• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন ব্রাজিল থেকে চিনি আমদানির উদ্যোগ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

আসন্ন রমজান সামনে রেখে আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল ও ব্রাজিল থেকে সরাসরি চিনি আমদানি করা হবে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য বিপুল পরিমাণ চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতদিন অভ্যন্তরীণ উৎস বিশেষ করে দেশের ভোগ্যপণ্য কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করা হতো।


কিন্তু অর্থ সাশ্রয়, মজুত বাড়ানো এবং বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবার সরাসরি সয়াবিন ও চিনি আমদানি করা হবে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল এই দুই দেশ সফর করেছেন। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে  ছিলেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও। ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে ভুট্টা, গম, সয়াকেক ও কাঁচা তুলা আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া এ দুটো দেশেই বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। এ মাসে আর্জেন্টিনার উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসবেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 
জানা গেছে, বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সঙ্গে দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ভালো। বিশেষ করে এবারের কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে এদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের বিপুল সংখ্যক সমর্থক ও ফুটবলপ্রেমী তাদের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে।

‘ফুটবল’ কূটনৈতির ওপর ভর করে এখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এই তিনদেশ। বাংলাদেশ যেমন চায় ঠিক তেমনি ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। রমজান সামনে রেখে আর্জেন্টিনা সয়াবিন তেল ও ব্রাজিল বাংলাদেশে চিনি রপ্তানি বাড়াবে।


বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের চিনি ও সয়াবিন তেল বেশি প্রয়োজন। যা আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের রয়েছে। তিনি বলেন, বহু আগে থেকেই এ দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য রয়েছে। এখন সেই বাণিজ্য আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, এটা ঠিক এর সঙ্গে ফুটবল কূটনীতি কিছুটা রয়েছে, তবে মূল বিষয় ব্যবসা-বাণিজ্য। আমরা যেমন পোশাক রপ্তানি বাড়াচ্ছি তারাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে কাজ করছে। এখানে সব দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। 
জানা গেছে, বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সফর করেছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, টিসিবি চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও কয়েকটি সেমিনার ও সভায় অংশগ্রহণ করে প্রতিনিধি দলটি। সম্প্রতি এফবিসিসিআই কার্যালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হোন নয়াদিল্লিতে অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন (ডিসিএম) ফ্রাঙ্কো অগাস্টিন সেনিলিয়ানি মেলচিওর।


ওই সময় তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আর্জেন্টিনার একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসবে। সেই সফরে সরকারি প্রতিনিধিদের পাশাপাশি আর্জেন্টিনার বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। আর্জেন্টিনা দূতাবাসের  এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে অনেক সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে। খাতগুলো নিয়ে কাজ করে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে।


বাংলাদেশে অলিভ অয়েল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, স্বর্ণের কাঁচামালের চাহিদা রয়েছে। পণ্যগুলো আমদানির জন্য বাংলাদেশের কাছে একটি ভালো বিকল্প হতে পারে আর্জেন্টিনা। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনাতেও পোশাকের প্রচুর চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা সেই চাহিদাকে কাজে লাগাতে পারেন। 
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী জানান, খনিজ ও ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। একইসঙ্গে বাংলাদেশী রপ্তানিকারকদের জন্য আর্জেন্টিনার  টেক্সটাইল মার্কেট একটি ভালো সুযোগ তৈরি করবে।
জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশে ৫৫ কোটি ডলারের ৩ লাখ ৯০ হাজার টন সয়াবিন তেল রপ্তানি করেছে।

এ ছাড়া ব্রাজিল রপ্তানি করেছে ৩৮ কোটি ডলারের দুই লাখ ৫৭ হাজার টন সয়াবিন তেল। সয়াবিন তেল ছাড়া ভুট্টা, চিনি ও গম রপ্তানি করছে আর্জেন্টিনা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের ৩ লাখ ৯০ হাজার টন ভুট্টা রপ্তানি করেছে দেশটি। এ ছাড়া গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ১৫ কোটি ডলারের ২ লাখ ৮১ হাজার টন সয়াকেক পাঠিয়েছে আর্জেন্টিনা। 
অন্যদিকে  বাংলাদেশে চিনি ও তুলা রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছে ব্রাজিল।  চিনির আমদানির সিংহভাগ আসে ব্রাজিল থেকে। গত অর্থবছরে ব্রাজিল প্রায় ৫২ কোটি ডলারের ২ লাখ ৪১ হাজার টন তুলা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে। এ ছাড়া আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মানুষ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, জার্সি গায়ে চাপতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ব্রাজিলে, যার সিংহভাগই তৈরি পোশাক। এ ছাড়া আর্জেন্টিনায় এক কোটি ডলারের  পোশাক রপ্তানি  হয়েছে। তবে দুটো দেশেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল