• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ফুটবলে কাছে হার নয়, মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ফুটবল কোচ জামিল

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

ফুটবলের কাছে হার না মানলেও জীবনের কাছে কঠিন সত্য মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন। টাঙ্গাইলের ফুটবলার তৈরীর কারিগর আতিকুর রহমান জামিল ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সার্পোটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুর আনুমানিক দেড়টার সময় ইহ্জগত ত্যাগ করে অন্য জগতে হারিয়ে গেলেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর। টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ড থানাপাড়া নিবাসী আকবর আলী খান (কালা খোকা) ও টাঙ্গাইল সদরের সংক্ষরিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনোয়ারা বেগমের ৪ ছেলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র আতিকুর রহমান জামিল।
পেশায় নামকাওয়ান্তে ঠিকাদার হলেও ফুটবল ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী, শ্বয়নে, স্বপনে সারাক্ষণ তার চিন্তায় ফুটবল। যে কারনে ঠিকাদারের পেশায় তিনি ভালো করতে পারেননি। তিনি পেরেছেন ফুটবলকে আকড়ে ধরে রাখতে, তিনি পেরেছেন টাঙ্গাইলের জন্য, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবলের জন্য ফুটবলার তৈরী করতে।
বর্তমান জাতীয় দলের সেরা রক্ষণসেনা বিশ্বনাথ ও রায়হান হাসান, মধ্যমাঠের রফিক ও জুবেল ছাড়াও একসময়ের তারকা ফুটবলার পিযুয নন্দী, উত্তম, সুমন, আতিক,রাসেল মাহমুদ লিটন ছাড়াও অসংখ্য ফুটবলার তৈরী করেছেন। তিনি বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জের খেটে খাওয়া দরিদ্র কিংবা স্বচ্ছল প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করে তার টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমীতে এনে বিনামূল্যে নিবিড় প্রশিক্ষণ দিতেন।
টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে নদীর ধারে টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমীর টিনের দোচালা ঘর। এই ঘরেই কোচ আতিকুর রহমান জামিল বিভিন্ন এলাকার ও বিভিন্ন বয়সের সকল ফুটবলারদের বসবাস করতেন। প্রতিদিন সকাল বিকাল প্রাকটিস করাতেন। কোচ জামিল তাদের হাত ধরে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে কিংবা প্রয়োজনে ধমক দিয়ে ফুটবল শেখাতেন।
৩ কন্যা (মেঘলা, পারিসা ও পায়েল) সন্তানের বাবা। ফুটবল অনুরাগীনী আতিয়া খানমের স্বামী। ফুটবলকে মন থেকে প্রচুর ভালবাসতেন তাই তো টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে ১৯৮০ সালে স্থানীয় আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে ফুটবল ডিফেন্ডার হিসেবে অভিষেকের ২ বছর পর থানা ইলেভেন বুলেটস পক্ষে ১৯৮৩ সালে খেলতে গিয়ে ইনজুরি শিকার হলে চিরদিনের জন্য খেলা বন্ধ হলেও ফুটবলকে ভালবেসে ফুটবলের কোচ হিসেবে আর্বিভূত হয়।
১৯৮৪ সালে ঢাকায় এরশাদ টুনামেন্টে তখন কার সফল কোচ মনোজ কান্তি বিশ্বাসের সহকারী হিসেবে কোচিংয়ে যাত্রা শুরু। সেই টুর্নামেন্টের টাঙ্গাইলের সেরা খেলোয়াড় হলেন পিযুয নন্দী, কাকন, রঞ্জন, উত্তম, শিল্পী, সুমন, গোবিন্দ, শিমুল, ও বজলু। ২০১২ সালে টাঙ্গাইলের জেএফকাপ টুর্নামেন্টের সাফল্য দেখে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারন সম্পাদক আলী ইমাম তপনের হাত ধরে টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমী গঠন করা হয়।
এতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক শিল্প মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ১২ লক্ষ টাকা অনুদান দিলে একাডেমীটি বীর দর্পে সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলে। ঢাকা রাজউক এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার টিপু মুন্সী সহযোগিতায় ঢাকা পাইনিয়র লীগে ২০১২ সালে থেকে অংশ গ্রহন করে ৩ বার ২ সেমি ফাইনালে উঠেছে এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে চমৎকার নৈপ্যুনের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভাল খেলার স্বাক্ষর রেখে রানার্সআপ হয়ে তৃতীয় বিভাগে খেলায় উন্নিত হয়েছে।
পাইনিয়র থেকে উঠে টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমী ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে গিয়ে তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার সহকারী কোচ রনজিৎ দাশের অধীনে টাঙ্গাইলের ভবিষ্যৎ ফুটবলাররা এই তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে অংশগ্রহন করে থাকে। দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক আতিকুর রহমান জামিল টাঙ্গাইল ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ফুটবলকে ভালোবেশে অনেক কিছু দিয়েছেন।
তিনি নিজের পরিবারের দিকে না তাকিয়ে তার ফুটবল ক্যাম্পের পিছনের অকাতরে টাকা খরচ করছেন। টাঙ্গাইল ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ফারুকের সহযোগিতায় তিনি তার তৈরী করা ফুটবলারদের বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করিয়েছেন। এছাড়া টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের ফুটবল লীগ আয়োজন করে ফুটবল প্রেমীদের দর্শকদের আঙ্খাকা পূরন করেছেন। তিনি বছর তিনেক আগে লিভার ও কিডনি সমস্যায় অসুস্থ হলেও তার তৈরী করা ফুটবলারদের কাঁধে হাত রেখে মাঠে আসতেন, খেলার খোঁজখবর রাখতেন।
তিনি থানাপাড়া ইলেভেন বুলেটস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। তিনি তার ক্লাবের ফুটবলারদের কোচিং করিয়ে টাঙ্গাইল প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে ৭ বার চ্যাম্পিয়ন করেন। কোচ আতিকুর রহমান জামিলের কোন কোচিং সাটিফিকেট নেই, কিন্তু ফুটবলকে ভালবেসে তিনি নিরবে কাজ করে গেছেন। তার কাজের বড় সাফল্য, তিনি ফুটবলারদের নিয়ে দক্ষিন আফ্রিকায় গিয়ে সারা বিশ্বের ফুটবলারদের মাঝে সফলতার স্বাক্ষর রেখে ডানোন নেশন কাপে ২৩ তম প্লেস করেছেন।
তিনি একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ফুটবল সর্ম্পকে তিনি বলেছিলেন ফুটবল এগিয়ে যাবে তখনই যখন বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত ফুটবল লীগ হবে। বিভিন্ন চাকরি ক্ষেত্রে ফুটবলার কোঠা থাকলে ফুটবলাররা উৎসাহী হবে। টাঙ্গাইল ফুটবল লীগ নিয়মিত না হওয়ায় তিনি হতাশ হতেন। তাঁর দাবী ছিল নিয়মিত বিভিন্ন বয়সের ফুটবল লীগ। যে ফুটবল লীগের মাধ্যমে ফুটবলার তৈরী হবে এবং ফুটবল লীগের তারকা ফুটবলার আন্তজার্তিক পর্যায়ে খেলে সুনাম করবে।
তিনিও আশাবাদী ছিলেন বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে। তিনি টাঙ্গাইলের ফুটবলার ও দর্শকদের কাছে ছিলেন“জামিল বস” । জামিল বস ফুটবলের কিংবদন্তী ফুটবল বস হয়ে ক্রীড়াপ্রেমী টাঙ্গাইলবাসীর মনে চিরজাগরুক হয়ে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে চিরশান্তিতে ঘুমিয়ে থাকবেন। টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম কিংবা বাসাখানপুরে শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে যখন ফুটবল জোয়ার নামবে, তখন হয়ত অনেকেরই মনে ফুটবলার তৈরী কারিগর“জামিল বস” লোকটির কথার স্বরণে আসবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল