• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি: শেখ হাসিনা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি। যাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন এবং গ্রামাঞ্চলে ৪৫ লাখেরও বেশি উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ন্যাশনাল অ্যাডাপশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২৩ সালে মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান (এমসিপিপি) প্রণয়ন করেছি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে বিপদাপন্নতা থেকে সহিষ্ণুতা এবং সহিষ্ণুতা থেকে সমৃদ্ধি পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এমসিপিপিতে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণ, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান ও সমাজের সকলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ১৯৯২ সালে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক আগেই ১৯৭২ সালে এ বিষয়ে কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য ১৯৭২ সালে তিনি উপকূলীয় বনায়নের সূচনা করেন। একই বছর ‘ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’ প্রণয়ন করেন, যা ১৯৭৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। জীবন ও সম্পদ রক্ষায় তিনি উপকূলীয় অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্র স্থানীয়দের কাছে ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিত।

‌বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৫-এ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেছিলেন, দুর্যোগের কবলে পড়ে যেসব দেশ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ব সমাজকে এগিয়ে আসার উপযোগী একটি নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গঠনে বাংলাদেশের বিশেষ স্বার্থ নিহিত রয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, দেশের উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য তিনি ১৯৭৫ সালের ১ জুলাই ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সার্মথ্য অর্জনে তিনি বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিজস্ব সম্পদ দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সালে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছি। এর আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৯ শত ৬৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, সামুদ্রিক বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, উপকূলীয় বনায়ন ইত্যাদি কর্মসূচিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২৫টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭০ সালে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মোখায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। 

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে আমরা পার্বত্য ও শাল বনাঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শ ৪৮ হেক্টর এলাকায় বৃক্ষরোপণসহ ৮৯ হাজার ৮শ ৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বন সৃজন করেছি। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০১০ (সংশোধিত) প্রণয়ন করেছি। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজার জেলায় আমরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নির্মাণ করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আমরা জলবায়ু উদ্বাস্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমিহীন, গৃহহীন, সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে জমিসহ ঘর প্রদান করেছি এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪২ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন করেছি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল