• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

গাজাকে ধ্বংসস্তূপে রূপ দিতে চায় ইসরায়েল!

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৩  

গাজায় ভয়ংকর কিছু ঘটাতে যাচ্ছে ইসরায়েল। পুরো উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে চায় দেশটি। এর ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। কারণ উত্তর ও দক্ষিণ গাজা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর গাজা থেকে ১১ লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে তেলআবিব। যদিও বাস্তবে সেটা অসম্ভব। কারণ এমন কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই যেখানে ফিলিস্তিনিরা যেতে পারেন।

এদিকে দক্ষিণ গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদেরকেও বাসস্থান ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইসরায়েল। হামাস এই নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল সফরে গিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সবধরনের সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি প্রয়োজনে ইসরায়েলে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে বলেও জানিয়েছেন।

সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন গাজায় হামলা চালানোর জন্য। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় গাজার বাড়ি-ঘরগুলো যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মানুষ বাঁচার তাগিদে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠছে যে নিরাপদ আশ্রয় তো দূরের কথা আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই। এরই মধ্যে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সংস্থাটিকে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত সব মানুষ গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে দেওয়া হোক। জাতিসংঘ জানায়, ওই এলাকায় প্রায় ১১ লাখ মানুষ বসবাস করে, যা পুরো গাজা উপত্যকায় বসবাসরত মানুষের প্রায় অর্ধেক। এই অঞ্চলের মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ গাজা শহরও রয়েছে। এই সতর্কতা গাজা ও জেরুজালেমের স্থানীয় সময় মধ্যরাতের আগে জারি করা হয়। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলে, ‘জাতিসংঘ মনে করে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় ছাড়া এ ধরণের স্থানান্তর সম্ভব নয়।’

ইসরায়েল একটি স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এরইমধ্যে গাজা সীমান্তে সেনা মোতায়েন, ভারী আর্টিলারি এবং ট্যাংক জড়ো করেছে তারা। গত শনিবার ইসরাইলে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের কূটনীতিক গিলাদ এরদান, গাজা থেকে বাসিন্দাদের স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের স্থানান্তরের নির্দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটির বিবৃতি লজ্জাজনক। তিনি বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময় যাতে জড়িত নয় এমন বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায় তার জন্য গাজার বাসিন্দাদের আগে থেকেই সতর্ক করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায়ও লিফলেট ফেলছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। এসব লিফলেটে এখানকার বাসিন্দাদেরও সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে বাসভবনে ফিরে না আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

ইসরায়েল বলেছে, গত ছয় দিনে গাজায় হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে চার হাজার টন ওজনের প্রায় ছয় হাজার বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। বিমানবাহিনী বলেছে, বিমান হামলায় মোট ৩৬ হাজারের বেশি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির পার্লামেন্টে যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বলেছেন, কঠিন সময় আসছে। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় শোচনীয় অবস্থা চলছে কারণ খাবার এবং পানি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী প্রয়োজনীয় কোনো সেবা গ্রহণ করতে পারছে না। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন স্বাস্থ্যকর্মী গাজায় নিহত হয়েছে। ইসরাইল প্রতিশোধ হিসেবে বিমান হামলা শুরু করার পর থেকে গাজায় এ পর্যন্ত চার শতাধিক শিশুসহ ১৮ শ’ মানুষ নিহত হয়েছেন। আরো তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত শনিবার ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩শ’ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরো ১৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার?
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজা ও লেবাননে বিতর্কিত সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। অতি দাহ্য এই রাসায়নিক অনেক সময় সামরিক বাহিনী তাদের সীমান্ত নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করে। কিন্তু এটা মানুষকে মারাত্মকভাবে পুড়িয়ে দিতে পারে। আর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলে বিশেষ করে গাজার মতো এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যবহার করা হলে এটি প্রচন্ড মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের যুদ্ধ জাহাজ
ব্রাসেলসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াব গ্যালান্ট ন্যাটোভূক্ত পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ন্যাটো জোট হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে একে অযৌক্তিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে উল্লেখ করেছে। একইসঙ্গে ইসরাইলের প্রতি তারা সমানুপাতিক হারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, সংঘাত শুরু হয়ে গেলে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা জরুরী। কারণ যুদ্ধের নিয়ম রয়েছে।’ সহায়তার প্রশ্নে ন্যাটো জোট ভুক্ত দেশগুলো জানায়, তারা ইসরাইলকে বাস্তবিক সহায়তা দিচ্ছে। একটি গ্রিক যুদ্ধ জাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করার খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধ জাহাজটি ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত অবস্থান নেওয়ার কথা রয়েছে। জার্মানি বলেছে, তাদের দুটি সশস্ত্র যুদ্ধ ড্রোন ইসরাইলি বাহিনী এরইমধ্যে ব্যবহার করেছে। ইসরাইল মূলত গাজায় অভিযান চালানোর আগে কূটনৈতিক সমর্থন যোগানোর চেষ্টা করছে। আর ন্যাটো জোটভুক্ত মিত্রদের কাছ থেকে তারা সেটা পেয়েছেও।

সহায়তা আহ্বান জাতিসংঘের
জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যান অ্যাফেয়ার্স বিভাগ ফিলিস্তিনি মানুষদের জন্য অতি জরুরী প্রয়োজন উল্লেখ করে ২৯৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তার জরুরী আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এই অর্থ ১২ লাখ মানুষের সহায়তায় ব্যবহার করা হবে। গত বৃহস্পতিবার গাজায় ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। সংস্থাটি বলছে, এই সংখ্যা মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় চার লাখ ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।

রাশিয়া ও চীনের প্রতিক্রিয়া
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করেন, গাজায় স্থল হামলা শুরু হলে অসংখ্য বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হবে, যা মেনে নেওয়া যায় না। পুতিন বলেন, জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোতে অনেক জটিলতা রয়েছে এবং এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এতে যত বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন একটা বড় ইস্যু। আবার প্রমাণিত হলো যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় যতো দ্রুত সম্ভব শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল