• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ড্রাগন চাষে স্বাবলম্বী ঘাটাইলের কৃষকরা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৩  

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় ভিনদেশি ড্রাগন ফলের চাষ বেড়েছে। শখের বসে ড্রাগন বাগান শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই চাষ করছেন ভেষজগুণ সমৃদ্ধ মিষ্টি ও সুস্বাদু ড্রাগন ফল। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ঘাটাইলে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চায় শুরু হয়।
চাষিদের দাবি, বর্তমানে উপজেলার ৩৫০ একর জমিতে ড্রাগনের আবাদ হচ্ছে। প্রতি বছরই বাড়ছে এই ফলের চাষ। চারা রোপনের পর বছর ঘুরতেই শুরু হয় বাগানে ফুল আসা। ফুল আসার ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মাথায় কাটা যায় রসেভরা পাকা ফল। আর একটি ড্রাগন গাছ টানা ৩০-৪০ বছর ফল দিতে সক্ষম। এ কারণেই চাষিরা ঝুকছেন ড্রাগন ফল চাষে।

উপজেলার ড্রাগনচাষি সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, ঘাটাইলের পাহাড়িয়া এলাকার সাতটি ইউনিয়নে ছোট বড় ৭০টি ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। সাগরদিঘি, জোড়দিঘি, লক্ষিন্দর, মাকড়াই, মহিষমারা, গারোবাজার, সরাবাড়ি কাজলা, করিমগঞ্জ, মধুপুরচালা, মুরাইদ, বাসাবাইদ, সিংহেরচালা মোমিনপুর এলাকায় ড্রাগনের বাগান বেশি।

উপজেলা কৃষি অফিস ও ড্রাগন চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ড্রাগন ফলের আদি নিবাস মেক্সিকো। বর্তমানে আমেরিকা, ভিয়েতনাম, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ফল বেশ জনপ্রিয় খাবার হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশেও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের আবাদ শুরু হয়েছে।

মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা এ ফল। ক্যাকটাস জাতীয় ড্রাগন ফল গাছ সিমেন্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হয়। ড্রাগনের ফুল সাদা ও লালচে লম্বাটে এবং অনেকটা নাইট কুইনের মতো। এ ফল লাল ও সাদা দুই রঙেরই হয়। গাছ লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে এবং ৩০-৪০ দিনের মধ্যে তা খাওয়ার উপযোগী হয়। ড্রাগন গাছে বছরে তিন থেকে পাঁচবার ফল আসে। গাছের সঠিক পরিচর্যা করলে ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।

উপজেলার ড্রাগনচাষি সমিতির সভাপতি আবু হাসনাত তালুকদার জানান, ২০১৮ সালে ঘাটাইল উপজেলার কাজলা গ্রামে আমি প্রথম ড্রাগন ফল চাষ শুরু করি। বর্তমানে ২০ বিঘা জমিতে আমার ড্রাগনের বাগান রয়েছে।

ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ৩৫০ একরের উপরে জমিতে ড্রাগনের আবাদ হয়। ছোট বড় মিলিয়ে বাগান রয়েছে ৭০টি। এক বিঘা জমিতে ৫০০টি চারা রোপণ করা যায়। প্রতি মৌসুমে একটি গাছ হতে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এক বিঘা জমির ড্রাগনের বাগান থেকে খরচ বাদে বছরে লাভ পাওয়া যায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বছর ঘাটাইলে ড্রাগন চাষিরা ২০-২৫ কোটি টাকা আয় করে থাকে। ড্রাগন ফলের বাগানে হলুদ, পেঁপে, সবজিসহ নানা ধরনের সাথী ফসল আবাদ করা যায়।

উপজেলার সাগরদিঘি গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান শরীফ জানান, তিনি বেইলা গ্রামে দেড় একর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন। বাগানে ফল আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বাগান থেকে পাইকারী ২৫০-৩০০ টাকা টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ড্রাগন চাষি হেকমত সিকদার জানান, তিনি গত বছর দুই একর জমিতে ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়েছেন। এ বছরই প্রথম ফল এসেছে। এবার তিনি ১০ লাখ টাকার মতো ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, পাহাড়ি এলাকা ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করছে এবং প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে। আমরা ড্রাগন চাষিদের সবসময়ই প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল