• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

এক যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মব্যবসায়ী “দেলোয়ার হোসেন সাঈদী”

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৩  

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় রবিবার সেখান থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনা হয়।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। ৮০ বছর বয়সী সাঈদী তার আগে থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো ২০টি মানবতাবিরোধী ঘটনার অভিযোগ আনা হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে।

দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এক যুদ্ধাপরাধী এবং ধর্মব্যবসায়ীর নাম। একসময়ে পিরোজপুরের মুদি দোকানদার থেকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর হন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়া প্রত্যাশিত হলেও যাবজ্জীবন হয়েছে। সম্প্রতি তার মুক্তি নিয়ে জামাত শিবিরের প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে। সাইদীকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। যেকোনো প্রতারককে হার মানানো এই সাইদীকে তুলে ধরা হয় আলেম হিসেবে! আসুন দেখি এই ভন্ড দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ওরফে দেউল্যা রাজাকারের আলেম এর ঝলক।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জন্ম ১লা ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম কর্তৃক প্রকাশিত ৫০ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর তালিকার চার নম্বরে স্থান পায় এই রাজাকারের নাম।যাকে অনেকে দেউল্লা রাজাকার বলেও চিনেন।বিশেষ করে তার এলাকার লোকজন এই “দেউল্লা রাজাকার” নামটির সাথে বিশেষ পরিচিত। কিন্তু লোকটির কথা বলার কৌশলের মাধ্যমে অনেক মানুষের কাছেই ইতিমধ্যে একজন উঁচু মানের মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তার পুরোটা জীবনই সে পার করেছে ভন্ডামি করে। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা থেকে শুরু করে ওয়াজে ভাড়াটে মানুষ দিয়ে হিন্দু থেকে মুসলমান করার নাটক করা কি সে করেনি! ২০০১ এর নির্বাচনে সে পিরোজপুর হতে (!) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। তখন পিরোজপুরে সে যুদ্ধাপরাধী নয় এই মর্মে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছিল। এছাড়াও সংখ্যালুঘু হিন্দু সম্প্রদায় এবং আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর তার অত্যাচারের কাহিনী আমরা ভুলে গেলেও তারা ঠিকই মনে রেখেছে।তখন ব্রিটিশ মিডিয়া যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সাঈদীর ভিসা বাতিলের অনুরোধ করেছিল।
সে ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হবার আগে দেশ থেকে ভাগার চেষ্টা করার সময় তার দেশত্যাগের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। অতপর ২০১০ সালের ২৯শে জুন ঢাকার শাহীনবাগের বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
১৪ জুলাই ২০১১ তারিখে তার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ উপস্থাপন করেন প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা। আদালত অভিযোগ গঠন করে ১০ আগষ্ট।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী তার এলাকায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠনে প্রত্যক্ষ ভুমিকা রাখে এবং তাদের প্রত্যক্ষ ভাবে সহযোগীতা দেয়। তখন নামের আগে মাওলানা উপাধী লাগিয়ে নেয় এই ভন্ড। সে একাত্তরে খুন, লুটতরাজ, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ সহ আরো অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ আছে। তার প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষে থাকা হিন্দুদের বাড়িঘর জোর করে দখল এবং লুটতরাজ করে অগিসংযোগের।
সাইদী নিজে এই লুটপাটে উপস্থিত থাকতো এবং লুটের মালকে গনিমতের মাল আখ্যা দিয়ে হাটে বন্দরে বিক্রি করতো এবং নিজে ভোগ করতো। পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাপ্টেন আজিজের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল এবং সে এই পাকিস্তানিদের কে নিয়মিত সুন্দরী মেয়ে সরবরহ করতো। এই মেয়েদের সবাই তার ফতোয়া মতে ছিল গনিমতের মাল।
এছাড়া জনপ্রিয় উপন্যাসিক ও নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদের বাবা তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান কে হত্যার সাথে সাঈদী জড়িত ছির বলে অভিযোগ করেছেন সাহিত্যিক ড.মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং শহীদের মেয়ে সুফিয়া হায়দার। তারা জানান যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সহায়তায় তাদের বাবা ফয়জুর রহমানকে পাকিস্তানী সেনারা হত্যা করে এবং পরদিন তাদের বাড়িটি সম্পূর্ণ লুট করে নিয়ে যায় সাঈদী।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এছাড়া যুদ্ধের সময় সাবেক ইপিআর সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজীজ কে সাঈদীর সহায়তায় নির্মম ভাবে হত্যাকরা হয় বলে ও অভিযোগ আছে।
মানিক পশারি ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট পিরোজপুরে সাঈদীসহ আরো চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মানিক পশারি অভিযোগ করেন যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নেতৃত্বে তাদের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছিল এবং বাড়ির তত্ত্বাধায়ককে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়া আরো একটি মামলা পিরোজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তার বিরুদ্ধে দায়ের করেন মহিউদ্দীন আলম হাওলাদার নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা।

এক নজরে দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর অপকর্ম:
একাত্তরের ৪ মে মধ্যম মাছিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে জমায়েত হওয়া ২০ জন নিরীহ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা।
একইদিন মাছিমপুর হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ চালিয়ে বিজয় কৃষ্ণ মিস্ত্রী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী, সুরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী, মতিলাল মিস্ত্রী, যজ্ঞেশ্বর মন্ডল, সুরেন মন্ডলসহ ১৩ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা
একইদিন ধোপাবাড়িরে সামনে দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল, খগেন্দ্রনাথ, পুলিন বিহারী, মুকুন্দ বালাকে হত্যা।
৫ মে পিরোজপুরের এসডিপিও ফয়জুর রহমান আহমেদ, এসডিও মো. আব্দুর রাজ্জাক, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাঈফ মিজানুর রহমানসহ কয়েকজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা।
২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে আন্ধাকুল গ্রামের বিমল হাওলাদারের ভাই ও বাবাকে ধরে কুড়িয়ানা হাইস্কুল ক্যাম্পে নিয়ে তাদেরসহ ২৫০০/৩০০০ নিরীহ বাঙালিকে কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানে নিয়ে হত্যা।
২৫ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ের যে কোনো এক দিন হোগলাবুনিয়া গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে তরণী সিকদার ও তার ছেলে নির্মল সিকদার, শ্যামকান্ত সিকদার, বানীকান্ত সিকদার, হরলাল কর্মকার, মাইঠভাঙ্গারের প্রকাশ সিকদারসহ ১০ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া।
৪ মে হতে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাড়েরহাটে আক্রমণ করে হরলাল মালাকার, অরকুমার মির্জা, তরণীকান্ত সিকদার, নন্দকুমার সিকদারসহ ১৪ হিন্দুকে রশিতে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাছাউনীতে নিয়ে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া।

সাঈদীর(দেইল্লা রাজাকার) ধর্ষণের ইতিহাসঃ
হোগলাবুনিয়া গ্রামের মধুসুধন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ:
১ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে হোগলাবুনিয়া গ্রামের মধুসুধন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে আটক করে ধর্ষণ দেইল্লা রাজাকার পিরোজপুরের ৮১ বছর বয়সী মধুসুধন ঘরামী দেইল্লা রাজাকার সম্পর্কে যে সাক্ষ্য দেয় তাক গা শিউরে ওঠার মত। মধুসুধন বলেন, “সে দিন আমি বাড়ি ফেরার পর আমার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বল্ল, যে তুমাকে মুসলমান বানিয়েছে সে দেইল্লা রাজাকার এসেছিল। আমাকে ধর্ষণ করেছে। এই যন্ত্রণা আমি আর সইতে পারছি না, তুমি পালাও, আমার কথা ভেবনা।’’
ধর্ষণের শিকার বেদনার্ত স্ত্রীর কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরে মধুসুধন। এবং এক সময় বলে বিগত ৮০ বছর ধরে আমি এই বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছি। কুছুদিন পরে আমার স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পরে, তাঁর একটা কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু লোকের কানাঘুসার অপমান সইতে না পেরে আমার স্ত্রী ওই কন্যাটাকে নিয়ে একদিন ভারতে চলে যায়। সে এখন আর ফিরে আসেনি”।
২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে উমেদপুর পাড়েরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার তিন বোন মহামায়া, অন্যরাণী ও কমলা রাণীকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ।
৩ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে নিজ বাড়িতে আটকে নিয়মিতভাবে ধর্ষণ।
এছাড়া ২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পাড়েরহাট বন্দরের কৃষ্ট সাহাকে হত্যার পর তার মেয়েসহ হিন্দুপাড়ার অসংখ্য নারীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা।
২৫ জুন হতে ৩১ জুনের মধ্যে মধুসুদন ঘরামী, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ন সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, হরিলাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, জুরান, ফকির দাস, জোনা দাসসহ ১০০/১৫০ জন হিন্দুকে জোর পূর্বক ধরমান্তর করায় দেইল্লা রাজাকার ও তাঁর বাহিনীরা।
তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য:
পাড়ের হাট বন্দরের মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের জুন মাসের শেষের দিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের রেশন সংগ্রহ করতে গেলে দেখেন পিরোজপুর শান্তি কমিটি ও রাজাকার নেতাদের সেদিন পাকিস্তানি দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল দোলোয়ার হোসেন সাঈদী, সেকান্দার শিকদার, মোসলেহ উদ্দীন, দানেশ মোল্লা এরা। তিনি আরো জানান, সাঈদী এবং তার সহযোগীরা ইপিআর সুবাদার আব্দুল আজিজ, পাড়েরহাট বন্দরের কৃষ্ণকান্ত সাহা, বাণীকান্ত শিকদার, তরুণীকান্ত শিকদার এবং আরো অনেককে ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সাঈদী হরি সাধু ও বিপদ সাহার মেয়েদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। বিখ্যাত তালুকদার বাড়ি লুট করে। ওই বাড়ি থেকে ২০/২৫ জন মহিলাকে ধরে পাকিস্তানীদের ক্যাম্পে পাঠায়।
পাড়ের হাট ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিয়ন কমান্ডারের মিজান ১৯৮৭ সালে মাসিক নিপুন পত্রিকায় অভিযোগ করেছিলেন “ দেলোয়ার হোসেন সাঈদী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় লিপ্ত ছিল। সে ধর্মের দোহাই দিয়ে পাড়েরহাট বন্দরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি লুট করে। মদন নামের একজন হিন্দু ব্যবসায়ীর বাজারের দোকান ঘর ভেঙ্গে নিজের বাড়ি নিয়ে যায়।দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর অপকর্ম ও দেশদ্রোহিতার কথা এলাকায় হাজার হাজার হিন্দু-মুসলমান আজও ভুলতে পারেনি।”
১৯৯৩ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের গণতদন্ত কমিশনকে পিরোজপুর এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক খান জানিয়েছিলেন যে সাঈদী যুদ্ধের সময় পাড়ের হাট বন্দরের বিপদ সাহার বাড়ি জোরপুর্বক দখল করে সেখানেই বসবাস করতো। এখান থেকেই সে যাবতীয় স্বাধীনতা বিরোধী কাজ পরিচালিত করতো। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদ্যদের তালিকা প্রস্তুত করে পাকিস্তানী সেনদের সরবরাহ করতো সে। তিনি আরো জনিয়েছেন যে সাঈদী পিরোজপুরের পাকিস্তানী সেনাদের জন্যে জোরপুর্বক মেয়েদের ধরে এনে তাদের ক্যাস্পে পাঠাতো। বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণদের ধরে এনে সে রাজাকার ও আল বদর বাহিনীতে ভর্তি করাতে বাধ্য করতো।
পিরোজপুরের এডভোকেট আলী হায়দার খান ও সাঈদীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনছেন। তিনি জানিয়েছেন ‘সাইদীর সহায়তায় তাদের এলাকার হিমাংশু বাবুর বড় ভাই ও আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হয়। পিরোজপুরের মেধাবী ছাত্র গণপতি হালদারকে সাঈদী ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। তখনকার মহকুমা এসডিপিও ফয়জুর রহমান (সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ও মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বাবা), ভারপ্রাপ্ত এসডিও আব্দুর রাজ্জাক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান, স্কুল হেডমাস্টার আব্দুর গফফার মিয়া, সমাজসেবী শামসুল হক ফরাজী, অতুল কর্মকার প্রমুখ সরকারি কর্মকর্তা ও বুদ্ধিজীবীদের সাঈদীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় হত্যা করা হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সরবরাহকারী ভগিরথীকে তার নির্দেশেই মটর সাইকেলের পিছনে বেঁধে পাঁচ মাইল পথ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।
পাড়ের হাট ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দীন খান জানিয়েছেন সাঈদীর পরামর্শ, পরিকল্পনা ও প্রণীত তালিকা অনুযায়ী এলাকার বুদ্ধিজীবি ও ছাত্রদের নির্মম ভাবে পইকারি হারে হত্যা করা হয়।
ইন্দুরকানি থানার আনোয়ার আহমেদ জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পিরোজপুরের নিখিল পালের বাড়ি দখল করে তা পিরোজপুর জামে মসজিদের গনিমতের মাল বলে ঘোষনা দেয়। মদনবাবু নামের একজনের বাড়ি লুট করে টিনের চালা খুটি সহ যাবতীয় সবকিছু তার শ্বশুড়বাড়িতে স্থাপন করে সাঈদী।

তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমেদ হওলাদার কি বলেছে শুনুন- ‘এক হিন্দু মেয়েকে সাঈদী ও রাজাকার মোসলেম মওলানা নিয়মিত ধর্ষন করতেন।’ এছাড়া তার লুটতরাজ ও খুনের বর্ণনা তো দিয়েছেনই।

পাঁচ তহবিল: প্রসিকিউশনের উপস্থাপিত আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয় পিরোজপুরে সাঈদী এবং আরও চার রাজাকার মিলে একটি দল গঠন করে।, যা পাঁচ তহবিল নামে পরিচিতি ছিল। এই দলের অন্যান্য সদস্য ছিল দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মাওলানা মোসলেমউদ্দীন ও হাবিুর রহমান মুন্সি। আরবী ও ঊর্দু ভাষায় কথা বেলতে পারার কারণে পাকিস্তানী সেনাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব ছিল সাঈদীর।এই সুযোগে সে পাকি সেনাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়। অভিযোগে বলা হয় ওই পাঁচজন লুটপাট করে পাওয়া স্বর্ণালঙ্কার এবং অর্থসম্পদ ‘গনিমতের মাল’ ঘোষনা দিয়ে ভাগ করে নিতো।
 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল