• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ডিসেম্বরে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৩  

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে আইএমএফের দেওয়া শর্ত পূরণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। অন্যদিকে ঋণ প্রদানের শর্ত পূরণে গত চার মাসে বাংলাদেশ কতটা সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে সেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। বুধবার থেকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। প্রথম দিনেই আইএমএফের সফররত প্রতিনিধি দলটি অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতে সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাবে বাংলাদেশ। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইএমএফ মিশনটির বৈঠকে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার সভাপতিত্ব করেন। এর পরই এদিন দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংস্থাটির বৈঠকে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুটি বৈঠকেই আইএমএফের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। বৈঠক শেষে আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও এ প্রসঙ্গে অর্থ সচিব জানান, আমরা ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে আলোচনা শুরু করেছি। 
তাদের সঙ্গে আমাদের আরও অনেক বৈঠক রয়েছে। তিনি জানান, আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তা পূরণে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পদক্ষেপে খুশি সংস্থাটি।

আশা করছি, আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। নির্ধারিত সময়েই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে। একইভাবে বাংলাদেশের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবা উল হক সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে ঋণের শর্ত অনুযায়ী যেসব সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে সে বিষয়ে অবহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যে সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের সঙ্গে প্রতিশ্রুত শর্তগুলো পুরনো, বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি আগে থেকেই তা পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতিনিধি দল আগামী দুই সপ্তাহ ঢাকাতে থাকবেন, আরও পর্যালোচনার পর তাদের মতামত জানাবে।  
জানা গেছে, আইএমএফের ঋণের যেসব শর্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পূরণ করার কথা, তার মধ্যে বেশিরভাগ শর্তই পূরণ হয়েছে। তবে যে পরিমাণ নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এ জন্য বাড়তি সময় চাইবে। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষেও সে জন্য সময় চাওয়া হয়েছে। এসব বিবেচনা করে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যান্য শর্তের মধ্যে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ বিষয়েও এনবিআরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন ও সুনির্দিষ্ট মতামত উপস্থাপন করা হবে। তবে অর্থ বিভাগ আশা করছে আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বিশেষ করে বছরের শুরুতেই দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই নির্বাচন সামনে রেখে রেমিটেন্স আহরণ কমে যাওয়া, বিনিয়োগ হ্রাসসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। তবে নির্বাচন শেষে আবার উদ্যোক্তারা বিনিয়োগমুখী হবেন। এ কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ জুন মাস নাগাদ রিজার্ভ বেড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করছে অর্থ বিভাগ। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উন্নতির জন্য সরকার সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ তদারকিসহ অন্যান্য তদারকিমূলক পদক্ষেপ রয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজ মঞ্জুর করে আইএমএফ, যার প্রথম কিস্তির অর্থছাড় হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে।

শর্ত পূরণসাপেক্ষে আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় কিস্তি পেতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তার মধ্যে একটি হলো ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিজার্ভের পরিমাণ হতে হবে কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এ ছাড়া আইএমএফের আরেকটি শর্ত হলো ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট কার্যকর করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) কাছে এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়েছে। এ ছাড়া কর-জিডিপি অনুপাত ০.৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে আইএমএফ। কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে চলতি বাজেটে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 
আইএমএফ নির্ধারিতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কম আদায় করেছে এনবিআর। এ জন্য চলতি অর্থবছর জিডিপির অনুপাতে ০.৫ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে। আইএমএফের শর্ত অনুসারে, নতুন অর্থবছরে এনবিআরের যে স্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তার চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে। অন্যদিকে নিট রিজার্ভের বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চাপে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট এবং চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নিট রিজার্ভ নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। পুরো বিষয়টি আইএমএফকে বেশ ভালোভাবে  বোঝাতে কাজ করছে অর্থ বিভাগ। এদিকে, রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি জানিয়ে এবং চলতি অর্থবছরে সম্ভাব্য আদায়ের বিষয়ে গত সপ্তাহে আইএমএফকে একটি চিঠি দিয়েছে এনবিআর। ওই চিঠিতে বলা হয়, এনবিআর আইএমএফ নির্দেশিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা করছে।

কিন্তু নিম্ন আমদানি ও সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ধীরগতির হয়ে পড়ার কারণে এসব খাত থেকে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ আদায় প্রভাবিত হতে পারে। এনবিআরের ভ্যাট উইং জানায়, চলতি বছরে আমদানিতে নেতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে, এটি অব্যাহত থাকলে তা রাজস্ব আদায় ব্যাহত করবে। এনবিআরের পক্ষ থেকে আইএমএফ মিশনের কর্মকর্তাদের বলা হবে, সিগারেটের ওপর কর পুনর্গঠন থেকে চলতি বছর বাড়তি ভ্যাট হিসেবে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় হতে পারে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন, সফটওয়্যার, এলপিজি সিলিন্ডার এবং ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) ওপর শুল্ক ও কর সমন্বয়ের মাধ্যমে আরও ৪ হাজার  কোটি টাকা আদায় করা যাবে। যা চলতি বছরের মোট রাজস্ব আয় বাড়াবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল