• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

দৃষ্টিহীনদের জন্য বইমেলায় ভিন্ন আয়োজন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশনের স্টলে বড় হরফে লেখা- ‘মানুষ মূলত দৃষ্টিহীন বলে অন্ধ নয়, মানুষ প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ।’
দৃষ্টিহীনদের বই পড়ার জন্য কোড সদৃশ ‘ব্রেইল ডট’ স্পর্শ করার মাধ্যমে বই পড়ার পদ্ধতি নিয়ে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশন’। এই পদ্ধতির আওতায় প্রত্যেক অক্ষরের জন্য রয়েছে আলাদা ব্রেইল ডট, যা স্পর্শ করে দৃষ্টিহীনরা বুঝতে পারবে এটা দ্বারা কোন অক্ষর বোঝানো হচ্ছে। এজন্য কোন ডট দ্বারা কোন অক্ষর বোঝানো হচ্ছে, তা শিখে নিতে হবে আগে। 

জানা গেছে, বইমেলায় ‘স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশন’ প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে ২০১১ সালে। তারা প্রথম একটি ছড়ার বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছিল। বাংলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রকাশিত প্রথম এই ব্রেইল বইটির নামটি ছিল ‘ছড়ার তালে মনটা দোলে’। এর পরই গল্পগ্রন্থ ‘বিনির সাথে পুতুল বিয়ে’ ব্রেইল পদ্ধতিতে রূপান্তর করে তারা। দুটি বইয়েরই লেখক ও প্রকাশক উক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন। 

প্রায় ১৫ বছরের পথচলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ১৩১টি গল্প, কবিতা ও উপন্যাস ব্রেইলে রূপান্তর করেছে। আর, এ বছরের বইমেলায় নতুন বই এনেছে ৩০টি। ২০১০ সালে ব্রেইল পদ্ধতিতে পবিত্র কুরআনের অনুবাদ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে। এছাড়াও ধর্মীয় গ্রন্থ ‘নৈতিক চরিত্র গঠনে কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা’ বইটিও স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়। 

জানা গেছে, সংগঠনটির রেজিস্ট্রেশনকৃত পাঠকের সংখ্যা ২৫০ জন দৃষ্টিজয়ী। বইমেলায় পাঠক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৭০ জন। স্টলে থাকা সেচ্ছাসেবীরা জানান, প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ জন দৃষ্টিজয়ী তাদের স্টলে আসছেন এবং বই পড়ছেন।  

স্পর্শ ব্রেইলের স্টলের সামনে দেখা মেলে মহসিনা আক্তার নামক ‘দৃষ্টিজয়ী’ এক তরুণীর। অক্ষর ছুঁয়ে বইয়ে লেখা বাণী বোঝার চেষ্টা করছিলেন তিনি। স্পর্শের মাধ্যমে জ্ঞান আহরোণ করছিলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। সুযোগ পেলে তারাও অনেক কিছু করে দেখাতে পারে। এজন্য সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো দরকার।

সেখানে কথা হয় সংগঠনের সেচ্ছাসেবী ইমরুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দৃষ্টিজয়ী মনে করি। যখন কোনো পরিবারে দৃষ্টিশক্তিহীন সন্তান জন্ম নেয়, তখন আমরা তাদের পরিবারের মানসিক কাউন্সেলিংও করে থাকি। যেন তারা ভেঙে না পড়ে৷ 

স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন বলেন, এ দেশে দৃষ্টিহীন মানুষ একেবারে কম নন। তারা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে আটকে থাকতে চান না। তারা সাহিত্যিকদের লেখা বইও পড়তে চান। কিন্তু তাদের মনের জানালা খুলে দেওয়ার জন্য এই চাহিদা মেটানোর ন্যূনতম উদ্যোগ নেই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে পাঠ্যবইগুলো ব্রেইল করে সরবরাহ করা হলেও অন্য বই প্রকাশ হয় না। অথচ সাহিত্য পাঠে তাদের অপরিসীম আগ্রহ। সিসিমপুরের মতো প্রতিষ্ঠান এবার বইমেলায় আমাদের ১০টি বই দিয়েছে।

জাতীয় গণগ্রন্থাগার, শিশু একাডেমি পাঠাগারসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্রেইল কর্নার করা হয়েছে জানিয়ে নাজিয়া বলেন, ব্রেইল বই প্রকাশে প্রতিটি পৃষ্ঠায় খরচ হয় ৮ থেকে ১০ টাকা। সাধারণ বইয়ের একটি পাতা ব্রেইল বইয়ে হয়ে যায় তিন পাতা। পাঁচশ’ একহাজার থেকে শুরু করে একটা ব্রেইল বই প্রকাশ করতে লেগে যায় কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল