• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

চাকরি খুইয়ে গ্রামে ফেরাদের ৫ লাখ পর্যন্ত ঋণ দিতে তহবিল গঠন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১  

করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফেরাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন তারা। একেকজন পাবেন সর্বনিম্ন এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা।

আগামী সপ্তাহেই নতুন এই তহবিলের নীতিমালা গোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির অভিঘাতে চাকরি হারানো শহরের নিন্মবিত্ত ও কম আয়ের মানুষের একটি বড় অংশ কোনো ধরনের কর্মসংস্থান ছাড়াই এখন গ্রামে কঠিন জীবনযাপন করছেন। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে দিতেই এই তহবিল।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় দুই বছরের করোনাভাইরাস মহামারির ছোবলে সৃষ্ট আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের চাকরি থাকলেও বেতন কমে গেছে। কেউ আবার ছোটখাটো ব্যবসা করলেও পুঁজি ভেঙে সংসারের খরচ চালিয়েছেন। এদের বেশিরভাগ এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামে অবস্থান করছেন। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের 'ঘরে ফেরা' কর্মসূচির অধীনে গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষের জন্য পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে তাদের এই তহবিল থেকে ঋণ দেয়া হবে।

এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারিতে গ্রামে ফেরা মানুষের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল’। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করা হবে। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তহবিল থেকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে গ্রাহকদের ৬ শতাংশ সুদে বিতরণ করবে।

ঋণের সীমা কত, কোন খাতে মিলবে টাকা
এ তহবিল থেকে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। যারা ১ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নেবেন, তাদের ৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধের সুযোগ দেয়া হবে।

ঋণের পরিমাণ ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে হলে ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ পরিশোধের মেয়াদ হবে ২ বছর। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাদের কোনো ধরনের জামানত দিতে হবে না।

পুনঃঅর্থায়নের এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর। তবে পরে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ৮টি খাত নির্বাচন করেছে। এগুলো হচ্ছে- স্থানীয় ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসা, পরিবহন খাতে ছোট আকারের যানবাহন ক্রয়, হালকা প্রকৌশল, মৎস্য ও পশুসম্পদ, তথ্য-প্রযুক্তির জন্য সেবাকেন্দ্র (সার্ভিস সেন্টার) স্থাপন, ফল ও শাকসবজি আবাদ, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ঘর নির্মাণ ও মেরামত।

পুনঃঅর্থায়নের এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কোনো ধরনের অংশগ্রহণমূলক চুক্তি করতে হবে না। তবে বেসরকারি কিংবা বিদেশি ব্যাংক ও এনজিওগুলোর ঋণ বিতরণের জন্য তাদের চুক্তিতে সই করতে হবে।

মহামারির শুরু থেকে (২০২০ সালের এপ্রিল) এ পর্যন্ত সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ৩০টির মতো প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছে। তবে যারা চাকরি হারিয়েছে, তাদের জন্য এই প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কত মানুষ বাড়ি ফিরেছে?
বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যৌথ উদ্যোগে করা গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির দিনগুলোতে লকডাউনের কারণে কম আয়ের মানুষদের আয়-উপার্জন একেবারেই কমে গিয়েছিল। অনেকের সঞ্চয় কমে আসা এবং বাড়ি ভাড়া ও গ্যাস-বিদুৎ-পানির বিলসহ নানা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রধানত ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ গ্রামে ফিরে যায়।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এই গবেষণাকর্মটি শুরু হয়। এর তৃতীয় ধাপের জরিপে দেখা গেছে, গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষের একটি বড় অংশ পরে শহরে ফিরে আসলেও ১০ শতাংশ সেখানে থেকে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তহবিল সংক্রান্ত কার্যপত্রে হয়েছে, 'এই প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা গেলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে।'

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল