• মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩১ ১৪৩১

  • || ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

’২৬ সালের পরও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২২  

অস্ট্রেলিয়া প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের পরও শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে হাইকমিশনার এবং বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে একাধিক বৈঠক থেকে এই প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
 
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ সুফিয়ুর রহমান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। প্রথম বৈঠক হয়েছে আমার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ড্যান তেহানের। দ্বিতীয় বৈঠকটি হয়েছে বাণিজ্য সচিবদের মধ্যে। বৈঠকে আমরা অস্ট্রেলিয়ানদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, এর মাধ্যমে উভয় দেশের চলমান বাণিজ্য সামনের দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে, যা হবে একটি উইন-উইন অবস্থা।’

কোটামুক্ত ও শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের তাৎপর্য প্রসঙ্গে সুফিয়ুর রহমান বলেন,‘আমাদের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সেখানে আমরা এই সুবিধা পেয়ে থাকি। এখন আমরা ইইউ এবং অন্য যেসব দেশ এই সুবিধা দিয়ে থাকে, তাদের বলতে পারব, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিচ্ছে, আপনারাও দেন।’ উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পায় বাংলাদেশ, যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ এবং ওই সময়ের পর কোন ব্যবস্থা না থাকলে বাংলাদেশের আর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা নয়। সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশের কূটনীতিক এবং কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করছেন। ওই আলোচনার ফল পাওয়া গেছে।


ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এই দেশটি এবার বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি নজর দিচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায় অস্ট্রেলিয়া। শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে আরও বেশি পরিমাণে তৈরি পোশাক নিতে চায় দেশটি। এছাড়া দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধাসংবলিত প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। অস্ট্রেলিয়া এসব সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাঠামোগত সমঝোতা-‘টিফা’ চুক্তির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার আমন্ত্রণে টিফা বৈঠকে যোগ দেন বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।

জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এতদিন স্বল্প পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য হলেও সুনির্দিষ্ট কোন বাণিজ্য চুক্তি ছিল না। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদারে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই দেশের আগ্রহে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এ্যারেঞ্জমেন্ট (টিফা) চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আর এবারের টিফার প্রথম বৈঠকটি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। গত ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

এ প্রসঙ্গে হাইকমিশনার সুফিয়ুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের মধ্যে ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এ্যারেঞ্জমেন্ট (টিফা) সই হয় এবং এর আওতায় একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। ওই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক হয়েছে গত সপ্তাহে এবং সেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ানদের নিয়ম হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাণিজ্য, কিন্তু জ্বালানি খাতসহ অন্য কয়েকটি খাতে বাংলাদেশ সরকারীভাবে ব্যবসা করতে চায়। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর তারা রাজি হয়েছে একটি নতুন মেকানিজম খুঁজে বের করার। যার মাধ্যমে জি-টু-জি ব্যবসা করা সম্ভব হয়।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে এলএনজি ও জ্বালানি তেল সংগ্রহ করছে। এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। অস্ট্রেলিয়া থেকে এলএনজি রফতানির জন্য সব পন্থার ওপর আলোচনা করার বিষয়ে আমরা রাজি হয়েছি।’

জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী প্রবাসী কাজ করছেন। এর পাশাপাশি প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা অর্জনে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়। এ কারণে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি ও রেমিটেন্স খাতে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্ব অনেক। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যে কোন ক্রিকেট ম্যাচ মানে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ পাওয়া। দর্শকরা মুখিয়ে থাকেন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার যে কোন ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করতে। সব মিলিয়ে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বড় সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে দুই সরকার। আর এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টিফা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। শুল্ক কোটামুক্ত সুবিধা দিয়েই এদেশ থেকে বেশি পরিমাণে পোশাক নেবে অস্ট্রেলিয়া। এর পাশাপাশি বিনিয়োগের প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করে দেশের বিদ্যুত- জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি ও সেবা খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ার পাশাপাশি ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করা হবে।

জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বাজার। ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে দেশটি। আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পরও অস্ট্রেলিয়া একই সুবিধা অব্যাহত রাখবে বলে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়ায় ৮০ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে।

অস্ট্রেলিয়া হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং বিশ্বে চতুর্থ দেশ। টিফা চুক্তির কারণে অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সব খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রাধিকার পাবে। একই ধরনের সুবিধা পাবে বাংলাদেশও। চুক্তির খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়া টিফার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব খাতে বিনিয়োগ সহায়তার কথা উল্লেখ করেছে। টিফা কাঠামোর মাধ্যমে তৈরি পোশাক, কৃষি, কৃষি-বাণিজ্য, মৎস্য, ফুড এ্যান্ড বেভারেজ, বিদ্যুত ও জ্বালানি, ম্যানুফ্যাকচারিং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিক্ষা সেবা ছাড়াও উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সব ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার সুযোগ রাখা হয়েছে। চুক্তি মানার বাধ্যবাধকতা আছে। অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে দেশের তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য কয়লা আমদানি করা হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল