• বুধবার ২২ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

যে কোনো প্রলোভনে ধর্মান্তরিত করা সব সমাজেই নিষিদ্ধ : ঢাবি ভিসি

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি, বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর নানা দেশে যে কোনো কারণে যখন মানুষ বিধ্বস্ত হয়, অসহায় হয়ে পড়ে, তখন কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের সহযোগিতার জন্য অর্থ ও ধর্মীয় গ্রন্থ নিয়ে এগিয়ে যায়। অর্থাৎ, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টার প্রবণতা সেসব জায়গায় দেখা যায়। কিন্তু মূল কথা হলো—কোনো প্রলোভনে কোনো ধর্মান্তর প্রক্রিয়া পরিচালনা করা সম্ভবত সব সমাজেই আইনত নিষিদ্ধ। সেটি করা ঠিক নয়। তাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।’

গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় ঢাবির মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ভিসি।


ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে যুগে যুগে অশুভ শক্তির উত্থান হয়েছে, আবার তা প্রতিহতও হয়েছে। সমাজের মধ্য থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিহত করার সেই শক্তির জন্ম হয় এবং সেসব অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য কিছু মানুষেরও জন্ম হয়। এ অঞ্চলে যেমন জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।’

ঢাবি উপাচার্য আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আলোকে দেশ চললে অশুভ শক্তিরা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিলেও সব ধরনের অশুভ শক্তির বিনাশ হবেই। দেশ এগিয়ে যাবে।’

আগামীর বাংলাদেশ সম্প্রীতি ও মানবিকতার বাংলাদেশ উল্লেখ করে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘বিজয়ী বাংলাদেশকে মেরামত করা যায় না। যারা মেরামত করতে চেয়েছে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রকে যারা শেষ করে দিতে চেয়েছে, বাংলাদেশকে পাকিস্তানি কায়দায় নিয়ে যেতে চেয়েছে—তারা কখনো সফল হবে না।’

এ সময় একুশে পদক পাওয়া জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে পৃথিবীর কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। আজকের এ অবস্থানে আসার পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ধর্মীয় বিভাজন দিয়ে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। এর উদাহরণ পাকিস্তান। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে খাদের কিনারে। সুতরাং, কোনো ধর্মীয় বিভাজন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়। সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করেছি, সবাই তার সুফল ভোগ করব, মিলেমিশে দেশটিকে গড়ে তুলব।’

ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত এক কোটির বেশি মানুষকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে এবং আমাদের যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে। সেই সঙ্গে দেশের সব ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে যে দেশটির জন্ম হয়েছিল, তার পেছনের প্রধানতম মন্ত্র ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধানেও সে চেতনারই প্রতিফলন দেখা যায়। আজ ধর্মীয় বেড়াজাল তৈরি করে যে অপশক্তি সেই দেশকে ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা করছে, তাদের প্রতিহত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে চার মূলনীতিকে দেশ পরিচালনার প্রধান স্তম্ভ করেছিলেন, সে চার নীতিকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহসীন হাবিব। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী। সঞ্চালনা করেন জাপান স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনার আলোকে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের মিত্র ও শত্রু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর আলোকপাত করেন। বক্তব্যে উঠে আসে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান মিত্র দেশ ভারতে প্রাণ বাঁচাতে এক কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন বাংলাদেশব্যাপী গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল, তখন ভারত মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল