• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

যে মসজিদে রক্ষিত আছে সম্রাট সুলাইমান কাররানির নাম

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৩  

চট্টগ্রামের অতি প্রাচীন বখশী হামিদ মসজিদ। বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে এটির অবস্থান। মুসলিম শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভিত রচনায় এবং ইসলামী সভ্যতা বিকাশে মসজিদটির ভূমিকা অপরিসীম।
বলা হয়, সাড়ে ৪শ’ বছরের ঐতিহ্য বহনকারী বখশী হামিদ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে সেই বাদশাহর যুগে, যাকে উপাধি দেয়া হয় দ্বীন এবং মিল্লাতের সুলতানুল মুয়াজ্জম তথা মহান সম্রাট। আর তিনি হলেন সুলাইমান কাররানি। মসজিদের সামনে রক্ষিত ফলকে আরবিতে এ কথাটিই লেখা রয়েছে।

ইতিহাস বলছে, সুলাইমান কাররানি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করার কথা থাকলেও সবার কাছে এটি বখশী হামিদের নির্মিত মসজিদ বলে পরিচিত। বখশী হামিদের পুরো নাম ছিল মুহাম্মদ আবদুল হামিদ। বখশী তার উপাধি। বখশী ফার্সি শব্দ। যার অর্থ কালেক্টর বা করগ্রহীতা। তৎকালীন সময়ে বখশী আবদুল হামিদ ছিলেন এ অঞ্চলের কালেক্টর তথা প্রশাসক। এলাকার শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নতি সাধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি।

সে সময়ে বাঁশখালীর এ অঞ্চলটি ছিল প্যারাবন। ছিল না কোনো জনবসতি। তখন ইউসুফ ও কুতুব নামে গৌড়ের দুই আমির শাহ আবদুল করিম নামক জনৈক সুফীর সঙ্গে গৌড় ছেড়ে উপযুক্ত বাসস্থানের সন্ধানে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে এলাকায় আসেন।

তারা উপকরণ নিয়ে ইলশার দরগাহ বাড়ির স্থানে পৌঁছালে শাহ সাহেব ‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দ উচ্চারণ করে তার ছড়ি পুঁতে রাখেন এবং সেখানে বসবাসের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। ঠিক তখন থেকে জায়গাটি ‘ইল্লাল্লাহ শাহের স্থান’ ও পরে ‘ইলশা’ হিসেবে পরিচিত পায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, বহু দ্বীনদার পীর মাশায়েখের আবির্ভাব হয়েছিল গ্রামটিতে। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাহ চান মোল্লা। বখশী আবদুল হামিদ ছিলেন তার অধস্তন বংশধর। কারো কারো মতে- সুলাইমান ছিলেন গৌড় থেকে আগত সুফী দরবেশদের একজন। তিনি সাধক ও জ্ঞানে-গুনে ভরপুর ছিলেন বলে সে সময় তাকে সবাই সুলতান নামে আখ্যায়িত করেন। তিনিই বখশী হামিদ মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকারের প্রত্নতত্ব সংরক্ষণ বিভাগ। ১৯৭৫ সালে এটি প্রটেকটেড মনুমেন্ট অ্যান্ড মৌন্ডস ইন বাংলাদেশ-এর তালিকায় স্থান পাওয়ায় কিছু অংশ সংস্কার করা হয়।

ইট, পাথর ও সুরকি দ্বারা মোঘল স্থাপত্য কৌশলে নির্মিত বখশী হামিদ মসজিদের সঙ্গে ঢাকার শায়েস্তা খান মসজিদ ও নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম মসজিদের নির্মাণ কৌশলের মিল রয়েছে বলে দাবি স্থপতিদের। এছাড়াও বলা হয়- এ মসজিদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও ছাদ নির্মাণ কৌশল বাগ-ই-হামজাহ মসজিদ ও মাহমুদ খান মসজিদের সঙ্গে পুরোপুরি সাদৃশ্যপূর্ণ। দুটি মসজিদই চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত।

বখশী হামিদ মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। এর মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড় ও বাকি দুটি ধনুকের মতো করে ছাদের সঙ্গে সংযুক্ত। মসজিদটিতে রয়েছে খিলান দ্বারা নির্মিত পাঁচটি প্রবেশপথ। যার তিনটি পূর্বদিকে এবং বাকি দুটি উত্তর ও দক্ষিণ দিকে। পূর্বের প্রবেশপথগুলো নির্মাণ করা হয়েছে অর্ধগম্বুজ ভল্টের নিচে, যার বাইরের দিকে রয়েছে খাঁজকাটা নকশা।

মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মিহরাব কুলুঙ্গি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অষ্টকোণাকার। বাকিগুলো আয়তাকার। এছাড়া ভেতর থেকে প্রধান গম্বুজের উভয়পাশে রয়েছে একটি করে অর্ধ-গম্বুজাকৃতির ভল্ট। কিন্তু বাইরে থেকে ছাদটি অষ্টকোণাকার পিপার ওপর নির্মিত। যা তিনটি অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজ দ্বারা গঠিত। মসজিদের ভেতর ও বাহির উভয় দিক পলেস্তারা দিয়ে আবৃত।

ঐতিহ্যবাহী বখশী হামিদ মসজিদকে কেন্দ্র করে পাশেই গড়ে উঠেছে মাদরাসা ও এতিমখানাসহ বিশাল ইসলামী কমপ্লেক্স। যেটির নাম রাখা হয়েছে দারুল কোরআন মুহাম্মাদিয়া শাহ বখশী হামিদ কমপ্লেক্স। 

মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে প্রাচীন কালের একটি বিশাল দীঘি। দীঘির পশ্চিম পাড়ে কবরস্থানে রয়েছে বিশাল আকৃতির বটগাছ। যা অতীত ইতিহাসের সাক্ষী।

চট্টগ্রাম শহরের নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত সেতু) এলাকা থেকে যেকোনো বাহনে যাওয়া যায় বাঁশখালীর গুনাগরি বাজার। সেই বাজার থেকে রয়েছে অটোরিকশা ও রিকশার মতো ছোট বাহন। সেখান থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার পশ্চিমে বখশী হামিদ মসজিদের অবস্থান। শুক্রবারসহ বিশেষ দিনগুলোতে নামাজ আদায়ে দূর দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ মসজিদে সমবেত হন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল