• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

পশ্চিমা দেশে দেশে ফিলিস্তিনপন্থি সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৩  

পশ্চিমা দেশগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হলেও নিজ নিজ ভূখণ্ডেই অনেক ক্ষেত্রে তা মানে না। এর সর্বশেষ প্রমাণ দেখা গেছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ-সমাবেশে বাধাদানের ঘটনায়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াও এই পথে হেঁটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলাই বাহুল্য।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বুধবার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ তাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই বৃহস্পতিবার কয়েকশ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ শহরের কেন্দ্রস্থলে স্টেফানস্প্ল্যাটজে বিক্ষোভে হস্তক্ষেপ করেনি, কিন্তু তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে বাধা দেয়।
ফ্রান্স সরকার ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রতি সমর্থনের যে কোনো প্রকাশ্য অভিব্যক্তিকে অপরাধ বলে ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সের বিচারমন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে যে কোনো ধরনের জনসমর্থন ফৌজদারি অপরাধ। ফরাসি পুলিশ বৃহস্পতিবার প্যারিসে আয়োজিত ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ এবং বুধবার সন্ধ্যায় আরেকটি শহর লিয়নে সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এই পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য পুলিশ দাবি করেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে বিক্ষোভ করা আইনশৃঙ্খলার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

দেশটির বিচারমন্ত্রী এরিক দুপোঁ-মোরেতির দাবি, হামাসের অভিযানের ঘটনা ‘সম্ভবত ইহুদিবিরোধী অপরাধ বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করবে।’ হামাসের হামলাকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বৈধ রূপ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারে– এমন কোনো প্রকাশ্য বার্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনারও আহ্বান জানান মন্ত্রী।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল খাদ্য এবং পানি বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিমান হামলায় প্রতিদিন শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। ইসরায়েল সেখানে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ তাতে বাধা দিচ্ছে। জার্মানির পুলিশ বার্লিন এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আয়োজিত প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করেছে। বার্লিন পুলিশ দাবি করেছে, এসব বিক্ষোভের ফলে অ্যান্টি-সেমিটিক বা ইহুদিবিদ্বেষের বিস্ফোরণ এবং সহিংসতা ঘটতে পারে। জার্মানিতে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে স্কুলে আসা এক ছাত্রকে একজন শিক্ষক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পুলিশ দাবি করেছে, ছাত্রের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভের অনুমতি দিলে তাতে উস্কানি এবং ইহুদিবিদ্বেষী বিবৃতি দেওয়া হতে পারে।

বুধবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, যুক্তরাজ্যে কেউ হামাসকে সমর্থন করলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। লন্ডনে একটি বিক্ষোভে ভারী সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান পুলিশকে ‘হামাসের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের’ বিরুদ্ধে আইনের পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের লেবার সরকার সপ্তাহান্তে সিডনিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতা করে একটি মিছিল নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ডের ছাত্র ইউনিয়ন ইসরায়েলি অপরাধের নিন্দা করে বিবৃতি দেওয়ায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মার্কিন গণমাধ্যমের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছেন। ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা করায় তাঁর চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পশ্চিমা সরকারগুলো মিথ্যাভাবে দাবি করে, ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদকারীরা ‘সন্ত্রাসবাদকে’ সমর্থন করে। তবে এসব দেশ ইসরায়েল সরকারের ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বড় পৃষ্ঠপোষক বলে সমালোচকরা বলে থাকেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজা সম্পূর্ণ অবরোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার কিংবা জ্বালানি থাকবে না। আমরা মানব পশুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’

ইসরায়েল ইতোমধ্যেই তার ঘোষণা কার্যকর করেছে। কিন্তু কোনো পশ্চিমা সরকারই এর প্রতিবাদ করছে না। উল্টো ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করার আড়ালে দেশটিকে শক্তি জুগিয়ে চলছে। পশ্চিমা সরকারগুলো গত কয়েকদিন ধরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার নৃশংস হামলার মধ্যে ইহুদিবাদী দেশটিকে ‘অটল সমর্থন’ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সূত্র: রয়টার্স ও প্রেসটিভি

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল