• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

রাসূলুল্লাহ (সা.)-ই একমাত্র শাফাআতকারী

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মুমিনগণকে (হাশরের ময়দানে স্ব স্ব অপরাধের কারণে) বন্দী রাখা হবে। তাতে তারা অত্যন্ত চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়বে এবং বলবে, ‘যদি আমরা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার নিকট কারো মাধ্যমে সুপারিশ কামনা করি, যিনি আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে স্বস্তি দেবেন’। সেই লক্ষ্যে তারা আদম (আ.) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, ‘আপনি মানবজাতির পিতা আদম, আপনাকে আল্লাহ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, জান্নাতে বসবাস করিয়েছেন, ফেরেশতা মন্ডলীকে দিয়ে আপনাকে সেজদা করিয়েছিলেন এবং তিনিই যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে এই কষ্টদায়ক স্থান হতে মুক্ত করে প্রশান্তি দান করেন’। তখন  আদম (আ.) বলবেন,  ‘আমি  তোমাদের  এই  কাজের মোটেই উপযুক্ত নই’।
নবী করিম (সা.) বলেন, তখন তিনি গাছ হতে ফল খাওয়ার অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা হতে তাকে নিষেধ করা হয়েছিল। [আদম (আ.) বলবেন] ‘বরং  তোমরা  মানবজাতির  জন্য  আল্লাহ  তাআলার  প্রেরিত  সর্বপ্রথম নবী নূহ (আ.) এর নিকট যাও’। তারা নূহ (আ.) এর কাছে গেলে  তিনি  তাদেরকে  বলবেন,  ‘আমি  তোমাদের এ কাজের জন্য একেবারেই যোগ্য নই’। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার ঐ অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা অজ্ঞতাবশত: নিজের (অবাধ্য) ছেলেকে পানিতে না ডুবানোর জন্য আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। (তিনি বলবেন) ‘বরং তোমরা আল্লাহ খলীল হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর নিকটে যাও’। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এবার তারা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর নিকটে যাবে। তখন তিনি বলবেন , ‘আমি তোমাদের এ কাজের জন্য কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না’। সঙ্গে সঙ্গে তার তিনটি মিথ্যা উক্তির কথা স্মরণ করবেন এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা মূসা (আ.) এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক  বান্দা,  যাকে  আল্লাহ তাওরাত দান করেছেন, তার সঙ্গে বাক্যালাপ করেছেন এবং গোপন কথাবার্তার মাধ্যমে তাকে নৈকট্য দান করেছেন’।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তখন তারা সবাই হজরত মূসা (আ.) এর নিকটে আসলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের জন্য সুপারিশের ক্ষেত্রে অপারগ।’ তখন তিনি সেই প্রাণনাশের অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা তার হাতে সংঘটিত হয়েছিল এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা ও তার মনোনীত রাসূল, তার কালেমা ও রূহ হজরত ঈসা (আ.) এর কাছে যাও’।

নবী করিম (সা.) বলেন, তখন তারা সবাই হজরত ঈসা (আ.) এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। বরং তোমরা মুহাম্মাদ (সা.) এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ তাআলার এমন এক  বান্দা, যার  আগের ও পরের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তারা আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে তার দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব। অতঃপর আমাকে তার নিকট যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আমি যখন তাকে দেখব, তখনই তার উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ আমাকে যতক্ষণ চাইবেন সিজদা অবস্থায় রাখবেন’। অতঃপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। আর যা বলার বলো, তোমর কথা শুনা হবে। শাফাআত কর, কবুল করা হবে। তুমি চাও, তোমাকে দেওয়া হবে’। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন। অতঃপর আমি শাফাআত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। তখন আমি আল্লাহর দরবার হতে উঠে আসব এবং ঐ নির্ধারিত সীমার লোকদেরকে জাহান্নাম হতে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর আমি পুনরায় ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের দরবারে হাজির হওয়ার জন্য আল্লাহ কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি যখন তাকে দেখব, তখনই তার উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব এবং আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদা অবস্থায় থাকতে দেবেন’। তারপর আল্লাহ বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। আর যা বলার বলো, তোমার কথা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে। তুমি প্রার্থনা কর, যা প্রার্থনা করবে তা দেওয়া হবে’।

রাসূল (সা.) বলেন, তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা ও গুণকীর্তন বর্ণনা করব, যা আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আমি শাফাআত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। তখন আমি আমার রবের দরবার হতে উঠে আসব এবং ঐ নির্দিষ্ট লোকগুলোকে জাহান্নাম হতে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। অতঃপর তৃতীয়বার ফিরে আসব এবং আমার প্রতিপালক আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে তার কাছে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আমি যখন তাকে দেখব, তখনই সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে সিজদা অবস্থায় রাখবেন’। তারপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। তুমি যা বলবে তা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে। প্রার্থনা কর, তা দেওয়া হবে’।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমন হামদ ও সানা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন’। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তারপর আমি শাফাআত করব। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেবেন। তখন আমি সেই দরবার থেকে বের হয়ে আসব এবং তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব’।

অবশেষে কোরআন যাদেরকে আটকিয়ে রাখবে (অর্থাৎ যাদের জন্য কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়ে গেছে) তারা ব্যতীত আর কেউ জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে না। বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আনাস (রা.) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরআনের এই আয়াতটি ‘আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক অচিরেই আপনাকে‘মাকা‍‌মে মাহমূদে’ পৌঁছিয়ে  দেবেন’ (সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৭৯) তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, এটাই সেই ‘মাকামে মাহমূদ’ যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের নবীকে দেওয়া হয়েছে। (সহিহ বুখারি হা/৭৪৪০ তাওহীদ’অধ্যায়, অনুচেছদ-২৪, মিশকাত হা/৫৫৭২ ‘কেয়ামতের অবস্থা ও সৃষ্টির সূচনা’অধ্যায়, ‘হাওজে কাওসার ও শাফাআত’অনুচেছদ)

শিক্ষা
(১) সব নবী-রাসূলের ওপর মুহাম্মাদ (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্ব।
(২) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শাফাআতে পরকালে কিছু জাহান্নামীকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর এমন একটি দোয়া রয়েছে, যা (আল্লাহর নিকট) গৃহীত হয়, আর নবী সে দোয়া করে থাকেন। আমার ইচ্ছা, আমি আমার সে দোয়ার অধিকার আখেরাতে আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য মুলতবি রাখি’। (বুখারি হা/৬৩০৪, ‘দো‘আ সমূহ’অধ্যায়, অনুচেছদ-১)।
(৩) কোনো পীর-ওলী পরকালে শাফাআতের অধিকার রাখবেন না।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল