• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ফসলের মাঠে কৃষকের বন্ধু মুস্তাফিজ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৩  

কখনো ধান জমিতে, কখনো সবজি ফলমুল ক্ষেতে, আবার দেখা যায় ছাদ কৃষিতে। সকাল দুপুর, বিকাল ঘুরছেন এক মাঠ থেকে অন্য ফসলের মাঠে। দিচ্ছেন কৃষি পরামর্শও। ফসলের মাঠে কী করলে কৃষককের ফলন বৃদ্ধি পাবে সারাক্ষণ শুধু এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক বন্ধু মো. মুস্তাফিজুর রহমান। 
এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকায়। মৌসুম অনুযায়ী ইরি-বোরো, আমন, আউশসহ উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ, সবজি, ফলমুল, সৌখিন ছাদ কৃষি আবাদে কৃষকদেরকে তিনি সব সময় উৎসাহ ও সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। করছেন উঠান বৈঠক, আলোক ফাঁদ, কৃষক সমাবেশ, কৃষক মাঠ স্কুল, নিয়মিত কৃষকের খোঁজ খবর নেয়া, রোগবালাই আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ও  ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে সময় দেওয়ায় স্বল্প সময়ে তিনি কৃষকের বন্ধুতে পরিণত হয়ে উঠেছেন। এরইমধ্যে তিনি এলাকায় কৃষক বন্ধু হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। কৃষক বন্ধু মো. মুস্তাফিজুর রহমান আখাউড়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। 

এদিকে গত কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপদাহ চলছে। এর কিছুদিন আগ থেকে চলতি মৌসুমের ব্রি-২৮.২৯ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা দেয়। এ অবস্থায় কৃষকের চাইতে তার চিন্তা যেন শেষ নেই।
 
কী করলে ধান নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে তিনি দিন রাত ফসলের মাঠে গিয়ে জমির অবস্থা দেখছেন। সেই সঙ্গে কোন জমিতে কী প্রয়োজন কৃষকদেরকে তিনি পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন। 


স্থানীয় কৃষকরা ও তার পরামর্শে জমি আবাদসহ অন্যান্য কৃষি কাজ করে সফল হন। তার প্রতি কৃষদের এক প্রকার আস্তা তৈরি হওয়ায় মনের মাঝে তাকে প্রকৃত বন্ধুর জায়গা করে নেন। 

মুস্তাফিজ আখাউড়া পৌর সভা ব্লকের  দায়িত্ব পালন করলেও উপজেলার অন্যান্য ব্লকের কৃষকদেরকে দিয়ে থাকেন সু-পরামর্শ। বন্ধু মহলে নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করে কৃষি সেবা প্রচার করে যাচ্ছেন। তিনি মাঠে ঘাটে রোদ বৃষ্টিতে প্রচণ্ড তাপদাহতেও চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি তৎপরতা। 

কৃষক খোরশেদ মিয়া বলেন, এ মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমি আবাদ করেন। তিনি শুরু থেকেই কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তার এ পরামর্শে আশা করছেন এবার ফলন ভালো হবে।
 
কৃষক মিলন মিয়া জানান, আবাদকৃত জমিতে রোগবালায়ের আগাম সতর্ক বার্তা দিয়ে আসছেন। সেই সঙ্গে সফলের যে কোনো রোগ বালাইয়ে সমস্যা হলে তিনি ছুটে আসেন। বীজতলা তৈরি থেকে ফসল কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত পাশে থেকে সেবা দিয়ে আসছেন বলে জানান।

একাধিক কৃষক জানান, জমির রোগ বালাই ছাড়া সহজে তাদের কৃষি অফিসে যাওয়া হয় না। অনেক সময় গেলেও সেখান থেকে তারা কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন কিন্তু সহসায় তারা মাঠে আসে না। কিন্তু এ ক্ষেতে সম্পূর্ণ বিপরিত দেখা যায়। তিনি প্রতি নিয়ত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, পরামর্শ দেন এবং বেশিরভাগ সময় মাঠে পাওয়া যায়। যা আমাদের খুবই ভালো লাগে এবং কৃষি কাজে ভরসা পান।

কৃষক মো. জাহের মিয়া জানান, এ মৌসুমে তার ২ বিঘা জমিতে রোগ বালাই দেখা দেয়। তিনি বুঝতে পেরে প্রথমে কৃষক বন্ধু মুস্তাফিজকে ফোন দেন পরামর্শ নিতে। ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি তার বাড়িতে চলে আসেন। এরপর জমিনে গিয়ে জমির অবস্থা দেখে কিছু ওষুধ দিতে বলে। এখন জমির অবস্থা খুবই ভালো। 

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুস্তাফিজ বলেন, মাঠের ফসলের রোগ ও পোকা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তাপদাহ কমে গেলে ফিরে আসবে স্বাভাবিক অবস্থা। এরইমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে আউশ ধান বীজতলার কাজ শুরু হবে। বপন চলছে পাট, আদা, হলুদ লাগানো। কৃষি এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে, সেই সঙ্গে চলছে আম, লিচু, কাঁঠালসহ অন্যান্য ফলের পরিচর্যা। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পতিত জমির ওপর নেয়া হয়েছে নানা ধরনের পরিকল্পনা, যা দেশে থাকবে না এক ইঞ্চি ও অনাবাদি জমি। কৃষি হবে স্মার্ট, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ। তারই দিক নিদের্শনায় কৃষকের পাশে থেকে কৃষি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। 

তিনি আরো বলেন, কৃষি নির্ভরশীল এই দেশে অর্থনীতি উন্নয়নে কৃষকের অবদান সবচেয়ে বেশি। আধুনিক বীজ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষক এবং এই প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, আমরা সব সময় কৃষকের কল্যাণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। ফলন বৃদ্ধিতে তাদেরকে সব সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।  

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল