• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

রাবি অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা, দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২৩  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কারাগারে দুইজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ৯টায় দুইজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ফাঁসির বিষয়ে জানানো হয়। এ সময় তারা শান্ত ও নির্বিকার ছিলেন। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও কারা কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে নির্ধারিত সময়েই (রাত ১০টা ১ মিনিটে) দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

এর আগে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই দফায় মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে কারা অভ্যন্তরে শেষ সাক্ষাৎ করেন। বুধবারও কয়েকজন স্বজন মহিউদ্দিনের সঙ্গে শেষ দেখা করেন। বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরের পরিবারের কয়েকজন সদস্যও তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে, দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ড. এস তাহেরের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। দেশ-বিদেশ থেকে তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা জানান, এই ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে একটি বার্তা সবার কাছে পৌঁছে গেল যে, অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না।

এমন বিচার পেয়ে ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে শান্তি বিরাজ করবে বলে আশা করছেন রাবি শিক্ষকরা।

কারা সূত্র জানায়, অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলা কার্যক্রমের শেষ ধাপে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। তবে তা নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গত ২ মার্চ দুই আসামির ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে দণ্ডিত এ দুইজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংস হত্যার শিকার হন তিনি। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালাম। খালাস পাওয়া চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন নাজমুল আলম ও আবদুস সালাম।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এই ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না। আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আবদুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহের আহমেদকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।’

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল