• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

যেখানে লেক শুকিয়ে ভেসে ওঠে সাদামাটির পাহাড়

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

লাল, গোলাপি কিংবা হালকা বেগুনি রঙের মাটি- এ যেন রঙিন মায়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায় এর রূপ-বৈচিত্র্য। বর্ষায় ফুটে ওঠে রঙের মায়া, তেমনি শীতে নীল পানির ছোট ছোট লেকগুলো শুকিয়ে ভেসে ওঠে সাদামাটির পাহাড়।
দেশের সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি বিজয়পুরের সাদামাটি। উঁচু পাহাড়, আর মাঝে সবুজের ছোঁয়া এই মাটিকে করেছে আরো আকর্ষণীয়। নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের সাদামাটি দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন সম্ভাবনা জোগাচ্ছে প্রতিনিয়ত। 

প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো পর্যটক ভিড় করেন বিজয়পুরসহ আশপাশের বিভিন্ন স্পটে। সারাবছর পর্যটকরা আসলেও অক্টোবর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা থেকে সবচেয়ে বেশি।

তবে বিজয়পুরে সাদামাটিকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই পণ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় সবার কাছেই যেন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে স্থানটি। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এর গুরুত্ব রয়েছে বহুগুণ। মূলত শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরের (ডিপিডিটি) ভৌগোলিক পণ্য ইউনিট আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস্ অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনে এই স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। 

২০১৭ সালে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক অত্যন্ত মূল্যবান ও দুর্লভ খনিজসম্পদ হিসেবে পরিচিত বিজয়পুরের সাদামাটিকে ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরে (ডিপিডিটি) আবেদন করেন। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০২১ সালে পণ্যটির স্বীকৃতি মেলে।

বিজয়পুরের সাদামাটি অত্যন্ত মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য একটি খনিজসম্পদ। সাধারণত সিরামিকের তৈজসপত্র, টাইলস, স্যানিটারি ওয়্যার ও গ্লাস তৈরির ক্ষেত্রে এ মাটি ব্যবহৃত হয়। উৎকৃষ্ট মানের এ মাটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এটি প্রাকৃতিকভাবেই কেওলিন বা অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ। অনেকে এটিকে চিনামাটিও (চায়না ক্লে) বলে থাকেন।

দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিজয়পুর এলাকায় এ মাটির খনি অবস্থিত। খনিজ এলাকাটি মূলত গারো পাহাড়ের অন্তর্গত একটি টিলা বেষ্টিত এলাকা। এর খুব কাছেই ভারতের সীমানায় রয়েছে সুউচ্চ গারো পাহাড়। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ১৯৫৭ সালে দুর্গাপুরের ভেদিকুড়া নামক স্থানে প্রথম এ সাদামাটির সন্ধান পায়। ঐ সময়ে পরিচালিত এক জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রশস্ত এ খনিজ অঞ্চলে প্রায় ২৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন সাদামাটি রয়েছে।

বর্তমানে উন্মুক্ত এই মাটির পাহাড় পর্যটকদের কাছে যেন প্রকৃতির এক অনন্য স্বর্গরাজ্য। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে অবকাশের জন্য অনেকেই ছুটে আসেন রঙিন পাহাড়ের খোঁজে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে পর্যটকদের কাছে যেন এই স্থান আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। 

এদিকে স্থানটি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে জেলা প্রশাসন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে সাদামাটির পাহাড়। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সাদামাটির পাহাড়ের উপর স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ বক্স। পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগ পর্যটন সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে বিজয়পুরে। যেখানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। 

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, সাদামাটির পাহাড়কে ঘিরে একটি মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। স্থানটিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে এর চারপাশে বসার জায়গাসহ সব ঢেলে সাজানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে একটি পর্যটন সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য একটি পুলিশ বক্সসহ সাদামাটির পাহাড়ে প্রবেশের রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এর ফলে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা এসে সহজেই এখানকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল