• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছড়াছড়ি

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৩  

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সরব হয়ে উঠছে খুলনার রাজনীতির ময়দান। সরকারি দল বনাম বিরোধী দলের পাল্টাপল্টি কর্মসূচি আর একে অপরের প্রতি বিষোদ্গারে কেউ কাউকে এতটুকু ছাড় দিচ্ছে না। এর মধ্যে বিরোধী দলের দাবিও কম নয়। এসবের মধ্য দিয়েই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে বইছে ভোটের হাওয়া। কে হচ্ছেন কোন দলের প্রার্থী; তা নিয়েও এখন চায়ের কাপে ঝড়। অপরদিকে দলীয় কর্মসূচিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আনাগোনা যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে এককভাবে নানা কার্মসূচিও। দলীয় সরকারের উন্নয়ন প্রচার, মতবিনিময়, উঠান বৈঠক, জনসভা কিংবা পথসভা। শুভেচ্ছার ব্যানার আর পোস্টারে ভরে গেছে খুলনার অলিগলি।

দেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ এ জেলার একদিকে প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। অন্যদিক বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল ও গোপালগঞ্জ জেলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। একটি সিটি করপোরেশন ও নয়টি উপজেলা নিয়ে খুলনা। এর মধ্যে দুইটি পৌরসভা ও ৬৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। রয়েছে

ছয়টি সংসদীয় আসন।

আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপির প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, অনশনসহ নানা কর্মসূচি চলছে খুলনায়। এর ফলে বোঝা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছে তারা। আর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোও দলীয় কর্মসূচির বাইরে নানা ছক কষছেন। আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে অনেকেই প্রার্থী হতে চাইছেন। আর বিএনপির পরিকল্পনা ক্ষমতাসীন দলের কোন্দল কাজে লাগিয়ে আসনগুলো পুনরুদ্ধার করা।

খুলনা-১ ॥ আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি ও স্বস্তির জায়গা খুলনা-১ আসন। ভোটারদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আধিক্য থাকায় আসনটি কখনো হাত ছাড়া হয়নি বর্তমান ক্ষমতাসীনদের। খুলনা শহর সংলগ্ন বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চালনা পৌরসভা নিয়ে খুলনা-১ আসন। আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন হওয়ায় এখানে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। তবে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন ও নোনা পানির সঙ্গে বসবাস করা মানুষের আক্ষেপেরও শেষ নাই।

এই আসনের বর্তমান এমপি হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস। এর আগে ১৯৯১ সালে এই আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুনুর রশিদ। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। তবে সেবার দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন তিনি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন শেখ হারুনুর রশিদ। বলা হয়, হিন্দু ধর্মালম্বীদের মুখপাত্র হিসেবেই পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপরে ২০০১ ও ২০১৪ সালে পঞ্চানন বিশ্বাস এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৮ সালে এমপি হন ননীগোপাল ম-ল। গতবার নির্বাচনের ময়দানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়, সিপিবির অশোক কুমার সরকার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু সাঈদ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রায় এক ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ময়দানে। এর মধ্যে বর্তমান এমপি পঞ্চানন বিশ্বাস, সাবেক এমপি ননীগোপাল মন্ডল, সংরক্ষিত নারী এমপি গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বিসিবির পরিচালক ও বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সোহেল, দাকোপ আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন, বটিয়াঘাটা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল, ভারত বিচিত্রার সাবেক সম্পাদক নান্টু রায়, সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়, চালনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ড. অচিন্ত্য কুমার ম-ল এবং দাকোপ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ রায়।

তবে এই আসনে বলতে গেলে একক প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে বিএনপি। ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে পরাজিত হলেও লেগে থেকে এই আসনে বরাবরই নির্বাচন করেন খুলনা জেলা শাখার বর্তমান আহ্বায়ক আমির এজাজ খান। এ ছাড়া এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপার প্রার্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। আর সিপিবির জেলা সম্পাদকম-লীর সদস্য ও বটিয়াঘাটা উপজেলার সভাপতি অশোক কুমার সরকার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ গতবারের মতোই প্রার্থী হচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

খুলনা-২ ॥ সিটি করপোরেশনের ১৬ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে খুলনা-২ আসন। বলা হয় সংসদ নির্বাচনে জেলার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসন এটি। মেট্রোপলিটনের সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা এবং লবণচরা ও হরিণটানা থানার কিছু অংশ রয়েছে এই আসনের মধ্যে। আন্দোলন, সংগ্রাম থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোও এই সংসদীয় এলাকায়। ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লক্ষ্য থাকে এ আসনটি দখলের।

এক সময়ে মুসলিম লীগের আস্তানা হিসেবেখ্যাত ছিল আসনটি। পরবর্তীতে একটানা বিএনপির দখলে ছিল। সর্বশেষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করলে ১৯৭৩ সালের পর আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। এমপি হয়েছিলেন মহানগর শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। বর্তমানে আসনটির সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শহিদ শেখ আবু নাসেরের মেঝো ছেলে সেখ সালাহ্উদ্দিন জুয়েল।

২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন। পরে তার ছেড়ে দেওয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছিলেন বিসিবির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আলী আসগার লবী। তারও আগে ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী বিএনপির টিকিটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রথম সরব হন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। এ আসন থেকে তিনি আবারও প্রার্থী হচ্ছেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

অন্যদিকে, বিএনপি থেকে নাম আসছে বর্তমান নগর কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন এবং সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। খুলনায় বিএনপির যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে এক সময় রাজপথে সামনের সারিতে দেখা যেত মঞ্জুকে। ৩০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মধ্যে এক যুগ বিএনপি খুলনা নগরের সভাপতির ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন রেখেছিলেন। কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের আগে ঘুচবে সকল মান-অভিমান।

আর জাপা থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের মহানগরের আহ্বায়ক মহানন্দ সরকার কিংবা যুগ্ম আহ্বায়ক অচিন্ত্য কুমার দাস। সিপিবি থেকে নাম শোনা যাচ্ছে দলের খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি শ্রমিক নেতা এইচএম শাহাদাৎ। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়াবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল এবং জাকের পার্টি ও অন্যান্য দল থেকেও প্রার্থী হতে পারেন।

খুলনা-৩ ॥ ভৈরব নদের তীর ঘেঁষা খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ বিভিন্ন মিল বন্ধ, বকেয়া মজুরি ও শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি দাওয়া নিয়ে প্রায়ই উত্তপ্ত হয় এ এলাকা। খুলনার বিসিক শিল্প নগরীও এই সংসদীয় এলাকায়। তাই যে কোনো নির্বাচন, রাজনীতিতে শ্রমিকরা বড় ফ্যাক্টর। স্বাধীনতার পর থেকে আসনটি ভাগাভাগি হয়েছে বারংবার। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিল সাবেক হুইপ বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন। এরপর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সর্বশেষ তিন সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ও বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শহীদ আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিসেবে বর্তমান এমপি বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান সর্বজন গ্রহণযোগ্য। তবে মন্ত্রী থাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দৌলতপুর থানা কমিটির সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী এবং নগর আওয়ামী লীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক শেখ আরিফ হোসেন হিটলু মনোনয়ন প্রত্যাশী। আর সুযোগ পেলে প্রার্থী হতে চান যুবলীগ নগর শাখার সদস্য সচিব শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনও।

অপরদিকে, আসনটি পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন থাকায় এ আসনের জন্য বিএনপির কা-ারী মনে করা হয় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলামও নির্বাচন করতে প্রস্তুত।

আর জাপা থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের মহানগর শাখার সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন অথবা কেন্দ্রীয় শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নগর শাখার নির্বাহী সদস্য শেখ হাসান ওবায়দুল করিম এবং বাসদের জেলার আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু প্রার্থী হওয়ার তালিকায় রয়েছে।

খুলনা-৪ ॥ ভৈরব-রূপসা-আঠারোবেঁকি-আতাই নদীর পাড় ঘেঁষা রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া (আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন ব্যতীত) উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নিয়ে খুলনা-৪ আসন। মুসলিম লীগ নেতা ও যুদ্ধাপরাধী খান এ সবুরের প্রভাবাধীন এই এলাকায় ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা প্রথমবারের মতো জয়লাভ করেন। সেই থেকে পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। তবে ভোটের ব্যবধান কম থাকে। যে কারণে বিএনপিও এই আসনটিকে নিজেদের বলে মনে করে।

নব্বইয়ের পর অনুষ্ঠিত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চারটিতে আওয়ামী লীগ এবং বাকি দুটিতে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালেও নির্বাচিত হন এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা। ভাইজান নামে খ্যাত প্রয়াত এই নেতা খুলনা জেলা শাখার দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী এম নূরুল ইসলাম দাদু ভাই এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোল্লা জালাল উদ্দিন জয়লাভ করেন। মোস্তফা রশিদী সুজা ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই মারা যাওয়ায় হঠাৎ করেই রাজনীতিতে আসেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক তারকা ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী। উপনির্বাচনে প্রার্থী না থাকায় তিনি এমপি হন। এরপর একাদশ নির্বাচনে এমপি হন আবদুস সালাম মুর্শেদী।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান এমপি আবদুস সালাম মুর্শেদী, খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাপুত্র এসএম খালেদিন রশিদী সুকর্ন, যুবলীগের নগর শাখার সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ এবং জেলা আওয়ামী  লীগের সহসভাপতি শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু।

অন্যদিকে, বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। যিনি খুলনার রাজনীতিতে বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ। এছাড়া জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম বা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম হাদিউজ্জামান প্রার্থী হতে পারেন। অপর দিকে, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদের প্রার্থিতা এক ধরনের নিশ্চিত। আর বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির কেএম আলী দাদ আবারও নির্বাচন করতে পারেন।

নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। এর আগেও তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি।

খুলনা-৫ ॥ খুলনা সিটির নিকটবর্তী দুই উপজেলার একটি ফুলতলা, যার একাংশ জুড়ে শিল্প কল-কারখানা। অন্যটি ডুমুরিয়া, কৃষি পণ্য উৎপাদনের দিক দিয়ে যার পরিচিতি বরাবরই। ডুমুরিয়ার ১৪টি ও ফুলতলার চারটিসহ ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে খুলনা-৫ আসনের অবস্থান। রাজনৈতিক দিক দিয়ে আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণে এখানে আওয়ামী লীগের অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিপরীতে, বিএনপিও মনে করে এই আসনে তাদেরও জয়লাভ করার সামর্থ্য রয়েছে।

দীর্ঘদিন এই আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন প্রয়াত নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আইনজীবী সালাহউদ্দিন ইউসুফ। ১৯৯১ সালে তিনি প্রথম আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন। যিনি বঙ্গবন্ধুর সরকারেও মন্ত্রী ছিলেন। আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এমপি নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে দপ্তরবিহীনমন্ত্রী থাকার সময় মৃত্যুবরণ করলে শূন্য আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে চার হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিএনপি-জামায়াতের জোটপ্রার্থী অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ার।

আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পরাজিত করেন জামায়াতের পারওয়ারকে। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াত নির্বাচনে না এলে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ আবার এমপি হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার ধানের শীষের (জামায়াত) পারওয়ারকে পরাজিত করেন তিনি। এর আগে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বিএনপি-জামায়াতের জোটগত নির্বাচন হলে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও জোট প্রার্থীর মধ্যে। অন্যথায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দৈনিক প্রবর্তন সম্পাদক মোস্তফা সরোয়ার, ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. মাহাবুব-উল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অজয় সরকার। তবে হঠাৎ করেই গণসংযোগ শুরু করেছেন দলের মহানগরীর সদর থানার সভাপতি, আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। অন্যদিকে, বিএনপি হতে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএমএর সাবেক সভাপতি ডা. গাজী আব্দুল হক। তবে প্রার্থী হতে পারেন জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারওয়ার। যিনি বর্তমানে নাশকতা মামলায় কারাগারে।

খুলনা-৬ ॥ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতা, নদীভাঙন, লবণাক্ততাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করতে হয় খুলনা উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছা ও কয়রার মানুষের। কয়রার সাতটি ও পাইকগাছার ১০টিসহ ১৭টি ইউনিয়ন এবং পাইকগাছা পৌরসভা নিয়ে এই আসনের সীমানা। খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এই আসনে। নির্বাচন এগিয়ে আসতেই সরব হয়ে উঠছে এলাকা। তবে সব দলের প্রার্থী থাকলেও বিগত নির্বাচনগুলোর মতো আগামী নির্বাচনেও এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হবে বলে সাধারণ ভোটারা মনে করছেন।

১৯৯১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ্ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শেখ মো. নুরুল হক, ২০০১ সালে চারদলীয় জোট প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ শাহ্ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সোহরাব আলী সানা এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের শেখ মো. নূরুল হক বিনা ভোটে এমপি হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয় লাভ করেন আওয়ামী লীগের আক্তারুজ্জামান বাবু।

আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা গোপনে দৌড়ঝাঁপ করছেন। যার মধ্যে আছেন বর্তমান এমপি জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক এমপি সোহরাব আলী সানা, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান জামাল, সাবেক এমপি মরহুম শেখ মো. নুরুল হকের পুত্র জেলার শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলাম রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী প্রেম কুমার ম-ল, কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী জিএম মাহবুবুল আলম এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. শেখ মো. শহীদুল্লাহ। এ ছাড়া আছেন কয়রা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মহসিন রেজা, কেন্দ্রীয় অর্থ উপকমিটির সদস্য সাইফুল্লাহ আল মামুন, পাইকগাছা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল এবং পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর। তবে সবাইকে ছাপিয়ে এ আসনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

অপরদিকে, বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে চান মহানগর শাখার আহ্বায়ক আইনজীবী এসএম শফিকুল আলম মনা, জেলা শাখার সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মো. রফিকুল ইসলাম, পাইকগাছা উপজেলার সাধারণ সম্পাদ ও সাবেক সোলাদানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক, কয়রা উপজেলার সাবেক সভাপতি মোমরেজুল ইসলাম এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু।

আর বিএনপি জোটের শরীক জামায়াত ইসলামীও কৌশলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রার্থী হতে চান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া একক প্রার্থী হিসেবে জাপার জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, সিপিবির শেখ আব্দুল হান্নান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সেক্রেটারি হাফেজ আসাদুল্লাহ আল গালিব নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও পাইকগাছা উপজেলার আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল