• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ক্রিকেট খেলেছেন হিটলারও!

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৩  

অ্যাডলফ হিটলার। এ নামটি শুনলেই মনের পর্দায় সবার আগে ভেসে উঠবে ‘শাসক’ হিটলারের প্রতিচ্ছবি। শাসন ক্ষমতায় বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ারে আসীন হয়েছিলেন। এরপর বিশ্ব জুড়েই তাণ্ডব চালিয়েছেন জার্মানির এ শাসক।
শুধু শাসকই নন, ক্রিকেটের বাইশ গজেও নাকি নিজেকে জড়িয়েছিলেন হিটলার। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্ট ম্যাচ খেলেন বিশ্বের ভয়ানক এ রাষ্ট্রপ্রধান। অবশ্য ক্রিকেট নিয়ে হিটলারের একটা গল্প মিথ হয়ে আছে।

শোনা যায়, একবার চলতি পথে সাদা পোশাকে কিছু মানুষকে কী একটা খেলতে দেখে নাকি কৌতূহল জেগেছিল হিটলারের। খেলাটা ক্রিকেট এবং পাঁচ দিন ধরে হয় শুনে নাকি পুরো দলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন হিটলার। কিন্তু আদতে তা সত্যি নয়। বরং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার নিজেও একটা পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন।

গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে ডেইলি মিরর-এ ‘এডলফ হিটলার, অ্যাজ আই নো হিম’ শিরোনামে একটি ফিচার লিখেছিলেন তৎকালীন ব্রিটেনের ডানপন্থী সংসদ সদস্য অলিভার লকার-ল্যাম্পসন।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে একবার ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলেন তরুণ যোদ্ধা হিটলার। আইন-কানুন কিছুই জানতেন না।

ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দিদের কাছ থেকে আইন-কানুন শুনে তার পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে ইনিংস ঘোষণার জটিলতা। আবার টানা পাঁচ দিন খেলার পরও সেটা কেন ড্র হবে- যুক্তি খুঁজে পাননি হিটলার। তবু হয়তো মানতেন, যদি ক্রিকেটের কিছু আইন হিটলারের পরামর্শ মেনে শুধরে নেয়া হতো! যেমন এলবিডব্লিউয়ের আইন তার নাকি পছন্দ হয়নি।

ব্যাটাররা প্যাড পরছে বলের আঘাতের ভয়ে- ব্যাপারটা হিটলারের দৃষ্টিতে ‘পুরুষালি’ মনে হয়নি। অলিভার লকার-ল্যাম্পসনের লেখায় এটাও বলা হয় যে, বলের আকৃতি নিয়েও আপত্তি ছিল হিটলারের। আরো বড় আকৃতির বল দিয়ে ক্রিকেট খেলা উচিত বলে নাকি মন্তব্য করেছিলেন হিটলার। 

সময়ের স্রোতে এই গল্পের গরু গাছে উঠে ছড়িয়ে পড়ে যে, যুদ্ধবাজ হিটলার বোমাকৃতির বল চেয়েছিলেন ক্রিকেটে! এরপর ক্রিকেটের সঙ্গে হিটলারকে জড়িয়ে একটা গল্পই প্রচলিত আছে, শুরুতেই যা বলা হয়েছে। তবে সেটি স্রেফ কল্পকথা।

১৯৩৭ সালে উরস্টারশায়ার ক্রিকেট ক্লাব জার্মানি সফরে গিয়েছিল, যা ফলাও করে ছাপা হয়েছিল জার্মান পত্রপত্রিকায়। কথিত আছে, পাঁচ দিনের ম্যাচের চতুর্থ দিনে মাঠে বসে খেলা দেখেছিলেন হিটলার। পরদিন ছিল ম্যাচের শেষদিন। সেদিন তিনি মাঠে যাননি। 

তবে পারিষদদের কাছ থেকে হিটলার ম্যাচের ফল জেনে অবাক হয়েছেন। ম্যাচটি ড্র শুনে বিস্মিত হিটলার ভেবে পাননি কেন পাঁচ দিন ধরে খেলা একটি ম্যাচের ফল হবে না? যে খেলা এত পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করার পরও নিষ্ফলা থাকে, সেটি খেলে লাভ কী?  

অভিজাত সংস্করণের ফলাফল শুনে বিরক্ত হয়েছিলেন হিটলার। কিন্তু ক্রিকেট দলকে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে দেননি। শোনা যায়, সেদিনই জার্মানিতে ক্রিকেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন হিটলার। একই সফরকারী ইংলিশ ক্রিকেট ক্লাবটিকে জার্মানি ত্যাগ করতে বলা হয়।

অবশ্য এই কথার সত্যাসত্য যাচাই করার কোনো সূত্র নেই। তবে এটা ঠিক যে জার্মানিতে ক্রিকেটের প্রসার ঘটেনি। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সহযোগী সদস্যপদ দিলেও সেই পুরনো প্রশ্নই বেশি শোনা যায়- জার্মানিতে কি ক্রিকেট খেলা হয়? নাকি হিটলারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে? প্রশ্নের ধরন দেখেই বোঝা যায় যে জার্মানিতে ক্রিকেট খেলা হয়- সেটি সাধারণের কাছে অজানা। 

যদিও ইতিহাস বলে, ১৮৫৮ সালে ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মানুষ মিলে বার্লিনে একটি ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে শখের বশে হিটলারের ক্রিকেট ম্যাচ খেলার ঘটনাও অসম্ভব নয়। 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল