• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

বন্যা নিয়ন্ত্রণে ব্রহ্মপুত্রের পূর্বাভাস জানাবে চীন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৪  

বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণে বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাভাস জানাবে চীন। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদের অর্ধেক অংশ রয়েছে চীনে। বাকি অর্ধেক বাংলাদেশ ও ভারতে। ফলে উজানের পানিতে দেশে বন্যা হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ জন্য চীনের পূর্বাভাস পেয়ে বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বন্যা মৌসুমে ইয়ালুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদের জলীয় তথ্য সরবরাহসংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওই) সই হবে। এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এখন চীন সরকার সময় দিলে আগামী জুলাই মাসে চীনে এই চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জুলাই মাসে চীন সফরে যেতে পারেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা গত মঙ্গলবার চীন সফরে গেছেন। তাঁরা ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাভাসসংক্রান্ত চুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা শেষে দেশে ফিরবেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে পাঁচ বছরের জন্য এসংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৪ জুলাই। এবার পুনরায় এ চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের চুক্তিও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চীনে সম্পন্ন হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ায় আমরা চার থেকে পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশের বন্যার তথ্য দিতে পারি। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদের অর্ধেক অংশ চীন থেকে এসেছে। তাই এই নদের উজানের পানি চীনের তথ্যের ওপর নির্ভর করে।’ তিনি বলেন, পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতিমালা, প্রবিধান, গবেষণা, উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা করতে এই সমঝোতা ভূমিকা রাখে। সমঝোতা স্মারকের এবারের খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পানি ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমন্বয় সাধন করা হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিঘটিত দুর্যোগ হ্রাস, নদী শাসনে কাজ করবে। ইয়ালুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। সমতা এবং ন্যায়ানুগতার ভিত্তিতে এই অঞ্চলের সীমান্ত নদীগুলোর পানিসম্পদের ব্যবহার এবং সংরক্ষণ করা হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে চীনের তিনটি স্টেশন। বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু চীন পূর্বাভাস দিলে আমরা আগেই প্রস্তুতি নিতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে চীনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল। তাদের সঙ্গেও বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটি আমাদের ওয়ার্নিং সেন্টার, হাইড্রোলজিক্যাল স্টেশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্প পরিদর্শন করে।’ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য ও উপাত্ত বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৬ সালের জুন থেকে চীনের নুক্সিয়া, নুগেশা ও ইয়াংকুন স্টেশনের বন্যাসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশকে সরবরাহ করছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সম্প্রতি সচিবালয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেন, চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০০৫ সালে পানিসম্পদের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এর পর থেকে উভয় দেশ বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্যোগ হ্রাস ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একাধিক বাস্তবসম্মত সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের উন্নয়ন অংশীদারি দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল