• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

তারেক রহমানের সঙ্গে ইসরাইলি গোয়েন্দার যোগাযোগ, গোপন ভিডিও ফাঁস

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

ইসরাইলি লিকুদ পার্টির সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের। তার একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এই গোয়েন্দার বৈঠকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রায় দুই মিনিট ব্যপ্তির ভিডিওতে দেখা যায়, মেন্দি এন সাফাদি তারেক রহমানকে তার বার্তা দিচ্ছেন। তার পাশে দাঁড়িয়ে বিএনপির কৃষি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ কৃষিবিদ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক।


ভিডিওতে মেন্দি এন সাফাদি তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শুভ সকাল মিস্টার তারেক রহমান। আমি মেন্দি। আপনার টিমের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি মনে করি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা নিয়ে আমি কাজ করছি। যেসব তথ্য আমি চেয়েছি, এবং যেগুলো পেয়েছি সব বিষয়েই আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমাদের মিশন সম্পর্কে কথা হয়েছে।

তারেক রহমানকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সাফাদি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার পেছনে যে টীম রয়েছে। তারা আমাদের মিশন সফল করার জন্য কাজ করছে। এ টিম বাংলাদেশের মানুষের মুক্ত জীবন ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করবে।

বিএনপির এই পলাতক নেতাকে দেশে ফেরানোর আশ্বাস দিয়ে ইসরাইলি গোয়েন্দা বলেন, আমি আশা করি, এ টিম আপনাকে বাংলাদেশের নেতা হিসেবেও প্রত্যাবর্তন করাবে। এছাড়া দেশে দণ্ডিত হয়ে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সাফাদি বলেন, ধন্যবাদ। আশা করি, আপনার সঙ্গে খুব শিগগিরই লন্ডনে দেখা হবে।


এই ভিডিওটি কবে ধারণকৃত সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওর কমেন্টে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সরকার পতনের ঘোষণা কী মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে হওয়া এই মিটিং এর কারণেই?

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১-০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে হাওয়া ভবন খুলে সমান্তরাল সরকার গঠন করেছিলেন তারেক জিয়া। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ছিল তার প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী। তারেক জিয়ার প্রতিনিধি মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীরাই ছিলেন মূলত তার অঘোষিত রাজত্ব কায়েমের হাতিয়ার। বনানীর হাওয়া ভবনে তারেক জিয়ার সরকার পরিচালনার অফিস। হাওয়া ভবনে বসেই প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মের ভাগ দিতে হতো তাকে। তখন তারেক রহমানের নামের সঙ্গে চালু হয়েছিল 'মি. টেন পার্সেন্ট'। ওই সময়ে হাওয়া ভবন খ্যাত দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাতি লাভ করেন তারেক জিয়া। উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া তারবার্তায় তার দুর্নীতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার্তা পাঠান তৎকালীন সময়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি।


এরপরে সেনা সরকার ক্ষমতায় এলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর কয়েকমাস কারাবাস শেষে মুচলেকায় মুক্তি পাওয়ার পর তারেক রহমান ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর পরিবারের সদস্যদেরকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন।

সেনা সরকারের শাসনামল ও পরবর্তীতে তার নানা দুর্নীতি ও অপকর্ম সামনে আসতে থাকে। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা অনেক মামলার মধ্যে মুদ্রা পাচারের মামলায় হাইকোর্টের রায়ে ৭ বছরের দণ্ডাদেশ হয়। এরপর জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক জিয়ার কারাদণ্ডের রায় হয়। খালেদা জিয়ার হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও তারেক জিয়ার হয় ১০ বছর সাজা। আগের দুটি মামলায় তার যথাক্রমে ৭ ও ১০ বছর কারাদণ্ড হলেও তা ছাপিয়ে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় তার সাজা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায় একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাটি। এই মামলাটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডদানের দাবি জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।


এদিকে সম্প্রতি বিএনপির ঘোষণা করা ২২ দফায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা নিয়েও শুরু হয় সমালোচনা।

রাজনৈতিক কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা বলা হলেও আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্তদের নেতৃত্বের শীর্ষে রাখাকে বিএনপির জন্য ‌‌‘সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়’ বলে মন্তব্য করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে, আবার সাজাপ্রাপ্তদের দিয়ে দল পরিচালনা করছে। এটা সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচয়। সব দেশেই রাজনৈতিক পদ্ধতি হলো- যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা নিজেদের দণ্ডিত মনে করে না। প্রতিপক্ষ দুর্নীতি করে (বলে মনে করে)। আর যখন প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় থাকে, তখনও তারাও এভাবে ভাবে। তারা (প্রতিপক্ষ) ক্ষমতায় এলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে বলে। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেরও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তারা (বিএনপি) ২৭ দফা বাস্তবায়নের জন্য সক্ষমতা রাখে? তাদের দলের যে ইতিহাস, তাদের যে অভিজ্ঞতা, তাদের সঙ্গে জনগণের যে অভিজ্ঞতা, সেটা বিবেচনায় নিলে বলা যায়, অনেক রাজনৈতিক দল ইশতেহার তৈরি করে, সেটা ক্ষমতায় গেলে চিত্রটা অন্যরকম হয়। সে হিসেবে এটা একটা উইশ লিস্ট।’

খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং তারেক রহমান দণ্ডিত আসামি। আইনের দৃষ্টিতে তারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য। এ সম্পর্কে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অভিযোগ হয়েছে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। বিষয় হলো অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণিত হয়েছে কি-না।

‘যেহেতু আদালত থেকে তারেক রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের কথা বলা হয়েছে ও খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। এরপরও তারা দলের নেতৃত্বে রয়েছে। এটা তাদের দলের নৈতিক অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত,’ যোগ করেন ইফতেখারুজ্জামান।

২০১৬ সালে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী বিদেশে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুজনের ছবি ফাঁস হয়ে গেলে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। 

একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশে আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানায় পুলিশ।

এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক এবং সম্প্রতি উঠতি এক রাজনীতিবিদদের বৈঠককে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান জানান, এদেশের ৯০ ভাগের বেশি জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আর দেশের সিংহভাগ জনগণকে বাদ দিয়ে কেউ কিভাবে গণতন্ত্রকামী নেতা হতে পারে?

মেন্দি এন সাফাদি'র পরিচয় তুলে ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, তার নাম মেন্দি সাফাদি নয়। তার আসল নাম মুনজের সাফাদি। তিনি গুলেন হায়েস্তের একজন সিরিয়ান। যেটা ১৯৬৭ সালে ইসরাইল দখল করে। এই ব্যক্তি মোসাদকে সহায়তা করে, যে কারণে তার মা-বাবা, ভাই-বোন সাফাদিকে ত্যাগ করে এবং পরিবার থেকে বিতাড়িত করে। ফলে সে গুলেন হায়েস্ত ছেড়ে তেল আবিবে যায় ও সেখানে শিক্ষা জীবন শেষে মোসাদে যোগ দেয়।

মুসলিম ও ইসলাম বিরোধী এই মেন্দি এন সাফাদি সরকার পতন নিয়ে যেই কথা বলে তা ফাঁকা বুলি বলে মন্তব্য করেন ফিলিস্তিনের এই রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এমন চরিত্রের একজন মানুষের সঙ্গে দেখা করে কেউ যদি বড় কিছু হয়ে যেতে চায়, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। যদি কেউ মনে করে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার মাধ্যমে সে বড় রাজনীতিবীদ হয়ে যাবে, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। 

তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের মানুষ স্মার্ট। যখন এ দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ আমাদের পাশে আছে তখন কোন ব্যক্তি কোথায় কার সঙ্গে মিটিং করলো তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবো তাদের সমর্থনের জন্য। আমরা কখনোই ভুলে যাবো না। আমাদের সন্তানরাও মনে রাখবে। এই দেশের মানুষ, দেশের সরকার কীভাবে আমাদের পাশে ছিলো। সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে যেখানেই সমর্থন দরকার হয়েছে বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়েছে। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ যখনই এসেছে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম আমাদের পক্ষে তার ভোটটি দিয়েছে। এ সবই ফিলিস্তিনের ইতিহাসে লেখা থাকবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল