• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

‌ভালোবাসার রঙ-রূপসী কিলোরোড

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২৩  

অনিন্দ্য সুন্দরের মিলনমেলা, দেখলেই চোখের ক্লান্তিরা দূরে পালায়। চোখদুটি যেন অতৃপ্তি-ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে। কি অপরূপা- পিচঢালা রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা মেহগনিসহ হরেক গাছগুলো। একপাশের গাছগুলো যেন অন্যপাশের গাছগুলোকে আলতো ছুঁয়ে আলিঙ্গনে মেতেছে। সূর্যমামার ক্ষোভের তীব্রতা থেকে রেহাই দিচ্ছে পথচারীদের। তবুও দিনদুপুরের কিছু রোদ্রকণা পাতার ছাদ ভেদ করে রাস্তার আসে। সেই রোদ রাস্তার বুকে অনিন্দ্য চাকচিক্য আর ঝিকমিক আলোকরশ্মি সৃষ্টি করেছে। আলোছায়ার সুন্দর এই চিত্রের জন্যেই বুঝি জন্ম নিয়েছে রাস্তাটি। সৌন্দর্যের প্রতিমা হয়ে যুগ-যুগ ধরে বেঁচে থাকা রাস্তাটির নাম ‘কিলোরোড'। 
দুধারে সুউচ্চ বৃক্ষের শীতল ছায়ায় প্লাবিত পিচঢালা রোডটি রয়েছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। বলা হয়, মূল ফটক থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত রোডটির দূরত্ব ১ কিলোমিটার। এ কারণেই রাস্তাটির নামকরণ করা হয় ‘কিলোরোড’। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখেই চোখে পড়ে দীর্ঘ দূরত্বের দুটি রাস্তা। বাম রাস্তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহনগুলো প্রবেশ করে, আর ডান রাস্তা দিয়ে যানবাহনগুলো বের হয়। রাস্তার দুধারে সুউচ্চ ডানামেলা গাছগুলো যেন কিলোরোডটিকে মায়ার পরশে আলিঙ্গন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট শাখার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. সদরুদ্দীন আহমেদ চৌধুরীর আমলে মো. সালিকুল রহমান চৌধুরী তত্ত্বাবধানে এ গাছগুলো লাগানো হয়।

আজ বড় হওয়া সেই গাছগুলো। দেখলে যেন মনে হয়, গাছ আর রাস্তার মধ্যে রূপকথা ভালোবাসার কথোপকথন চলছে। সেই কথোপকথনের সুর-পথচারীর প্রতিটি পরতে কর্ণকুহরে বেজে ওঠে। রাস্তার পাশ ঘেঁষে দুইপাশে দীর্ঘ লেক দুটি প্রবাহিত। দুই রাস্তার মাঝখানে সারিবদ্ধ ল্যামপোস্টের আলোতে সারারাত অনন্য রূপ ধারণ করে কিলোরোড।

রাস্তার ছাউনি হয়ে থাকা গাছের ঝরাপাতার বৃষ্টি যখন পথচারীর গায়ে আলতো ছুঁয়ে দেয়, তখন মনে হয় এই বুঝি প্রকৃতির শরীরী খেলা। সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিষয় হচ্ছে, গাছের চিড়চিড়ে ঘন পাতা রাস্তায় মেলে ধরেছে এক লম্বা শামিয়ানা।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন যেমন কিলোরোড ছাড়া প্রাণ পায় না, তেমনি ক্যাম্পাসের ভালোবাসাও প্রাণ পায় না কিলোরোড ব্যতীত। প্রণয় যুগল এই কিলো রোডের হাঁটার মধ্যে যেন প্রাণ ফিরে পায়। কতই না বন্ধুত্বের রসায়ন ভাগাভাগি হয় আড্ডার চলে কিলোরোডের বুকে। তেমনি আবার বিরহ-বিচ্ছেদের যন্ত্রণাও ভাগাভাগি করতে চায় রাতের নির্জন কিলো রোডের শূন্যতার মধ্যে। সব চাওয়া-পাওয়াগুলো যেন কিলোরোড ব্যতীত পূর্ণতা পায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইতিহাস, ঐতিহ্য, দাবি-দাওয়ার চাক্ষুষ সাক্ষী এই কিলো রোড। হাজারো প্রতিবাদী মিছিল, পুলিশের লাঠিচার্জ, নানা হক কথার হুংকারের স্মৃতি বিজড়িত মূহুর্তের জ্বলন্ত মূর্তিমান প্রতীক এই কিলোরোড।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের  শিক্ষার্থী আফসারা হোসাইন হিমা বলেন, এ সেই রাস্তা, যার দুপাশের গাছগুলো সব সাস্টিয়ানদের সুখ-দুঃখকে ধারণ করেছে। একলা হাঁটেন বা বন্ধু নিয়ে, এই রাস্তা আপনাকে তার সৌন্দর্য ও অতীতে মন হারাতে বাধ্য করবে।

একই বিভাগের আরেক কিলোরোড প্রেমিক মো. সোলাইমান। বলেন, রৌদ্র কিংবা বৃষ্টি, গরম কিংবা শীত, জীবনের আনন্দঘন মুহূর্ত কিংবা একাডেমিক কাজের চাপ। যখনি কিলোরোডে আসি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংস্পর্শে দূর হয় সব গ্লানি। সবুজ ঘন পাতার নিচে এ যেন ছোট্ট আরেক টুকরো আকাশ। কিলোরোড হাঁটতে হাঁটতে কখনো কখনো  ক্লান্ত হয় দেহ। কিন্তু, কখনো ক্লান্ত হয় না মন।

দিনশেষে কিলোরোড নিয়ে কবির মন বলে, যেখানে প্রিয়জনের হাতের আঙুল ধরে হাঁটলে মনের আয়নায় ভেসে ওঠে সোনালি কোনো অতীত, গম্ভীর মনে জেগে ওঠে প্রেম, নিবার্ক শ্রোতা গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠে গান। যেখানে বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটলে মনে হয়, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়- তবে কেমন হতো!

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল