• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ধুনটে শিকলে বন্দী মান্নানের দূর্বিষহ জীবন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২০  

নির্মম! উদাসীন। নিষ্ঠুর। কোন কিছুই বোধ হয় খাটে না। বছরের পর বছর কষ্টের সীমা পেরিয়ে গেলেও, শত চিৎকার করে মুক্তি মিলছে না। এটা যেন চারপাশের সবারই গা সওয়া ব্যাপার হয়ে গেছে। আতা গাছ ও পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই তার নিত্য সঙ্গী। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় যা-ই হোক,  তাকে সেখানেই দিন-রাত থাকতে হয়।  

 

তার চোখে মুখে এখন শৈশবের অপূর্ণ সাধ-স্বপ্নগুলোর মিইয়ে যাওয়া ছাপ। সেখানে স্থান করে নিয়েছে দুর্বিষহ জীবনের না বলা বেদনার ছাপ। সেসব দুঃখ বেদনা প্রকাশের শক্তি হারিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার কাশিয়াহাটা গ্রামের এক অস্বচ্ছল পরিবারের সদস্য আব্দুল মান্নান (৩৭)।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের-চালা একটি ঘরে তার সংসার। ঘরের ভেতর থাকেন মান্নানের স্ত্রী ও দুই সন্তান। আতা গাছটি ঘরের পিছনে। সেই গাছে বাঁধা শিকল পায়ে মাটিতে আয়েসি ভঙ্গিতে শুয়ে আছেন মান্নান। তার শরীরে নোংরা কাপড়চোপড়। ছোট্ট বারান্দায় তাকে থাকতে হয়। সেখানেই তার নাওয়া খাওয়া। প্রস্রাব পায়খানার জন্য পাশেই গর্ত করে দেয়া হয়েছে।  

 

এ ভাবেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেটেছে তার জীবনের ৫টি বছর। অথচ এক সময় এই প্রাণোচ্ছল সৌখিন যুবক মান্নান এলাকার সবার প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। শিকলবন্দী মান্নানের এ ঘটনাটি এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও নতুন প্রজন্মের সচেতন তরুণরা জানতে পেরে অমানবিক ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে দেন।

 

জানা গেছে, ১৫ বছর বয়সে মান্নানের চলাফেরায় পরিবর্তন লক্ষ্য করেন স্বজনরা। বিভিন্ন কবিরাজের কাছে নিলে তারা ঝাড়ফুঁক করতে থাকেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। একপর্যায়ে মান্নান মানুষকে মারধর করা শুরু করে, ক্ষতি করে। সব সময় গালি গালাজ করে। শিশুরা তাকে দেখলে ভয় পায়। তখন তাকে পাবনা মানষিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে একটু সুস্থ্য হলে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর সব এলোমেলো হয়ে যায় মান্নানের জীবনে। ধীরে ধীরে পাগলামি বাড়তে থাকে। স্বজনরা তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন। এরপর থেকে শুরু মান্নানের শিকলবন্দী জীবন।

 

মান্নানের স্ত্রী রনজনা খতুন জানান, স্ত্রী হয়ে আর স্বামীর কষ্ট সইতে পারছি না। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামীর চিকিৎসার আশা করেন তার অসহায় স্ত্রী। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন উন্নত চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু টাকা খরচ করার সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই স্বামীর চিকিৎসার জন্য সমাজের হৃদয়বান ও সরকারি সহায়তা চান তিনি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল