• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড: জনপ্রতিনিধিদের ৯ দাবি

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১ জুন ২০২৪  

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ স্কুল মাঠে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়নে নির্বাতিত সব প্রতিনিধিরা। এ সময় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ-৪ নির্বাচনী এলাকার সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা এখানে একত্রিত হয়েছি, যখন সমগ্র কালীগঞ্জবাসী শোকে মূহ্যমান। কালীগঞ্জবাসীর নেতা এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার আমাদের মাঝে অনুপস্থিত। এমন একটি সময়ে কথা বলার মতো ভাষা আমাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রশাসনের সব পর্যায়ে এমপি আনারের নিখোঁজ বা হত্যার বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। প্রশাসন দ্রুতই পরিপূর্ণ তদন্তের মধ্য দিয়ে বিষয়টি উদঘাটন করবেন। তারপরও আমরা প্রতিনিয়ত জনগণের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি কিন্তু তার কোনো সদুত্তর আমাদের কাছে নেই। এমন পরিস্থিতিতে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচারের প্রত্যাশায় কিছু দাবি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। এমপি আনার টানা তিনবার নির্বাচিত এমপি। তার আগে পৌর কমিশনার ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। এমন একজন জননেতা নিখোঁজ বা হত্যার শিকার হতে পারে তা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এ সংবাদ সম্মেলন থেকে তার ব্যবহৃত পাসপোর্ট, ঘড়ি, আংটি, চশমাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র এবং কথিত রক্তমাখা পোশাক উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। আনার এমপির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলোর সর্বশেষ অবস্থান দফাওয়ারী তথ্য প্রকাশ করতে হবে। আনার এমপির হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক মৃত্যুর তথ্য প্রচার করা হয়েছে যা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তপূর্বক সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। খুনি জিহাদ মুম্বাইয়ে কখন থেকে কার অধীনে কসাইগিরি করত তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি করছি। খুনিরা হত্যাকাণ্ডে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার তথ্য এবং সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা ছাড়া আনার এমপির বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা ছিল না। অথচ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনার। একজন এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার না করে সঠিক ও সত্য তথ্য প্রচারের দাবি জানাচ্ছি। বিগত ১৭ বছরে আনার এমপির বিরুদ্ধে কথিত মাদক, হুন্ডি, সোনা চোরাচালানের কোনো মামলার প্রমাণ থেকে থাকলে তার তথ্য প্রকাশ করার দাবি করছি। এই হত্যাকাণ্ডকে সর্মথন জানিয়ে এবং সম্মানিত এমপির চরিত্র হননের উদ্দেশে সামাজিক প্রচার মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীর অসংখ্য অ্যাকাউন্ট/ আইডি থেকে প্রতিনিয়ত যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। আনার এমপির ব্যবহৃত মোবাইল থেকে যারা বিভিন্নজনের কাছে এসএমএস এবং কল দিয়েছে তাদের পরিচয় উদঘাটন করে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। এ সময় উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা এমপি মো. আনোয়ারুল আজীম আনার নিখোঁজ হয়ে থাকলে সন্ধান এবং হত্যা হয়ে থাকলে পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাসেল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহজনাজ পারভীনসহ ১৫ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সব ইউপি মেম্বার এবং সব পৌর কাউন্সিলররা। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে রোববার দুপুরে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার চুয়াডাঙ্গা সীমান্তের গেদে বর্ডার দিয়ে ভারত যান। সেখানে পৌঁছে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার অন্তর্গত মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ করে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ ও গাড়ি চালক তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনেও একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজিম আনার। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানায় উদ্বিগ্ন এমপি পরিবার। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করেন এমপির পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। ২২ মে বুধবার সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকার অভিজাত আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেনে তাকে খুন করা হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায়। এরপর এমপি খুনের ঘটনায় আটকদের স্বীকারোক্তিতে জানায় আনারকে কেটে টুকরো টুকরো করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। খুনের ২০ দিন পর এখনো উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে আনারের পরিহিত পোশাক বা শরীরের কোনো অংশ উদ্ধার না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক দাফন-কাফন বা দোয়া অনুষ্ঠান করতে পারেনি পরিবার ও তার কর্মী-সমর্থকরা।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল