• মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩১ ১৪৩১

  • || ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও শান্তি কামনা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৩  

বিশ্বের সব মানুষের কল্যাণ ও নিরাপত্তা কামনায় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করা হয়েছে আরাফাত ময়দানের খুতবায়। শায়খ ইউসুফ বিন মুহম্মদ বিন সাঈদ হজের খুতবায় বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব ও দল উপদল তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।
এদিন মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ। এ সময় লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক-ধ্বনিতে পাপমুক্তি ও আল্লাহর খাস রহমতের আশায় লাখ লাখ মুসল্লির চোখের জলে সিক্ত হয়েছে আরাফাতের ময়দান। দুই হাত তুলে একসঙ্গে ২৬ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ খুতবা শুরু হয়। বিশ্বের ১৬৩টি দেশ থেকে আগত ২৬ লক্ষাধিক মুসলমান আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে এ খুতবা শোনেন।
এবারের খুতবায় মূলত বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনাসহ ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসলামের রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে ভাই ভাই হয়ে তাওহিদের পথে অটল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ হজের খুতবায় বলেন, শয়তানের পথ পরিহার করতে হবে। কেননা শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। জীবনের সব অঙ্গনে ইহসানের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দেওয়ার উজ্জ্বল দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় খুতবায়। সবাই এক আল্লাহর বান্দা। আরব-অনারব ভেদাভেদ নেই, কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, ধনী-গরিব পার্থক্য নেই। আলাহ তাআলার কাছে তাকওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 
খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়েছে। মুসলিমদের জন্য করণীয় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয় হজের খুতবায়। এক আল্লাহর ইবাদত তথা নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত নিয়ে কুরআনের উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়। আহ্বান জানানো হয় পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষার। খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে। হজের খুতবায় শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা মুহম্মদ (স.)-কে শেষ নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তার কাছে নাজিলকৃত পবিত্র কুরআনে নামাজ, রোজ, জাকাত ও হজ ফরজ করেছেন।


মুসলমানদের কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই।  খুতবায় বলা হয়, আল্লাহ তাআলা মানুষকে শুধু ইবাদতের জন্য তৈরি করেছেন।  আল্লাহ তাআলার এই নির্দেশ অনুসারে মানুষকে নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে বলেছেন এবং তাকওয়া অবলম্বন করতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বাবা-মার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ তাআলা বাবা-মার পর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন, যে বান্দা নিজের ওপর জুলুম করে তার জন্য তওবার দরজা খোলা রয়েছে। তিনি  ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না। 

খুতবায় মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে বলা হয়, হে মানব সম্প্রদায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। মানবজাতির জন্য এমন বিধিবিধান তিনি পাঠিয়েছেন, যার মাধ্যমে মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। ন্যায়বিচার করতে হবে। কেননা এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসবকিছু ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। আমাদের আচরণে তা ফুটিয়ে তুলতে হবে।
এবার ২০টি ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হয়েছে। ভাষাগুলো হলো- ইংরেজি, ফরাসি, ফার্সি, উর্দু, হাউসা, রাশিয়ান, তুর্কি, বাংলা, চীনা, মালয়, সোয়াহিলি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, আমহারিক, জার্মান, সুইডিশ, ইতালীয় মালয়ালাম, বসনিয়ান ও ফিলিপিনো।
টানা চতুর্থবারের মতো বাংলা ভাষায় হজের খুতবা শোনা যায়।এবার খুতবার বাংলা অনুবাদ করেছেন আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান ও ড. খলিলুর রহমা। তাদের সঙ্গে আরও রয়েছেন মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। মানারাতুল হারামাইন অ্যাপ, আল কোরআন চ্যানেল ও আস সুন্নাহ চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটারে খুতবাটি শোনা যায়। 
শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহম্মদ বিন সায়িদ বলেন-দ্বীন ইসলাম আমাদের কাছে আল্লাহর আমানত। সুতরাং যথাযথভাবে এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং চর্চা ও পালন আমাদের দায়িত্ব। বিশুদ্ধ ইমান এবং আমল এ দায়িত্ব¡ আদায়ের প্রথম শর্ত। হযরত মুহম্মদ (সা.) আমাদের সবার রাসূল। তার প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা ও গভীর বিশ্বাস ঈমানের পূর্বশর্ত। মুসলমান হিসেবে প্রতিটি কাজে আমাদের নীতিবান, ন্যায় পরায়ণ এবং সৎচরিত্রের অধিকারী হতে হবে। মুসলমান হিসেবে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে শরীয়তই আমাদের প্রধান উৎস।


একে কেন্দ্র করেই আমাদের জীবন চালাতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ভালো কাজে ব্যয় করতে হবে। বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা উন্নতি, প্রগতি এবং সভ্যতার মোহে অনৈসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতির প্রতি যেভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সুতরাং বিপদঘেরা এমন দুঃসময়ে আল্লাহপাকের নির্দেশিত পথে ফিরে আসাই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। এ প্রত্যাবর্তনের এখনই সময়। আল্লাহর রজ্জু আঁকড়ে ধরা ছাড়া আমাদের কল্যাণ এবং সমাধানের কোনো  বিকল্প নেই।
হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবের গৃহীত যাবতীযয় পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে তাদের কৃতজ্ঞতা জানান। এ ছাড়া আরব বিশ্বের সমস্ত মুসলমানের ঐক্য ও সংহতির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে শায়খ বলেন, দুনিয়ায় ফেতনা সৃষ্টিকারী ও শান্তি বিনষ্টকারীরা পরকালে অবশ্যই শাস্তি পাবে। আল্লাহ ও রাসূলের তরিকায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মানুষের কল্যাণে ব্রত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, শান্তির ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকতে পারে না। বর্তমান বিশ্বের সম¯ত মুসলমানের ওপর অত্যাচারীদের হেদায়েত করার জন্য আল্লাহর খাস রহমত কামনা করেন। 
দুপুরে খুতবার পর জোহর ও আছরের নামাজ আদায় করেন হাজিরা। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে পাঁচ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায়ের নিয়তে রওনা হন। রাতে সেখানে অবস্থান করেন খোলা মাঠে। শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করেন এখানেই। আজ বুধবার মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিদের কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানের উদ্দেশে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (মাথা ন্যাড়া করে) গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরো কাপড় বদল করবেন।


এর পর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় আরও এক বা দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করবেন। এর পর আবার মক্কায় ফিরে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। আগে যারা মদীনায় যাননি, তারা বিদায়ী তাওয়াফের পর মদীনায় যাবেন। যারা আগে মদীনায় গেছেন, তারা নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।
হজের তিন ফরজের মধ্যে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হিজরী ১০ সালে অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হজ চলাকালীন সময় আরাফাতে অবস্থিত জাবালে রহমত পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মুসলমানদের উদ্দেশে হযরত মুহম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এটাই ছিল তার জীবনের শেষ ভাষণ। তাই সচরাচর এটিকেই বিদায় খুতবা বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
প্রতিবারের মতো এবারও মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজীকে বিনামূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হয়। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজিদের নানা উপহার দিয়েছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল