• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আইএমএফ পাশে থাকবে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩  

চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আবারও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে সংস্থাটি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেরই বা প্রস্তুতি কি সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। রবিবার সকাল ১০টায় ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহ।


রাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আমন্ত্রণে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। নৈশভোজের আগে সন্ধ্যায় আইএমএফ ডিএমডি তাঁর প্রতিনিধিদলসহ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। দুটি বৈঠকেই তিনি চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে অর্থনীতিতে যে ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বৈঠক সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাঁচদিনের সফরে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
আইএমএফ ডিএমডি অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহের এবারের সফরটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছে সরকার। কারণ এ সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে তাঁর এই সফরে ঋণের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন আইএমএফ এর ডিএমডি। তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করছেন, অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। বাংলাদেশে আইএমএফ  কাউন্টার-পার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।


মেজবাউল হক আরও বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগুলো কীভাবে প্রণয়ন করা যায় এবং তার প্রয়োগের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির প্রভাব মোকাবিলায় আইএমএফ  কোন কোন খাতে অর্থায়ন করতে পারে তা এসেছে  আলোচনায়। করোনা ভাইরাস মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে প্রতিনিধি দল। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে আইএমএফ এর সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতা হয়। সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ঋণ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে মূলত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক প্রাধান্য পেয়েছে। আইএমএফ বলছে, এই সফর বংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সহায়ক হবে বলে তারা আশা করছে।

আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ অন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আইএমএফ ডিএমডি। বাংলাদেশ যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, সেসব বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আইএমএফ  কীভাবে সেসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে সহযোগিতা করতে পারে, সেসব বিষয় আসবে এসব বৈঠকে। এ ছাড়া বাংলাদেশে নারী অধিকার কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে আইএমএফ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে-আইএমএফের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পাবে বাংলাদেশ। মূলত সেই ঋণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগে ডিএমডি এই সফর করছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকেই বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হবে। আর সেই বোর্ড মিটিংয়ে বাংলাদেশ ঋণ পেতে পারে কি না কিংবা ঋণ ফেরত প্রদানে কতটা সক্ষম সে বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করবেন অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহ। এ কারণে তাঁর এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ। রবিবার সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও আইএমএফ ডিএমডি বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়া কেউ অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। এমনকি সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার রাখা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ।  এ কারণে চলতি বছরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রথম কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া পরবর্তী আরও সাতটি কিস্তিতে আইএমএফ ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধ করবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। এ ছাড়া নভেম্বর মাসে এই ঋণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা রাহুল আনন্দ। ওই সময় পনেরো দিন বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। সকল আনুষ্ঠানিকতা সেরে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আইএমএফ বোর্ড এ ঋণ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে। এ ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার উদ্দেশ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।
আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নভেম্বরের সফরের সময়  বেশকিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়। এরমধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। আইএমএফের সেই শর্ত মেনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে মূল্য সমন্বয় করেছে সরকার। এ ছাড়া দেশে আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়টি বিভিন্ন অঙ্গনে আলোচনায় গুরুত্ব পায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার, আইন বাস্তবায়ন ও ডিজিটালাইজেশন, ব্যাংক খাতের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ এবং সরকারের বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির বিষয়গুলো সেই আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে। আইএমএফের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সম্প্রতি জানানো হয়, মূল্যস্ফীতি সহনশীল রাখতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করে আইএমএফ। এজন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ঢাকা সফর করছেন মনসিও সায়েহ। ঋণ আলোচনা চূড়ান্ত করতে তিনি ঢাকা এসেছেন। এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববাজার উত্তপ্ত এবং ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে মার্কিন ডলার, যা আঘাত করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে।


এ কারণে আইএমএফের দিক থেকে সহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ যে ঋণ পাচ্ছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করবে। রাষ্ট্রীয় তহবিল ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় আইএমএফের ঋণ একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হবে বলেও মনে করছে আইএমএফ। এদিকে, আজ সোমবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করবেন আইএমএফ ডিএমডি।


ওই সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর এবং অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া এবারের সফরে আইএমএফ ডিএমডি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, তৈরি পোশাক খাতসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল