• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

সবুজের সমারোহে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৩  

শরতের শিশির ভেজা সকালে জামালপুর জেলার মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। স্নিগ্ধ সকালের রোদ্দুরে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন দেখা দিয়েছে রোপা আমনের পাতায় পাতায়। 
প্রকৃতি যেনো রোপা আমন মাঠে সবুজ রং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে এর রূপ আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে। একই সঙ্গে চিকচিকে সবুজ পাতাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে দিকদ্বিক। গ্রাম বাংলার দৃশ্য সত্যিই  কৃষককে আরো মনোমুগ্ধ করেছে।

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদরে ফসলের মাঠে কোথাও ফাঁকা নেই এক খন্ড জমি। যতদূর দৃষ্টি পড়ে সবুজ আর সবুজ। সেই সঙ্গে দূরে নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলায় সবুজের গাঢ় রঙে একাকার হয়ে নূতন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি।

জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ২০০ হেক্টর। তবে তার চেয়ে বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। তাছাড়া স্বল্প জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও তা বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে আমন ধানের ক্ষেত এখন গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠ পরিচর্যাতে কোনো কমতি নেই। কৃষক ধানের জমির চারদিক ঘুরে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ফলনও ভালো হবে বলেও আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, ছবিলাপুর, ফুলকোচা, ঝাউগড়া, কুলিয়া, মাহমুদপুর, শ্যামপুর, আদ্রা, নাংলা এলাকার আমনের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেত গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। যেন আমনের মাঠ গাঢ় সবুজ পোশাকে সজ্জিত হয়েছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে এখন কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফসল ভালো রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষেত থেকে আগাছা পরিষ্কার, পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার ও সার ছিটানোর কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। কৃষকরা সন্তানের মতো পরিচর্যা করছেন ফসলি মাঠের। 

কৃষকরা বলছেন মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর এ উপজেলায় আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা। ধানের চারাগুলো থেকে কয়েকদিন পর বের হবে থোর। এরপরই কৃষকদের আমন ক্ষেত থেকে বের হবে ধানের মৌ মৌ গন্ধ।

ঝাউগড়ার কৃষক আব্দুর রফিক বলেন, ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড় তেমন না থাকায় কয়েকদিনেই ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। পুরো মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ দেখা যায়। ফসলের এই রূপ দেখে মনে আত্মতৃপ্তি মিলে।

ছবিলাপুরের কৃষক নূর আমিন বলেন, মাঠজুড়ে ধানের সবুজ রং দেখলে মন ভরে যায়, বুকে তৃপ্তি আসে। আশা করছি এ বছর রোপা আমন ধানের ফলন ভালো হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুন্দরভাবেই বেড়ে উঠছে আমন ধান। এতে এ বছর আশানুরূপ ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকদের পাশে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে সবসময় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।

অপরদিকে জেলার সরিষাবাড়িতে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে এমনটাই সম্ভাবনার আসা জাগিয়েছে কৃষকরা। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চলতি আমন মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে ব্রি-৭৫ জাতের ধান সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে।

সরিষাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ১শ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ অতিরিক্ত করা হয়েছে।

আওনা ইউনিয়নের কাবারিয়াবাড়ী গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক ময়নাল হক জানান, সঠিক সময়ে পানি সেচ দিতে পারলে আল্লাহর রহমতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষক আছমত আলী ও কাশিনাথপুর গ্রামের কৃষক হারুনুর রশিদ বলেন, জমিতে সঠিকভাবে পানি সেচসহ পরিচর্যার ফলে এ বছর ভালো ফলন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। একই কথা বলেন পিংনার মেদুর গ্রামের আরশেদ আলীও।

আওনা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজুয়ান বলেন, এ বছর ব্রি-৭৫ ধান ভাল হয়েছে।

সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপ কুমার সিংহ বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সর্বদা মাঠে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করছেন এবং ফসলের রোগ-বালাই দেখে পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করি আমন ধানের উৎপাদন ভালো হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল