• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

গোপালপুরে ১০ একর জমিতে হাসছে সূর্যমুখী ফুল

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৩  

কম খরচে অধিক ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে তেল জাতীয় বীজ সূর্যমুখীর চাহিদা দেশজুড়ে। ভোর হলেই মিষ্টি সোনা রোদে জমিতে চোখ ঝলমল করে উঠে সূর্যমুখী ফুলগুলো। সেসময় ভোরের সূয্যি মামার সঙ্গে সূর্যমুখীর বাগানের ফুলগুলো সূর্যের হাসিতে জেগে ওঠে। এ যেনো সবুজ পাতার আড়ালে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী।
সূর্যমুখী দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে তাই এ ফুলের নাম সূর্যমুখী ফুল। এছাড়াও সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন চলে প্রজাপতি আর মৌ-মাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্যে দেখে যেমন খুশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, তেমনি মোহিত করছে ফুলপ্রিয় মানুষকে। শুধু তাই নয়, সবুজ ও হলুদ রঙয়ের মিশ্রণে সূর্যমুখী দেখতে যেমন অদ্ভুত আকষর্ণীয় সুন্দর, তেমনি রয়েছে অনেক গুণাগুণ। পুষ্টি গুণেও স্বাস্থ্যসম্মত। বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় গণপূর্ত বিভাগের বেদখল হওয়া ১০ একর জমি উদ্ধার করে সেখানে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছে জেলা প্রশাসন। এখন বাগানজুড়ে ফুটেছে সূর্যমুখী। নয়নাভিরাম সেই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

এ বাগান থেকে ১০ টন সূর্যমুখী বীজ ফলনের আশা করছে কৃষিবিভাগ। সূর্যমুখীর চাষকে উৎসাহিত করতে এ বীজ টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোপালপুর পৌরসভার ভুয়ারপাড়া এলাকায় গণপূর্ত বিভাগে একটি ইটভাটা ছিলো। সেটি ৭০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। পরে জমিটি পরিত্যক্ত থাকায় স্থানীয় ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে দখল করা শুরু করেন। কেউ কেউ ওই জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের উদ্যোগে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে আনা হয়। সম্প্রতি ওই ১০ একর জমির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জমিটি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সেখানে সূর্যমুখী চাষ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সূর্যমুখীর সমারোহ। ১০ একর বাগানের চারপাশ বাঁশ ও নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মানুষ আসছেন বাগান দেখতে। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন অনেকে।

হেমনগর এলাকা থেকে আসা শামীম হোসেন জানান, ঢাকা থেকে তাদের স্বজনেরা এসেছেন, তাদের এই বাগান দেখাতে নিয়ে এসেছেন। এত বড় সূর্যমুখী বাগান দেখে তারা অভিভূত।

বাগানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আব্বাস আলী বলেন, ফুল ফোটার পর থেকেই প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ বাগান দেখতে আসছেন।

গোপালপুরের শহিদুল ইসলাম জানান, এখানে সূর্যমুখী চাষ করায় একদিকে তৈলবীজ উৎপাদিত হচ্ছে, অপরদিকে মানুষের বিনোদনের একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমা আক্তার বলেন, ১০ একর জমিতে ৪০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের দেশের আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের জন্য অনেক উপযোগী। দুই হাজার টাকা কেজি বীজ কিনে রোপণ করেছিলাম। আমরা আশা করছি, এখান থেকে প্রায় ১০ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদিত হবে।

তিনি আরো বলেন, ১ মণ বীজ থেকে ১৭ থেকে ২০ কেজি তেল হয়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী তেলের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সূর্যমুখীর উপকারিতা ও সয়াবিনের অপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে পারলেই সূর্যমুখী চাষ আরো বাড়বে।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। বাগান থেকে যে পরিমাণ সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদিত হবে, তা টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল