• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০১৯  

পৃথিবীতে অনেক আদিকাল থেকে ধর্মের সৃষ্টি। হয়তো আদিকালের অনেক ধর্মের অস্তিত্ব এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ধারনা কিন্তু পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই আছে। আবার অনেকটা ধরে নেয়া যায় মানব ইতিহাসের একদম শুরু থেকেই আছে; হয়তো পারিপার্শ্বিক কারণে সৃষ্টিকর্তার রূপ পাল্টে গেছে। সৃষ্টিকর্তা ও ধর্ম এই দুটি বিষয় সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষে মানুষে সংঘাত সংঘর্ষ লেগেই আছে। কখনো কি চিন্তা করেছেন কেন এই সংঘাত? অথচ ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তা মানব শান্তির কথা বলে। তাহলে এই সংঘাত এর পিছনে কি কারন? মানুষের অজ্ঞানতা নাকি মানুষের অতিরিক্ত বুদ্ধিমত্তা; যদি কারন দ্বিতীয়টি হয় তাহলে কি মানুষ আসলে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছে?
মানুষ কেন সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মে বিশ্বাস করে এবং এই বিশ্বাসের ধরন কি ও কেন?
প্রথমত মানবজাতির একটি অংশ বিশ্বাস করতে পারে না সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু আছে। এই বিশ্বাসটি একসময় আমারও ছিল কিন্তু চিন্তার পরিপক্কতার সাথে সাথে এই বিশ্বাস থেকে আমি সরে এসেছি। কারণ বর্তমান আমার জ্ঞানসীমার মধ্যের জ্ঞান থেকে আমার খুব অবিশ্বাস্য মনে হয় কোনো কিছু , কিছু ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ একদম মূলে গিয়ে একটি/একজন/একাধিক সৃষ্টিকর্তা পাওয়া যেতে পারে। এখনো বিজ্ঞান ওখানে পৌঁছাতে পেরেছে কিনা আমার জ্ঞানসীমার মধ্যে নাই। যদিও আমার জ্ঞান সীমিত। যারা সৃষ্টিকর্তা তে বিশ্বাস করেন না তারা ধর্ম বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হয়। কিন্তু কিছু ধর্মীয় দর্শন এতটাই অসাধারণ যে অনেক সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী ব্যক্তিও সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে এসব ধর্মীয় দর্শন মেনে চলে। উদাহরণ পাশ্চাত্য দেশের জনগণ।
দ্বিতীয়ত মানবজাতির একটি অংশ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করে কেউ না কেউ অথবা কিছু না কিছু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। এখন সৃষ্টির কর্তা হিসেবে আপনি সৃষ্টিকর্তার শাসন মানবেন কি মানবেন না তার উপর শুরু হবে আপনার ধর্ম বিশ্বাস এর উপাখ্যান। 
এখন একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মানুষ ধার্মিক অথবা ধর্ম বিশ্বাসী নাও হতে পারে। আমরা সবসময় সৃষ্টির কর্তার নিয়ম বা যাকে আমরা ধর্ম বলি তা যে মেনে চলি তা কিন্তু না। সৃষ্টিকর্তাকে যদি আমরা গার্ডিয়ান হিসেবে চিন্তা করি যা পরিবার তৈরি করে অথবা একটি স্কুল/বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চিন্তা করি যা জ্ঞানী সৃষ্টি করে তাহলে আমরা কি সবসময় আমাদের পারিবারিক রীতিনীতি মেনে চলি অথবা বিশ্ববিদ্যালয় এর নিয়ম নীতি মেনে চলি। না মেনে কি শুদ্ধ মানুষ নাই? শুদ্ধ জ্ঞানী নাই? এখন দেখি কেন মানুষ সৃষ্টির কর্তার দেয়া রীতিনীতি নিয়মনীতি মেনে চলে বা চলে না।
প্রথমত মানবজাতির একটি অংশ এটি মেনে চলে ভয়ে। তারা ভীত যদি নিয়ম নীতি বা যেটাকে আমরা ধর্ম বলি না মেনে চলি সৃষ্টিকর্তা আমাকে শাস্তি দিবে পক্ষান্তরে মেনে চললে পুরস্কার পাবো। তাহলে কি বলা যায় ভয়ের সাথে কিছুটা লোভও কাজ করে। আমার ধারনা কাজ করে। পুরস্কারের লোভ। শাস্তি এবং পুরস্কার সকল ধর্মেই আছে। তাহলে কি সকল ধর্মেই লোভ ও ভয়ের সংমিশ্রণ আছে? জানা নেই। এই অংশটি পুরো বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ তাদের ভয়ের সাথে সাথে লোভ আছে। লোভের কারণে এরা দেখা যায় সৃষ্টিকর্তা কে খুশি করতে গিয়ে অন্য ধর্ম বিনাশে উঠে পড়ে লাগে। 
দ্বিতীয়ত মানবজাতির একটি অংশ বিনয়ী, অভিজ্ঞতায় বিশ্বাসী। এই অংশ ধর্ম মানে কারণ উনারা বিশ্বাস করে যেহেতু সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাই ভালো খারাপ যে নীতিই দিক আমরা মেনে চলবো। সৃষ্টিকর্তার অভিজ্ঞতা অনেক। উনি ভুল কোনো নীতি দিবে না। উনাদের রয়েছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ ভালোবাসা। এবং এরাই প্রকৃত ধার্মিক। উনাদের দিয়ে বিশ্বের ক্ষতি বা ধর্মীয় হানাহানি সম্ভব নয়। এরা কখনো চিন্তা করে না ওরা কি বেহেশতে যাবে নাকি নরকে; তাদের মাথায় শুধু একটি চিন্তা সৃষ্টিকর্তা যাতে বেজার না হোন।
তৃতীয়ত মানবজাতির একটি অংশ সব সময় থাকে বেয়ারা। আমি কেন এই নিয়ম মানবো? যদিও নিয়মটি অনেক অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। তাদের একটাই যুক্তি সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন বলে কি উনার যা নিয়মনীতি আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে হবে? এই ধারণা থেকে দুই ধরনের লোক বের হবে: এক নিয়ম ভাঙতে গিয়ে শুধু ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। আর এক দল চেষ্টা করবে প্রমাণ করার ধর্ম না মেনেও ভালো মানুষ হওয়া যায় এবং সংঘাত এড়িয়ে একটি সুন্দর পৃথিবী করা যায়। আমার মনে হয় সৃষ্টিকর্তা এদের উপর একটু বেশি খুশি হয় কারণ মানুষ কেন সর্বোচ্চ বুদ্ধিমান সেটি এখান থেকে বোঝা যায়।
চতুর্থত দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ মানুষ। এরা প্রথম অংশের মতো; কিন্তু তাঁর চেয়েও খারাপ বা ক্ষতিকর। এদেরকে ধর্মীয় নীতি পালন করতে বলবেন সবার সম্মুখে তারা দ্বিতীয় অংশের মতো অসাধারণ ধার্মিক। কিন্তু আশপাশে কেউ নাই তখন তারা প্রথম অংশের শেষাংশের মতো। সকল ধর্মীয় নীতি বহির্ভূত কাজ করবে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ভয়ে এবং বেহেশতে এর লোভে পড়ে সকল অধার্মিক কাজ করবে যেমন ধর্মীয় হানাহানি, অন্য ধর্মকে অপমান এবং অন্য মানুষকে উৎসাহ দিবে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে এসব করলে ধর্মীয় পুরস্কার চরিতার্থ হবে; যাতে সৃষ্টিকর্তা খুশি হোন। এঁদের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার ভয়ের চেয়েও পুরস্কারের লোভটা এতটাই প্রবল হয় তারা মানুষ আর থাকে না। দক্ষিণ এশিয়া এর প্রকৃত উদাহরণ। এখানে খুব সামান্য সামান্য কাজে মানুষের ধর্ম অরক্ষিত হয়ে যায়। সবাই ধর্ম রক্ষার নামে অনেক কিছু করতে ব্যস্ত। কেউ ধর্ম রক্ষার নামের উন্নত দেশের দালালি করে টাকা বা নাগরিকত্ব কামাতে ব্যস্ত, কেউ বা জায়গা দখলে ব্যস্ত, কেউ বা ধর্ষণে ব্যস্ত। 
সৃষ্টিকর্তাকে কখনো এতটা দুর্বল ভাবা উচিত না যে উনার ধর্ম রক্ষার জন্য আমাদের মতো নিকৃষ্ট চিন্তার মানুষের দরকার হবে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় সৃষ্টিকর্তার কি রাগ হয় না এসব ঘুষখোর, দেশের নিয়ম না মানা, ধর্ষক, চালবাজ, দায়িত্ব অবহেলাকারী, খুনী, নতুন ধর্মীয় নিয়ম কারী, পরনিন্দা কারী, পরচর্চাকারী, সর্বোপরি ভন্ড ধার্মিক, ভন্ড বুদ্ধিজীবী, ভন্ড দার্শনিক, দের উপর। উনার সহ্য ক্ষমতা এতো বেশি কেন? এখন বাংলাদেশের স্বার্থে সৃষ্টিকর্তার রাগ হওয়া উচিত।
উপসংহারে বলি সৃষ্টিকর্তা ও ধর্ম মানলে এটি অন্ততঃ বোঝা উচিত একটি ধর্ম আপনি আমি চাইলে বিনষ্ট করতে পারি না। যদি পারতাম তাহলে আপনি আমার সৃষ্টিকর্তা লাগতো না। যেটি আপনি বিনষ্ট করতে পারবেন সেটি হচ্ছে দেশ, সমাজ, বন্ধুত্ব, ও বন্ধন ; আর নিজের ধর্ম রক্ষার্থে অন্য ধর্মের মানুষ। ধর্ম কিন্তু থেকেই যাবে। ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রেখে একটি সুন্দর উন্নত দেশ গড়ার চেষ্টা করি। যাতে ট্রামপের কাছে আমাদের বিচার দিতে না হয়। যাতে আমাদের কাছে বিচার দিতে আসে। সেই ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ; আর কতো ঘাড় বাঁকা করে হাঁটব; আপনাদের ঘেন্না হয় না নিজেদের ছোট করতে। ইউরোপ, আমেরিকা, আরব দেশ, ভারত যেখানেই যান আশপাশের সবাই বলবে ব্লাডি এশিয়ান, ব্রাউন, ওপারের হিন্দু, বাংলাদেশী গরীব মুসলিম। গালি খেয়েও আমাদের লজ্জা হয় না।

অধ্যাপক টোটন চন্দ্রঁ মল্লিক
চেয়ারম্যান 
ত্রিপল ই বিভাগ
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি,  চট্টগ্রাম

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল