• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বীজ রপ্তানির নতুন দুয়ার

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৩  

দুই দশক আগেও দেশে সবজি মৌসুম ছিল শীতকালের তিন-চার মাস। সবজি ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। বছরজুড়ে সবজি উৎপাদন ও বাহারি সবজির ফলনে লাল তীর সিড লিমিটেডের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এখনও সবজি বীজের পথপ্রদর্শক।

গতকাল শুক্রবার গাজীপুরের বাসন এলাকায় লাল তীরের প্রধান গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বীজ উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ। বিশাল আয়তনের এ গবেষণা কেন্দ্রে চলছে ৩৫টি ফসলের ১৯৯টি জাতের চাষ। চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা কেন্দ্রের কোথাও বীজ বাছাই করছেন একদল নারী। আবার কোথাও বীজ প্যাকেজিংয়ের কাজ চলছে। আর এ বীজই দেশের পাশপাশি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায়।


বীজ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানটির পালকে একের পর এক যুক্ত হচ্ছে সাফল্য। ‘একসেস টু সিড ইনডেক্স’ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে লাল তীরের অবস্থান সপ্তম। নতুন আরেক সফলতায় গতকাল লাল তীরের প্রধান গবেষণা কেন্দ্রে ছিল আনন্দের ঝিলিক। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শ্রমিকরাও এতে উচ্ছ্বসিত। বিশ্বের সর্বোচ্চ বীজের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসটিএ) স্বীকৃতি ও সনদ পেয়েছে লাল তীর সিড লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমএনটি সিড টেস্টিং ল্যাবরেটরি। দেশের প্রথম কোনো বীজ পরীক্ষাগার এ সনদ পেল। এখন থেকে এ পরীক্ষাগারে দেওয়া বীজের গুণমানের প্রত্যয়পত্র বিশ্বের সব দেশের সরকার ও বেসরকারি খাতে গ্রহণযোগ্য হবে। এখানে পরীক্ষা করে যে কোনো প্রতিষ্ঠান সরাসরি বীজ রপ্তানি করতে পারবে।

লাল তীরের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সার্বিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের ল্যাবের এ স্বীকৃতি বড় প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি বিদেশে বীজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে। লাল তীর এখন বার্ষিক ১২ হাজার টন বীজ সরবরাহ করছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশ সবজি বীজ। গত বছর ১৫ জাতের ১২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের বীজ রপ্তানি করেছি। এবার ১৫ লাখ ডলারের বীজ রপ্তানির আশা তাঁর। তিনি বলেন, ভারতসহ পৃথিবীর কোথাও আমাদের টিয়া করলার বীজের চেয়ে ভালো জাত নেই। কিন্তু ভারতে নানা আইন থাকায় দেশটিতে আমরা বীজ রপ্তানি করতে পারছি না। অথচ আমাদের দেশ থেকে এ জাতের অন্য বীজ ভিন্ন উপায়ে ভারতে যাচ্ছে। ভারতে বীজ রপ্তানির ব্যবস্থা করতে সরকারকে বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ দেখছি না।
সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লাল তীরের চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে। আমরা এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছি, নতুন কোনো বীজ এলে তার কিছু আমাদের দিতে। কিন্তু তারা বলছে– আইনে নেই। একমাত্র সরকারি সংস্থা বিএডিসিকেই তারা বীজ দিতে পারবে। যেহেতু মাঠ পর্যায়ে আমরা বীজ সম্প্রসারণ করছি, আমাদেরকেও উদ্ভাবিত নতুন জাত দেওয়া উচিত। এতে নতুন বীজ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।

লাল তীরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৮৩টি দেশের ১৩০টি ল্যাবরেটরি ইন্টারন্যাশনাল সিড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং বীজের মান নির্ণয় ও সনদ দেওয়ার জন্য অনুমোদিত। এর মধ্যে বাংলাদেশে একটি মাত্র ল্যাব লাল তীরের।

লাল তীর সিড লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ড. আব্দুর রশিদ বলেন, দেশি জাত সংরক্ষণে এ পর্যন্ত লাল তীর বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ফসলের ১ লাখ ৩০ হাজার জার্ম প্লাজম সংগ্রহ করেছে। সবজির জন্য লাল তীরের রয়েছে চারটি বীজ উৎপাদনকেন্দ্র ও গবেষণাগার। পাশাপাশি ধানের বীজের জন্য ময়মনসিংহের ভালুকায় ও গরু-মহিষের জন্য ভালুকার উথুরায় গবেষণাগার গড়ে তুলেছে লাল তীর। এ ছাড়া উপকূল এলাকার উপযোগী সবজি বীজ উৎপাদনে কাজ করছে লাল তীর। এ জন্য রামপালে গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল