• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

মিটারের সঙ্গে মেলে না বিলের হিসাব

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৩  

ঘাটাইলে সেচ পাম্পের মিটার না দেখে বিল করায় অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষককে। তাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগকে বাববার মিটার দেখে বিল করতে বললেও তাদের সাড়া মেলেনি। এ কারণে পরিশোধ করতে হচ্ছে ভূতুড়ে বিল।

ঘাটাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের তথ্যমতে, তাদের অধীনে ২০২৩ সালে সেচ পাম্প রয়েছে ৮৮৯টি। ২৬ জুন ছিল সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের শেষ দিন। এরই মধ্যে কেউ কেউ বিল পরিশোধ করছেন। কেউ কেউ ভূতুড়ে বিল পরিশোধ করতে গড়িমসি করায় জরিমানার কবলে পড়ছেন। উপজেলার ৫০ জন সেচ পাম্প মালিকের সঙ্গে কথা হয় সমকাল প্রতিবেদকের। সেচ পাম্প মালিকরা বিদ্যুৎ বিলের কপিসহ ব্যবহৃত মিটারে বিদ্যুৎ ইউনিটের চিত্র দেখান প্রতিবেদককে। মিটারে বিদ্যুতের যে ইউনিট রয়েছে, তার সঙ্গে বিলের কপিতে লেখা ইউনিটের কোনো মিল নেই। গ্রাহকের অভিযোগ, বাড়তি বিলের বোঝা মাথায় নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না তারা। ঠিকমতো বিল পরিশোধ না করতে পারলেই জরিমানাসহ ঠুকে দেওয়া হয় মামলা।


দিঘলকান্দি ইউনিয়নের শ্যামবিয়ারা গ্রামের নূরুল আলমের সেচ পাম্পের বয়স পাঁচ বছর। তাঁর দাবি, এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের চেহারা এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁর মিটারে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ইউনিট রয়েছে ২৫ হাজার ৮৮৫। আর বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ ইউনিটের। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে তাঁর পাওনা ২ হাজার ৬১৫ ইউনিট। প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৮২ পয়সা ধরে হিসেব করলে অঙ্ক দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬০৪ টাকা। নূরুল আলমের ভাষ্য, অফিসে গিয়ে বারবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।

দিঘলকান্দি গ্রামের শহিদুর রহমানের সেচ পাম্প জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িতেই রাখা ছিল। এলাকাবাসী জানায়, জমিতে সরিষা থাকায় মার্চ মাস থেকে শুরু হয় বোরো চাষ। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলেও শহিদুর রহমানের মিটারে জানুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৫৮৯ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ হাজার ৭৮৩ টাকার ভূতুড়ে বিল করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, তাঁর সেচের আওতায় রয়েছে মাত্র ৯ বিঘা জমি। অন্যান্য সেচ পাম্প মালিক জানান, এই পরিমাণ জমিতে সর্বোচ্চ বিল আসার কথা ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। বাস্তবে মিটার রিডিংয়ে আছেও তাই– ১ হাজার ২২০ ইউনিট, যার মূল্য ৫ হাজার ৮৮০ টাকা। কিন্তু বিল কপিতে ইউনিটের ঘরে লেখা ১ হাজার ৫০০, আর টাকার ঘরে লেখা ২৬ হাজার ১৭৭। ক্ষুব্ধ শহিদুর বলেন, এসব অনিয়ম দেখার জন্য দেশে কি কেউ নেই!

জামুরিয়া ইউনিয়নের গালা গ্রামের আব্দুল মতিনের সেচ মিটারে বিদ্যুৎ ইউনিট রয়েছে ৩ হাজার ৯২৬। বিল করা হয়েছে ৭ হাজার ইউনিটের। আজহারুল ইসলামের মিটারে আছে ৬ হাজার ৯২০ ইউনিট, বিলের কপিতে লেখা ৯ হাজার ৪০০ ইউনিট। তাদের মতো ভুক্তভোগী হোসাইন সারোয়ার, রিপন মিয়া, শফিউজ্জামান তালুকদারসহ অনেকে। কিন্তু শ্যামবিয়ারা, দিঘলকান্দি, গালা গ্রামসহ ওই অঞ্চলের সেচ পাম্পের মিটার দেখে বিল করার দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেনের দাবি, মিটার দেখেই বিল করেছেন তিনি।

সন্ধানপুর ইউনিয়নে কৃষকের ভোগান্তির চিত্র একটু ভিন্ন। এখানকার গ্রাহকের দাবি, তাদের অধিকাংশ সেচ পাম্পের মিটার নেই; যা কিছু আছে তাও মিটার দেখে বিল করা হয় না। করা হয় অফিসের ইচ্ছেমতো।

দিয়াবাড়ি গ্রামের মাহবুব হোসেনের ভাষ্য, মিটার দেওয়ার নামে অফিসের লোকজন দেড় বছর আগে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে ২৭ হাজার। একই কথা দুলাল হোসেনের। তিনি বছরখানেক আগে দিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। এখনও তাদের পাম্পে মিটার লাগেনি। অথচ বিদ্যুৎ অফিসের তথ্যমতে, সেচের একটি মিটার লাগাতে খরচ হয় ১৪ হাজার ৬০০ টাকা। মাহবুব হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ অফিসে গেলে তারা শুধু বলে দেব, দিতেছি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মিটার দিলেই তো ৪ টাকা ৮২ পয়সা প্রতি ইউনিটের বিল করতে হবে। এতে তো বিদ্যুৎ অফিসের ব্যবসা কমে যাবে।’ এই এলাকার মিটার দেখে বিল করার দায়িত্বে আছেন উপসহকারী প্রকৌশলী রাসেল। তাঁর ভাষ্য, মিটার দেখেই বিল করা হয়। যেসব সেচ পাম্পে মিটার নেই, সেগুলোর বিল অফিসের নিয়ম মেনেই করা হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ঘাটাইল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মিটার দেখেই বিল করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বিল পরিশোধ করেছেন গ্রাহক। গড় বিল করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মিটারের স্বল্পতা রয়েছে। তাই গড় বিল করা হয়।’

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল