতুর এই দেশে কয়েক বছর ধরে বর্ষাকাল থাকছে প্রায় বৃষ্টিহীন। পৌষ-মাঘ মাসেও জেঁকে বসছে না শীত। এর প্রভাব পড়ছে দেশের মানুষের উপার্জন থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক জীবনে। এ ক্ষেত্রে উন্নত আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থা মানুষের সহায় হতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অত্যাধুনিক ২২৫টি পূর্বাভাস কেন্দ্র তৈরি করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব কেন্দ্র চালু হলে ১০ মিনিট পরপর আবহাওয়া সম্পর্কিত পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য জানা গেলে প্রাণহানি ও কৃষি উৎপাদনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যাবে। এতে সামগ্রিকভাবে পুরো দেশে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পূর্বাভাসসেবার মান বাড়বে।

শুরুটা অবশ্য আগেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট সার্ভিসেস রিজওনাল প্রজেক্টের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ প্রকল্পেরই আওতায় সারা দেশে ২২৫টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৩৫টি অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন (এডব্লিউএস), ১২৫টি এগ্রিকালচালার অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন (এজিএডব্লিউএস), ৬৫টি অটোমেটিক রেইন গেইজ স্টেশন (এআরজি)।

আবহাওয়াবিদরা জানান, টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা রাজধানী ঢাকা ও বড় শহরগুলোর জনজীবন থমকে দেয়। তাই চারটি মহানগরে থাকছে রেইন গেইজ স্টেশন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় থাকছে ২৫টি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা। এসব স্টেশন থেকে রিয়েল টাইম বেসিসে বৃষ্টিপাতের তথ্য পেয়ে সিটি করপোরেশনগুলো পানি নিষ্কাশণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

এই প্রকল্পের সঙ্গে আরও যুক্ত রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই উদ্যোগের ফলে বন্যার আগাম তথ্য মিলবে জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, বন্য ও বৃষ্টিপাতের আপডেট তথ্য পেয়ে ফ্লাড ফোরকাস্টিং ও ওয়ার্নিংকে আমরা প্রভাইড করব। এতে বাংলাদেশ অঞ্চলভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশণ ব্যবস্থাপনা, ফ্লাড ফোরকাস্টিং এবং ফ্লাড জেনারেশন ম্যাপ আরও উন্নত হবে।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় তুলনামূলক বেশি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থাকবে। একইভাবে বজ্রপাত, নদীভাঙন-কবলিত এবং কৃষিনির্ভর অঞ্চলগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে যদি আবহাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের সকল জেলা, উপজেলায় আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করার একটি প্রচলন চালু হয়ে যাবে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পূর্বাভাস আরও সঠিকভাবে প্রদান ও ব্যাপকভাবে যাচাই করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, ২২৫টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ১৮৫টির নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে এগুলো পুরোদমে কাজ শুরু করবে।

সাগর থেকে মিলবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৩টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও বঙ্গোপসাগর থেকে আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায়ই একাধিক ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও থাইল্যান্ড গভীর সাগরে একাধিক পর্যবেক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করেছে।

বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পে বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার তিনটি স্থানে পর্যবেক্ষণ যন্ত্র ‘ওশান বয়’ স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে দ্রুত সাগরের আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে।

সার্বিক বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুদ্দীন আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তন চিহ্নিত করতে উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য এখন নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি এসেছে। এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়া দরকার। আবার যতটা সম্ভব সঠিক পূর্বাভাস দ্রুত জানানোর প্রয়োজন রয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট সার্ভিসেস রিজওনাল প্রজেক্টের কাজ চলছে। এর ফল পেতে আরও দুই বছর সময় লাগবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল